সিএএ, এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভ এবং তা ঘিরে অশান্তির জেরে মার খাচ্ছে দেশের পর্যটন শিল্প৷ গত এক মাসে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমেছে চোখে পড়ার মতো৷ মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের৷
বিজ্ঞাপন
ঠান্ডা, শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে দেশ জুড়ে এখনও চলছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ৷ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৫ জনের৷ যার মধ্যে শুধু উত্তরপ্রদেশেই ১৯৷ উত্তপ্ত ভারতে আসতে ভয় পাচ্ছেন পর্যটকেরা৷ সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে শুধু তাজমহল আসাই বাতিল করেছেন প্রায় দুই লাখ পর্যটক৷ যার অধিকাংশই বিদেশি৷ তাজমহলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আগ্রা পুলিশের আধিকারিক দীনেশ কুমার সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ''গত বছরের তুলনায় এ বছর ডিসেম্বরে পর্যটক কমেছে অন্তত ৬০ শতাংশ৷'' তিনি আরও জানিয়েছেন, বহু পর্যটক তাঁদের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে পরিস্থিতি জানতে চাইছেন৷ আশ্বস্ত করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা আসছেন না৷
ভালোবাসার ভ্রমণ
ভালোবেসে তাজমহল বানানোর নজির অনেক পুরানো৷ দিন বদলেছে৷ তাই কোনো স্থাপনায় না গিয়ে জীবন উপভোগটাই অনেকের জন্য ভালোবাসা দিবসের মূল উপজীব্য৷ তাহলে আর দেরি কেন, ভালোবেসে কোথায় কোথায় ঘুরবেন জেনে নিন...
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Ehlers
শিন নদীর তীরে
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি লিখেছেন শিন নদীর তীরে৷ তাই বাঙালির এই নদীটির সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচিত৷ ভালোবেসে এই নদীর তীর ধরে হেঁটে বেড়াতে পারেন৷ এই নদীতে ৩৭টি সেতু গড়েছেন প্যারিসের নগরকর্তারা৷ প্রতিটি ব্রিজ পাড়ি দেবার সময় একটি করে প্রতিজ্ঞা করে ফেলুন, ব্যাস ৩৭ বছর এতেই কেটে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Ehlers
রোমে কয়েন ফেলুন
রোমের জনপ্রিয় কৃত্রিম ঝর্ণায় পয়সা ফেলুন৷ বলা হয়ে থাকে, রোম এক শ্বাশ্বত শহর৷ আর এই শহরে ইচ্ছা পূরণ হয়৷ সেই শহরের ঝর্ণায় তিনটি পয়সা ফেললে আপনার প্রেমিকার সঙ্গেই জোর বাঁধতে পারবেন৷ তবে হ্যাঁ, প্রেমিকা পয়সা ফেললে কিন্তু প্রেমিককে সেটি তুলে এনে ভালোবাসার জোর প্রমাণ করতে হবে৷ শীতকালে একটু বুঝে শুনেই নামা উচিত৷ নইলে ‘লা ডলসে ভিটা’ ছবির নায়িকা আনিতার মতো ঠকঠক করে কাঁপতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Di Meo
রেকজাভিকের উষ্ণ প্রসবণে স্নান
ভালোবেসে ঠান্ডা পানিতে কয়েন তোলার পরপরই আইসল্যান্ডের রাজধানী রেকজাভিকের উষ্ণ প্রসবণে স্নান সেরে নিতে পারেন৷ একলা যাবেন না, সঙ্গের সাথী যেন থাকে এই স্নানে৷ নীল সেই প্রাকৃতিক হ্রদ দেহ-হৃদয়ে প্রশান্তি আনবে নিশ্চিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Holschneider
লিসবনে হারিয়ে যান
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের শতবর্ষী তিনটি ট্রেনে চেপে দু’জনে মিলে হারিয়ে যেতে পারেন৷ হারিয়ে কোথায় যাবেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে লেখিকা প্যাসকেল মার্সিয়ার ‘নাইট ট্রেন টু লিসবন’ পড়ে নিতে পারেন৷
ছবি: picture alliance / J. Woitas
আল্পস পর্বতে হাতে হাত রাখুন
‘‘যদি হিমালয় আল্পসের সমস্ত বরফ গলেও যায়, তবুও তুমি আমার’’- জনপ্রিয় এই গানটি মনে আছে তো? তবে উষ্ণ জলবায়ুর কারণে এমনিই বরফ গলছে৷ ভালোবাসা প্রমাণে গলানো যাবে না৷ তাই পর্বত ঘিরে গড়ে ওঠা আল্পসপিক্স প্লাটফর্মে দুই হাজার মিটার উপরে উঠে হাত ধরুন সঙ্গীর৷ ভালোবাসার শীতলতা কেটে যাবে নিশ্চিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-J. Hildenbrand
