জর্জ ফ্লয়েড এবং ব্রেওনা টেলর হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় নিউইয়র্ক পুলিশের বিরুদ্ধে যে নিষ্ঠুরতার যে অভিযোগ উঠেছিল, তার সত্যতা উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে৷
বিজ্ঞাপন
জর্জ ফ্লয়েডের প্রকাশ্যে পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর পর প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল নিউইয়র্ক৷ ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল নিউইয়র্ক থেকে সারা যুক্তরাষ্ট্র হয়ে বিভিন্ন দেশে৷ ফ্লয়েড মারা যান গত ২৫ মে, মিনিয়াপোলিসে৷ বিক্ষোভ আন্দোলন চলার সময় বেরিয়ে আসে পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ নারী ব্রেওনা টেলরের নিহত হওয়ার খবর৷ ২৬ বছর বয়সি ব্রেওনাকে গত ১৩ মার্চ লুইসভিলের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে সাদা পোশাকের পুলিশ৷ ১৫ মে তার বাবা মামলা করেন৷‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলন আরো তুঙ্গে ওঠে৷
বিক্ষোভ আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে নিউইয়র্ক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা বিভিন্ন ভিডিওতে পুলিশের নিষ্ঠুরতার অনেক প্রমাণও উঠে আসে৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ তখন পুলিশের পাশেই থেকেছে৷
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে৷ ছবিঘরে গত ছয় বছরে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের আটটি ঘটনার উল্লেখ থাকছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Haj Kadour
২৫ মে, ২০২০, মিনেপোলিস
জাল টাকা ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা ৪৬ বছর বয়সি জর্জ ফ্লয়েডকে রাস্তায় ফেলে তাঁর গলায হাঁটু দিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন মিনেপোলিসের পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন৷ এতে ফ্লয়েডের মৃত্যু হলে শভিনসহ চার পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়৷ এছাড়া শভেনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Maturen
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, আর্লিংটন
গাড়িতে নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ট্যাগ থাকার কারণে ও’শে টেরিকে আটক করেছিলেন টেক্সাসের পুলিশ কর্মকর্তারা৷ এরপর একজন অফিসার গাড়িতে মারিজুয়ানার গন্ধ পেয়ে তদন্ত করতে চাইলে গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন টেরি৷ এই সময় পুলিশ কর্মকর্তা বাও ট্রান গাড়িতে গুলি করলে টেরি গুলিবিদ্ধ হন৷ পরে হাসপাতালে মারা যান৷ এই ঘটনায় বাও ট্রানকে বরখাস্ত করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯ জুন, ২০১৮, পিটসবার্গ
১৭ বছর বয়সি অ্যান্টোন রোজসহ তিনজন একটি গাড়িতে ছিলেন৷ গাড়িটি একটি গোলাগুলির ঘটনা সঙ্গে জড়িত ছিল বলে সন্দেহ করেছিল পুলিশ৷ এই অবস্থায় গাড়ির চালককে হাতকড়া পরানো হয়৷ আর গ্রেপ্তার আটকাতে অ্যান্টোন রোজ পালিয়ে যেতে চাইলে গুলি চালান পুলিশ কর্মকর্তা মাইকেল রসফেল্ড৷ এই ঘটনায় মামলা হলেও রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হন রসফেল্ড৷
ছবি: Reuters/J. Altdorfer
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ওকলাহোমা
রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা গাড়ির চালক টেরেন্স ক্রুচারকে গুলি করেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা বেটি শেলবি৷ মামলার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে শেলবি দাবি করেন, ক্রুচার তার গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলে ভয় পান তিনি৷ কারণ তার মনে হয়েছিল, বন্দুক নিতে ক্রুচার গাড়ির দিকে এগোচ্ছেন৷ তাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে গুলি চালান বলে দাবি করেন শেলবি৷ আদালত তাকে হত্যা মামলা থেকে রেহাই দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
