লেবাননের রাজনৈতিক সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে৷ সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করা সাদ হারিরিকেই আবারও প্রধানমন্ত্রী করা হলে বিক্ষোভ আরো জোরদার হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
লেবাননে সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ জনতা গত অক্টোবর থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে
প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা সহিংস রূপ নিচ্ছে৷ রোববার টানা দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে৷
রোববার রাতের ওই সংঘর্ষে এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন৷ আগের দিন রাতেও অর্ধশত মানুষ আহত হন৷
রাজনীতিতে অভিজাতদের প্রাধান্য এবং হারিরির বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ঠেলে দেওয়া অভিযোগে এ বিক্ষোভ শুরু হলে গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি৷ যদিও রাষ্ট্রপতির অনুরোধে হারিরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন৷
হারিরি পদত্যাগ করলেও নতুন সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা স্থবির হয়েই ছিল৷ যা নিয়ে নানা কথা ডালপালা ছড়াতে শুরু করলে দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন সোমবার বাধ্যতামূলক সংসদীয় পরামর্শ সভার আহ্বান করেন।
ওই সভায় সংসদ সদস্যের ভোটে হারিরিই আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷
নতুন করে বিক্ষোভ এ কারণেই৷ বিক্ষোভকারীরা একটি স্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছে৷
রোববার বিক্ষোভকারীরা ‘সাদ, সাদ, সাদ আর স্বপ্ন দেখবেন না' এবং ‘গণঅভ্যুত্থান গণঅভ্যুত্থান' বলে স্লোগান দেন৷
গত দুই মাসের মধ্যে শনিবার ও রোববার রাতের আন্দোলনই সবচেয়ে নৃশংস রূপ নিয়েছিল৷
রোববার রাতে দাঙ্গা পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়ক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের পর বৈরুতের সড়কে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷
আরব নারীদের দিশা লেবানন
একাধিক দাবি নিয়ে বর্তমানে পথে নেমেছে লেবাননের রাজধানী বেইরুটের নারীরা৷ তাদের আন্দোলন কীভাবে শক্তি জোগাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Images/B. Hussein
একগুচ্ছ দাবি নিয়ে পথে নারীরা
দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়ানো, দুর্নীতি ও প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে ঘিরে বর্তমানে উত্তাল লেবাননের রাজধানী বেইরুট৷ পথে নামা জনগণের মধ্যে রয়েছেন বেশির ভাগ নারীরা৷ তাদের শক্তহাতে নেতৃত্বদান ও অভিনব প্রতিবাদের ধরন অনুপ্রাণিত করছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশে বসবাসরত নারীদের৷ বিশেষজ্ঞদের মত, ফিরতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে নারীবাদের হালও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Ammar
কেমন প্রতিবাদ?
বেইরুটের প্রাণকেন্দ্রে দেশের শিক্ষা মন্ত্রীর কনভয় থামিয়ে দেন প্রতিবাদী নারীরা৷ মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী বন্দুক উঁচিয়ে বাধা দিতে গেলে তাকে লাথি মেরে ধরাশায়ী করে দেন এক নারী৷ লেবাননে নারীদের এমন রূপ বিরল হওয়ার ফলে কিছুটা অবাক, কিছুটা লজ্জিত হয়েই ফিরে যায় সেই রক্ষী৷ এই দৃশ্য বর্তমানে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/APA/F. Abdullah
প্রতিবাদী, অথচ অহিংস
মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীর ঘটনাটি ছাড়া গোটা প্রতিবাদটিই শান্তিপূর্ণ ও অহিংসভাবে চলছে, জানাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷ শুধু তাই নয়, প্রতিবাদ কর্মসূচীর অনেকটা জুড়েই রয়েছে নানা ধরনের শৈল্পিক প্রতিবাদ৷ এর মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত নৃত্য ‘বেলি ডান্স’ও৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/H. Ammar
কী বলছেন নারীবাদীরা?
প্রতিবাদে শুধুমাত্র স্বাধীনচেতা, হিজাববিহীন নারীই নয়, যোগ দিয়েছেন ধর্মবিশ্বাসী হিজাব-পরিহিত নারীরাও৷ সমাজকর্মী হেন্দ এলখোলি ফেসবুকে লেখেন, এই প্রতিবাদ সমাবেশে নারীরাও পুরুষদের মতো শর্টস পরে ঘুরতে পারেন৷ সেখানে হেনস্থার ভয় নেই৷ তাঁর মতে, ‘‘পৌরুষ বলতে আমরা যা যা বুঝি, সেই সব এই প্রতিবাদে এলেই দেখতে পাবেন৷’’ এর আগে একটি প্রতিবাদে নারীদের পুরুষ প্রতিবাদীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/APA/F. Abdullah
তবুও নারী শুধুই সুন্দরী...
বেইরুটের এই প্রতিবাদ আদতে রাজনৈতিক হলেও, মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম একে তুলে ধরছে ‘সুন্দরী নারীদের জমায়েত’র মতো করেই৷ একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘‘এই লেবানিজ সুন্দরীরা আসলে বিপ্লবীও’’৷ এছাড়াও, বেছে বেছে প্রতিবাদী নারীদের শুধু ‘‘আকর্ষণীয়’’ ছবি ছাপার অভিযোগ করেছেন প্রতিবাদীদের একাংশ৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/ Le Pictorium/B. Tarabey
লেবানিজ নারীদের দীর্ঘ লড়াই
২০১৭ পর্যন্ত, ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের শাস্তি মকুব হয়ে যেত লেবাননে, যদি সে ধর্ষিতাকে বিয়ে করত৷ সেই আইন বর্তমানে রদ৷ অন্যদিকে, ২০১৮ সালেও নারীরা রাস্তায় নেমেছিলেন ধর্ষণের দায় ধর্ষিতার ওপর থেকে ধর্ষকের ওপর সম্পূর্ণভাবে দেওয়ার দাবিতে৷ সে কারণেই, লেবাননে এমন প্রতিবাদ তুলে আনছে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে সমালোচনা ও তীর্যক মন্তব্য৷ এরপরেও, এই আন্দোলন থেকেই সাহস পাচ্ছেন আরবের সাধারণ নারীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ Le Pictorium/B. Tarabey