তালায় আটকে দিন ভালোবাসাকে
ভালোবাসা আর নদী, একে অপরের সঙ্গে ভীষণ সম্পর্কিত৷ তাই দেরি না করে ফ্রাঙ্কফুর্টের মাইন নদীর সেতুর ওপর চলে যান৷ নিজেদের নাম করে একটি তালা লাগিয়ে অমর করুন ভালোবাসাকে৷ শত বছর পরেও তালার ওপরে নাম আর তারিখ দেখে কেউ আপনাদের ভালোবাসাকে স্মরণ করবে৷ হয়তো গল্পও লিখবে কেউ৷
ছবি: picture alliance / dpa
ভিয়েনার ঘোড়াগাড়িতে
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার ঘোড়াগাড়িগুলো নাকি প্রেমিক যুগলদের জন্যই তৈরি৷ তাই ভালোবাসা দিবসের শুরুতেই সঙ্গীকে নিয়ে চলে যান ভিয়েনা শহরে৷ সেখানে ঘোড়ার গাড়ি চেপে শনব্রান প্রাসাদে৷ সেখানকার বিনোদন পার্ক ফেরিস হুইলেও ঘুরতে পারেন৷ সন্ধ্যার আগে আগে সেন্ট স্টিফেন ক্যাথেড্রালে গিয়ে নিয়ে নিন যাজকের আশীর্বাদ৷ ভালোবাসার মানুষদের জন্য সেখানে বিশেষ প্রার্থনা হয়৷
ছবি: picture alliance / D. Kalker
টেমস নদীর ঘূর্ণিতে
ভালোবাসা দিবসে লন্ডনে হাজারো গোলাপ আর প্রেমের চিঠি চালাচালি হয়৷ কিন্তু নদীর ঘূর্ণিতে ঘোরার সুযোগ থাকলে নিশ্চয় এটাই করবেন? টেমসের ওপরের সবচেয়ে বড় ফেরিস হুইল লন্ডন আই-তে চেপে ৪৭ ইউরো খরচ করে নদী দেখতে দেখতে শ্যাম্পেন পান করতে পারেন৷
ছবি: picture alliance / D. Kalker
ট্যাঙ্গো নাচুন
ভালোবাসার মানুষের গায়ে পানি ছিঁটিয়ে কাছে আসার একটি রীতি বাংলাদেশের আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে৷ আর আর্জেন্টিনা কিংবা ফিনল্যান্ডের রীতি হচ্ছে নেচে কাছে আসতে হবে৷ প্রাচীন এই নাচের রীতিটি ট্যাঙ্গো বলে পরিচিত৷ ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে গিয়ে ট্যাঙ্গো নেচে আরেকটু কাছে আসতে পারেন সঙ্গীর৷
ছবি: picture alliance / dpa
ভেনিসের একটি রাত
রাতের ভেনিস নিয়ে অনেক গল্প আছে৷ ভালোবাসাকে আরো গভীর করতে ইটালির ভেনিস বন্দরনগরীতে চলে যান৷ ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে রাতব্যাপী কাটান জলের ওপর৷ নীল হ্রদে ঘেরা শহরের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে ঘুরে বেড়ান৷ মনে রাখার মতো একটি রাত হবে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance / dpa
10 ছবি1 | 10
অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ বিদেশি পর্যটক আসেন ভারতে৷ ভারতীয় পর্যটকেরাও এ সময়ে বেড়াতে যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ এর মধ্যে একটা বড় অংশের বিদেশি পর্যটক আসেন পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য তাজমহল দেখতে৷ দিল্লি, আগ্রা, রাজস্থান এ সময় ভরে থাকে পর্যটকে৷ কিন্তু এ বছর সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ এবং পুলিশি অভিযানের ফলে ধস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়৷ দিল্লিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অস্ট্রেলিয়ার পর্যটকের কথায়, ''আগ্রা যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল৷ তাজমহল আর ফতেপুর সিক্রি দেখতেই এত দূর এসেছিলাম৷ কিন্তু যে ভাবে সর্বত্র ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, ১৪৪ ধারা জারি করা হচ্ছে, তাতে যেতে ভয় পাচ্ছি৷ দিল্লি থেকেই ফিরে যাচ্ছি দেশে৷''
পর্যটন ব্যবসায়ী শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ''শুধু ডিসেম্বরেই ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে ৩০ শতাংশ৷ উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি তো বটেই কলকাতাতেও আসতে চাইছেন না বিদেশি পর্যটকেরা৷ দেশের পর্যটকেরাও শেষ মুহূর্তে বেড়ানো বাতিল করছেন৷ অথচ হোটেল, গাড়ি সমস্ত বুক করা হয়ে গিয়েছে৷ কী ভাবে সে টাকা ফেরত আসবে বুঝতে পারছি না৷''