৬ জুলাই, ২০১৬ মিনেসোটা
লাইসেন্স ও নিবন্ধন পরীক্ষা করে দেখতে ফিল্যান্ডো ক্যাস্টিলের গাড়ি থামিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা জেরনিমো ইয়ানেস৷ এই সময় ইয়ানেস তার কাছে অস্ত্র থাকার কথা জানিয়ে হাত বাড়ালে গুলি চালান ইয়ানেস৷ এতে ক্যাস্টিল মারা যান৷ তবে তার সঙ্গে থাকা পার্টনার ডায়মন্ড রেনল্ডসের দাবি, ক্যাস্টিল নথি বের করার জন্য হাত বাড়িয়েছিলেন৷ মামলাটি তিন মিলিয়ন ডলারে মীমাংসা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Images/S.Takushi
২০ অক্টোবর, ২০১৫, শিকাগো
পুলিশ কর্মকর্তা জেসন ফান ডাইকের গুলিতে প্রাণ হারান লেকান ম্যাকডোনাল্ড৷ তার কাছে একটি তিন ইঞ্চি ছুরি ছিল৷ পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, ডাইক ম্যাকডোনাল্ডকে ছুরি ফেলে দিতে বললে তিনি তা করেননি৷ পরে জানা যায়, ম্যাকডোনাল্ডকে ১৬ বার গুলি করা হয়৷ এই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা ডাইককে ছয় বছর নয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ এছাড়া ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সঙ্গে পুলিশ সদস্য়সহ ১৬ জন জড়িত ছিল বলে জানান প্রধান পুলিশ পরিদর্শক৷
ছবি: Reuters/Chicago Tribune/A. Perez
১২ এপ্রিল, ২০১৫, বাল্টিমোর
পকেটে ছুরি থাকায় ২৫ বছরের ফ্রেডি গ্রেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ এইসময় পুলিশ ভ্যানে কোমায় চলে গেলে তাকে একটি ট্রমা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়৷ সেখানেই তার মৃত্যু হয়৷ মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত কারণে তিনি মারা যান৷ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিচার শুরু হলেও কারও শাস্তি হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.L. Magana
৯ আগস্ট, ২০১৪, মিসৌরি
নিজেদের মধ্যে সংঘাতের এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের গুলিতে প্রাণ হারান ১৮ বছরের মাইকেল ব্রাউন৷ এই ঘটনায় গ্র্যান্ড জুরি উইলসনকে অভিযুক্ত না করলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ পরে উইলসন পদত্যাগ করেন৷ এছাড়া ব্রাউনের পরিবারও মীমাংসায় বসেছিল৷
ছবি: DW/C. Bleiker
8 ছবি1 | 8
নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিওরও পুলিশের ওপর অগাধ আস্থা ছিল তখন৷ তবে শুক্রবার প্রকাশিত ১১১ পৃষ্ঠার এক তদন্ত প্রতিবেদন তিনি পুরোপুরি মেনে নিয়েছেন৷
নিউইয়র্ক সিটির তদন্ত বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি) ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদের সময় জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে জোর খাটানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে এবং অতিরিক্ত জোর খাটানোর কারণে উত্তেজনা আরো বেড়েছে৷'' তদন্তকারীরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবের কারণেই মূলত এমন আচরণ করেছে পুলিশ৷
বিক্ষোভ আন্দোলন চলার সময় পুলিশের পাশে থাকলেও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিষ্ঠুরতার অভিযোগ মেনে নিয়েছেন ডি ব্লাসিও৷ প্রতিবেদন মেনে নিয়ে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যে ভিন্নভাবে এবং আগের চেয়ে ভালোভাবে কাজ করতে হবে এটা খুব পরিষ্কার৷''
১১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে পুলিশের সংযত আচরণ নিশ্চিত করার জন্য ২০টি পরামর্শ দিয়েছেন তদন্ত প্রতিবেদকরা৷ প্রস্তাবগুলো মেনে নিয়ে এক বিবৃতিতে পুলিশ কমিশনার ডার্মট শেয়া-ও বলেছেন, ‘‘পুলিশের জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সময় যৌক্তিক এবং সুচিন্তাপ্রসূত ২০টি প্রস্তাব কাজে আসবে৷''