গত সোমবার গ্রিসের অলিম্পিয়া স্টেডিয়ামে অলিম্পিক মশাল নিয়েছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক কাই কি। তবে গ্রিসে মশাল-গ্রহণ অনুষ্ঠানে রীতিমতো বিক্ষোভ হলো। চীনমানবাধিকার ভঙ্গ করছে, এই অভিযোগ করে বেশ কয়েকটি সংগঠন অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছিল। কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)-র প্রেসিডেন্ট এই মশাল-অনুষ্ঠানে বারবার তার বিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি মনে করেন, চীনে রাজনীতি নিরপেক্ষ মাঠে অলিম্পিকের আসর বসবে।
২০২২ সালের ৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি এই গেমস হওয়ার কথা।
বেজিংয়ের রেকর্ড
এই শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের পর বেজিং হবে একমাত্র শহর যেখানে সামার ও উইন্টার অলিম্পিক হয়েছে।
অধিকাররক্ষা কর্মীরা অবশ্য বেজিংকে বেছে নেয়া নিয়ে রীতিমতো সোরগোল তুলেছেন। তাদের দাবি, এই বাছাই নিয়েও বেনিয়ম হয়েছে। কিন্তু উত্তর অ্যামেরিকা ও ইউরোপের শহরগুলি এই দায়িত্ব নিতে চায়নি। তাই আইওসি-র সামনেও খুব বেশি বিকল্প ছিল না। নরওয়েও জানিয়ে দেয়, তারা গেমসের আয়োজন করতে পারবে না। তখন বেজিং এবং কাজাখস্তানের নুর-সুলতানের মধ্যে একটা শহরকে বেছে নেয়ার প্রশ্ন ছিল। তারা বেজিংকে বেছে নেয়।
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
কিন্তু কিছু মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠনের দাবি, আইওসি-র এই সিদ্ধান্তের অর্থ হলো, চীন যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তা মেনে নেয়া। ২০০৮ সালে চীনে সামার অলিম্পিক হয়েছে। বিশেষ করে উইগুর মুসলিম ও তিব্বতীদের সঙ্গে চীন যে ব্যবহার করছে, তা নিয়ে সোচ্চার এই সংগঠনগুলি। তারা হংকংয়ে যেভাবে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভ জোর করে থামাচ্ছে, তা নিয়েও ক্ষুব্ধ মানবাধিকার সংগঠনগুলি। তারা বিভিন্ন দেশ ও অ্যাথলিটদের অলিম্পিক বয়কট করার আবেদন জানিয়েছে।
চীন সরকার জানিয়ে দিয়েছে, করোনার জন্য বিদেশ থেকে কোনো দর্শককে এই গেমস দেখার অনুমতি দেয়া হবে না।