বৈরুতের বিস্ফোরণের পরে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ। তারই মধ্যে ইস্তফা দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
একদিকে আগুন জ্বলছে রাস্তায়। অন্য দিকে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে ইস্তফা দিচ্ছেন মন্ত্রীরা। সোমবার লেবাননের প্রেসিডেন্টের কাছে ইস্তফাপত্র দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবও।
বৈরুতে বিস্ফোরণের পর থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের দাবি, সরকারের গাফিলতিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। অর্থনীতি থেকে সামাজিক নিরাপত্তা-- সর্বক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে এই সরকার। গত মঙ্গলবার বৈরুত বন্দরের একটি গুদামে বিস্ফোরণ হয়েছিল। তার পর থেকেই রাজপথে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন সাধারণ মানুষ। রোববার এবং সোমবার তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পার্লামেন্টের সামনের রাস্তায়। সোমবারও একই ভাবে বিক্ষোভ চলতে থাকে।
পরিস্থিতি যে শাসকের অনুকূলে নয়, তা আগেই বুঝতে পারছিলেন মন্ত্রীরা। দুই একজন রাষ্ট্রদূত এবং মন্ত্রী আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। তবে সোমবার বড় জয় পেলেন বিক্ষোভকারীরা। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ইস্তফা দিলেন। ইস্তফা দেওয়ার আগে হাসান দিয়াব জানিয়েছেন, দেশের স্বার্থে এ কাজ করছেন তিনি। সরকারে সংস্কার যে প্রয়োজন সে কথা মেনে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ''দুর্নীতি রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে। সে জন্যই সাত বছর ধরে অ্যামোনিয়ান নাইট্রেট ও ভাবে গুদামে থেকে গিয়েছিল।'' নিজের অপারগতা স্বীকার করে ইস্তফা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিস্ফোরণের পর বিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে বৈরুত
বিস্ফোরণে অন্তত ১৫৮ জনের মৃত্যুর পরও আগুন নেভেনি বৈরুতে৷ বরং নতুন করে জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন৷ সরকারের পদত্যাদের দাবিতে সংঘর্ষ, অ্গ্নি সংযোগ চালিয়েই যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/H. McKay
চাপের মুখে সরকার
করোনা সংকটের সময় অর্থনৈতিক সংকটও প্রকট হয়ে উঠেছে লেবাননে৷ সে কারণে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে৷ উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের পদত্য্যাগের দাবি৷গত সোমবার সরকারের ব্যর্থতা মেনে এবং তাতে নিজের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিফ হিতিতি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Malla
বৈরুতে বিস্ফোরণ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিফ হিতিতির পদত্যাগের পরের দিনই বৈরুত বন্দরের কাছের এক গুদামে রাখা রাসায়নিক বিস্ফোরিত হয়৷ বিস্ফোরণে অন্তত ১৫৮ জন নিহত এবং ছয় হাজারেরও বেশি আহত হয়, গৃহহীন হয় প্রায় তিন লাখ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বিক্ষোভে বিস্ফোরণের আগুন
একটি গুদামে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল৷ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ওই রাসায়নিক বিস্ফোরণের কারণে নতুন করে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে লেবানন৷সপ্তাহান্তে বিক্ষোভের তীব্রতা বেড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
নতুন নির্বাচনের দাবি
লেবাননের জনগণের বড় একটা অংশ মনে করে বৈরুতের বিস্ফোরণের জন্য দুর্নীতি এবং সরকারের সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতাই দায়ী৷এ কারণে সরকারের পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচন দাবি করে তারা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
আরো দু্ই মন্ত্রীর পদত্যাগ
বৈরুত বিস্ফোরণে সরকারের দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে রোববার তথ্যমন্ত্রী মানাল আব্দেল সামাদ পদত্যাগ করেন৷ একইভাবে পরিবেশ মন্ত্রীও দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান৷
ছবি: Getty Images/AFP
তবু বিক্ষোভ
বৈরুতের বিস্ফোরণের পর দু’ দু’জন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেও তাতে বিক্ষোভে ভাটা পড়েনি৷ রোববার সংসদ ভবনের দিকে যেতে না দেয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যান বিক্ষোভকারীরা৷ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
সরকারি ভবনে আগুন
বিক্ষোভকারীরা বেশ কিছু সরকারি ভবনে প্রবেশ করে ভাংচুর করেন এবং কয়েকটি ভবনে আগুন লাগিয়ে দেন৷
ছবি: Reuters/H. McKay
লেবাননকে ফ্রান্সের অধীনে নেয়ার দাবি
১৯২০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত লেবানন ফ্রান্সের অধীনে ছিল৷ বৈরুতে বিস্ফোরণের পর কমিউনিটি পিটিশন ওয়েবসাইট avaaz.com-এ আবার ‘লেবাননকে ১০ বছরের জন্য ফ্রান্সের অধীনে’ নেয়ার আবেদন জানানো হয়৷ ক্ষমতাসীনরা দেশ পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থ দাবি করে সেখানে বলা হয়, ‘‘সুষ্ঠু পরিচালনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে লেবাননের ফ্রান্সের অধীনে যাওয়া উচিত৷’’ প্রথম দু‘দিনেই সে আবেদনে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেন৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
ফ্রান্সের জনগণকে অর্থসহায়তা
বিস্ফোরণের পর প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে লেবানন সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ সফরের সময় দেশটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন৷ রবিবার তার এবং জাতিসংঘের উদ্যোগে এক জরুরি ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পসহ ১৫ টি দেশের সরকার প্রধান সেখানে লেবাননের জনগণকে ২৫০ মিলিয়ন ইউরো জরুরি অর্থসহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Simon
9 ছবি1 | 9
তবে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়ার অর্থ পুরো মন্ত্রিসভার ইস্তফা কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দেওয়ার আগে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পুরো মন্ত্রিসভার হয়েই ইস্তফাপত্র দিচ্ছেন। পরে অবশ্য তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তবে সরকারের প্রায় সব মন্ত্রীই আলাদা আলাদা করে ইস্তফা দিয়ে দেবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ দিকে লেবাননের এই পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত গোটা ইউরোপ। বৈরুতে বিস্ফোরণের পরে প্রথম সেখানে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। সোমবার তিনি বলেছেন, দ্রুত রাজনৈতিক সংস্কার করে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। ফ্রান্স লেবাননকে সবরকম সাহায্য করবে। জার্মানিও লেবাননকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। বুধবার জার্মানির বিদেশমন্ত্রীর লেবাননে যাওয়ার কথা।
হেজবোল্লাহর সমর্থনে লেবাননে সরকার তৈরি করেছিলেন হাসান দিয়াব। গত বেশ কিছু দিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত চলছিল তাদের। ইসরায়েল-সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে রীতিমতো উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। তারই মধ্যে এই ঘটনা ওই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিকে এক নতুন সংকটে ফেলেছে।