খনিজ তেল সমৃদ্ধ দেশটি এক মাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে উত্তাল৷ দৃশ্যত ক্রমেই আরো বেশি বিক্ষোভকারীকে সামরিক আদালতে পেশ করা হচ্ছে, বিরোধীদের কাছে যা প্রেসিডেন্ট মাদুরোর ক্ষমতা হ্রাসের লক্ষণ৷
বিজ্ঞাপন
এ বছরের মার্চ মাসে ভেনেজুয়েলার সুপ্রিম কোর্ট সংসদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ পয়লা এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় নতুন নির্বাচনের দাবিতে৷ সে দাবি মেনে না নিয়ে সমাজতন্ত্রী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো একটি নতুন সংবিধান রচনার জন্য একটি সাংবিধানিক সম্মেলন আহ্বানের অভিপ্রায় ঘোষণা করেন৷
মাদুরোর পূর্বসূরি উগো চাভেজ ঠিক এভাবেই ১৯৯৯ সালে সংবিধান সংস্কারের ব্যবস্থা করেছিলেন৷ বর্তমান ‘‘পুঁজিবাদ বিরোধী'' সংবিধানটি তখনই গৃহীত হয়৷ চাভেজ প্রেসিডেন্টের কর্মকাল বাড়ান ও কংগ্রেসের দু'টি কক্ষকে একটি কক্ষে পরিণত করেন৷ ক্যানসার রোগে আক্রান্ত চাভেজ ২০১৩ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে মাদুরোকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করে যান৷
ভেনেজুয়েলায় সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে
একাধিক প্রতিবাদকারীর মৃত্যর পরও থেমে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই৷ বরং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে আরো কড়া আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধীরা৷ তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ নিয়ে দেখুন বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/C. G. Rawlins
বুধবার দুই প্রতিবাদকারীর মৃত্যু
ভেনেজুয়েলায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বুধবার গুলিতে নিহত হন এক ১৭ বছর বয়সি তরুণ এবং ২৩ বছর বয়সি নারী প্রতিবাদকারী৷ কারাকাসের বাইরে এক সৈনিকের মৃত্যু ঘটেছে বলেও জানিয়েছে গণমাধ্যম৷ সবমিলিয়ে সেদেশে সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা অন্তত আটজন৷
ছবি: Reuters/C. G. Rawlins
খাদ্য, নির্বাচনের দাবি
খাদ্য স্বল্পতা এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামা কয়েকহাজার মানুষকে শক্তহাতে প্রতিরোধ করতে গিয়ে পরিস্থিতি আরো বিশৃঙ্খল করে তুলছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমনে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে৷ প্রতিবাদকারীরাও অবশ্য পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়েছে৷ কারাকাস এবং অন্যান্য শহরেও সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/C. G. Rawlins
লুটপাট
এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালে রাতের বেলা কারাকাসের পশ্চিমে বেকারি, সুপারমার্কেট এবং খাদ্য জমা রাখার সেন্টারে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে৷ প্রতিবাদকারীরা দাবি করেছেন যে মাদুরো ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/F. Liano
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
বুধবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে প্রাণহানির পরও মোটেই দমে যাননি প্রতিবাদকারীরা৷ বরং বৃহস্পতিবার আরো বড় পরিসরে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তাঁরা৷ লক্ষ্য মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা৷ সেদেশের ঊধ্বর্তন বিরোধী নেতা হেনরিক কাপরিল্স বুধবার রাতে বলেন, ‘‘আজ আমাদের মতো কয়েক লাখ লোক রাজপথে ছিল৷ কাল আমাদের মতো আরো অনেকের বের হতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/M. Bello
মাদুরোর উপর চাপ
বলাবাহুল্য, ২০১৪ সাল ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মাদুরোর উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে ভেনেজুয়েলার তেলের দাম কমে যাওয়ায় সেদেশে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে৷ সম্প্রতি আবার নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ায় আরো সমালোচনার মুখে পড়েন মাদুরো৷
ছবি: REUTERS
জরিপে নেতিবাচক ফল
এদিকে, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি দশজন ভেনেজুয়েলানের মধ্যে সাতজনই মাদুরোর উপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন৷ অথচ প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর ক্ষমতায় থাকার কথা ২০১৯ সাল অবধি৷
ছবি: Reuters/C.Veron
সমর্থকরাও মাঠে
বিরোধীদের পাশাপাশি মাদুরোর সমর্থকরাও তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে৷ আর তাঁর সবচেয়ে বড় সমর্থক, সেদেশের সামরিক বাহিনীও মাদুরোর প্রতি সমর্থন বজায় রেখেছে৷ যদিও বিরোধী দল বর্তমান পরিস্থিতির অবসানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
মাদুরো যে সংবিধান পালটানোর পন্থা ধরেছেন, তার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন যে, তিনি ওয়াশিংটনের প্ররোচিত একটি ‘‘ফ্যাসিবাদী অভ্যুত্থান'' রোখার চেষ্টা করছেন৷ নতুন সংবিধান রচনায় রাজনৈতিক দলগুলি সংশ্লিষ্ট থাকবে না, এই সাংবিধানিক সম্মেলন সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত হবে, বলে মাদুরো ঘোষণা করেন৷
ভেনেজুয়েলায় প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবাদ চলেছে৷ বিক্ষোভে এ যাবৎ প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৮ জন মানুষ, আহত হয়েছেন শত শত, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১,৩০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী৷ একদিকে প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন পদক্ষেপ, অন্যদিকে খাদ্য, ওষুধপত্র ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর অনটন – এ বছর মুদ্রাস্ফীতি নাকি পৌঁছাবে ৭২০ শতাংশে৷ ভেনেজুয়েলার সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন৷
মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ২৫০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে সামরিক বিচার বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ এটা নাকি ঘটেছে মাত্র গত এক সপ্তাহে, বলছেন মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা৷ প্রেসিডেন্ট মাদুরোর প্রশাসন বলছে যে, মিলিটারি ট্রাইব্যুনালগুলি জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আবশ্যক, কেননা বিদেশি সাহায্যে ভেনেজুয়েলার সমাজতন্ত্রী সরকারভাবে সহিংসভাবে ক্ষমতা থেকে বিতাড়ন করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে৷
মিলিটারি আদালতে যাদের পেশ করা হচ্ছে, তাদের প্রায় সকলের বিরুদ্ধেই আইন অমান্য ও সামরিক কর্মকর্তাদের অবমাননা করার অভিযোগ আনা হচ্ছে৷ এ ধরনের অধিকাংশ ঘটনা দৃশ্যত ঘটেছে উত্তরের কারাবোবো প্রদেশে, যেখানে লুণ্ঠনকারীরা গত সপ্তাহে বিয়ারের ক্রেট ও নুডলসের বাক্স লুট করে৷ একজন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে৷
এসি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়াটার্স, ডিপিএ)
ভেনেজুয়েলার অবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করতে পারেন? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