বস্তুত, সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ এবং তা ঘিরে হিংসাত্মক সংঘর্ষের পর অন্তত ১০টি দেশ নাগরিকদের জন্য পর্যটন অ্যাডভাইসারি জারি করেছে৷ যাতে বলা হয়েছে, সম্ভব হলে ভারতে বেড়াতে না যাওয়াই ভাল৷
পর্যটন মন্ত্রকের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷ তবে এ বছর পর্যটন যে গত বছরের চেয়ে কমেছে, সে কথা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই৷
তাজমহলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিদেশিরা
নেতা হোক বা অভিনেতা, বিদেশ থেকে বড় মাপের কেউ ভারতে এলে অবশ্যই তাজমহল দর্শন করেন৷ ছবিঘরে দেখুন কোন কোন বিদেশি তাজমহলের অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ, বাক্যহারা৷
ছবি: picture alliance/AP
জাস্টিন ট্রুডো
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফরে এসেছিলেন৷ তখনই সপরিবারে তাজমহল দেখে নিয়েছিলেন তিনি৷ এছাড়া আমেদাবাদের সবরমতী আশ্রম থেকে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরেও গিয়েছিলেন ট্রুডো৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
কেট ও উইলিয়ম
২০১৬ সালে ব্রিটেনের যুবরাজ উইলিয়ম এবং কেট তাজমহল দর্শনে এসেছিলেন৷ এর আগে উইলিয়মের মা ডায়ানাও তাজমহল দেখে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Das
প্রিন্সেস ডায়ানা
১৯৯২ সালে প্রিন্সেস ডায়না একাই তাজমহল দেখতে ভারতে এসেছিলেন৷ তখন অবশ্য প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি৷ ফিরে যাওয়ার পর পরই তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
ভ্লাদিমির পুটিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন পত্নী লুডমিলার সঙ্গে ২০০০ সালে তাজমহল দেখতে আসেন৷ তাজমহলে এসে তাঁদের প্রেম অমর হয়নি৷ কারণ এ ঘটনার তিন বছর পর তাঁদেরও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Macdougall
এমানুয়েল মাক্রোঁ
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৮ সালে স্ত্রী ব্রিগিটের সঙ্গে তাজমহল দেখতে আসেন৷ মাক্রোঁ এবং তাঁর স্ত্রীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান থাকলেও তাঁদের প্রেম কিন্তু আজও অটুট৷
ছবি: picture alliance/abaca/D. Jacovides
সার্কোজি
২০০৮ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নিকোলা সারকোজি তাজমহল পরিদর্শনে এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Benainous
টম ক্রুজ
২০১১ সালে টম ক্রুজ নিজের ছবির প্রচার করতে ভারতে এসেছিলেন৷ তাজমহল দেখতে সে সময়ে তাঁর সঙ্গে যান বলিউড অভিনেতা অনিল কাপুর৷
ছবি: AP
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও
প্রচার ছাড়াই এই ‘টাইটানিক’ অভিনেতা তাজমহলের সামনে চলে আসেন৷ একান্ত গোপনীয় এই সফরে তিনি কেবল সেল্ফি তুলেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বিল ক্লিন্টন
২০০০ সালে অ্যামেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টন মেয়ে চেলসির সঙ্গে ভারতে আসেন, দেখেন তাজমহল৷ পরে উনি বলেছিলেন, তাজমহল এত সুন্দর যে এখান থেকে ফেরাই উচিত নয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P.J. Richards
হিলারি ক্লিন্টন
চেলসি এর আগে ১৯৯৫ সালে মা হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গেও তাজমহল ঘুরে গিয়েছিলেন৷ তাজমহলে মায়ের সঙ্গে প্রায় ৯০ মিনিট কাটিয়েছিলেন ক্লিন্টন-তনয়া৷