সুদানে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ। চলছে বিক্ষোভ। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ। বৃহস্পতিবার একজন মারা গেছেন।
বিজ্ঞাপন
সুদানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে এবং সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ চলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষেও হচ্ছে। বৃহস্পতিবার একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সেনার গুলিতে একজন বিক্ষোভকারী মারাও গেছেন।
পাশাপাশি সেনাশাসকদের উপরে বিদেশি রাষ্ট্রগুলির চাপও অব্যাহত আছে। অ্যামেরিকা দাবি জানিয়েছে, সেনাশাসকরা অবিলম্বে আগের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক। জাতিসংঘও সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তা পরিষদও জানিয়েছে, অবিলম্বে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিক সেনা। সুদান এমনিতেই খুব গরিব দেশ। সেখানে যা হচ্ছে, তাতে সুদান আরো চাপে পড়বে।
সেনা যেভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, তাতে নিরাপত্তা পরিষদ খুবই চিন্তিত। তারা বলেছে, কোনো শর্ত ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে সেনাশাসকদের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, সুদানের মানুষ অহিংস উপায়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অ্যামেরিকা সুদানের মানুষের পাশে আছে।
গত সোমবার জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান অসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করেন। প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হ্যামডককে এখন গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। কিন্তু শাসনক্ষমতা সেনা দখল করে নেয়ার পরই রাস্তায় নেমেছে সেদেশের যুবরা। তারা সমানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। রাস্তাগুলিতে আবর্জনা ফেলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টায়ার জ্বালানো হচ্ছে। তার ধোঁয়া বহুদূর থেকে দেখা যাচ্ছে। এক বিক্ষোভকারী সংবাদসংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, ''আমরা সামরিক শাসন চাই না। আমরা গণতন্ত্র চাই। মুক্ত পরিবেশ চাই।''
সুদানের রাস্তায় বিক্ষোভ, সেনার গুলি
সোমবার সুদানের ক্ষমতা দখল করেছিল সেনা। তারপর থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সেনার গুলি।
ছবি: AFP/Getty Images
সেনার গুলি, মৃত অন্তত সাত
সুদানের রাস্তায় প্রতিবাদ করছেন সাধারণ মানুষ। সেনার বিরুদ্ধে সরব মানুষ। সেনার পাল্টা গুলি। অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১৪০। হাসপাতাল সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা বাড়ছে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
রাস্তাই একমাত্র রাস্তা
হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গুলির চালিয়েও তাদের প্রতিবাদ বন্ধ করা যায়নি। যেভাবে সোমবার সেনা ক্ষমতা দখল করেছে, সাধারণ মানুষ তার প্রতিবাদ করছেন। পুরনো সরকার ফেরানোর দাবি করছেন।
ছবি: Ashraf Idris/AP Photo/picture alliance
মধ্যবর্তী সরকার
সুদানে এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারই শাসন করছিল। দেশ পরিচালনায় সামরিক ও রাজনৈতিক দলের নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল৷ যার প্রধান ছিলেন আব্দাল্লা হ্যামডক। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। সোমবার সেনা তাকে গ্রেপ্তার করে গোপন ডেরায় নিয়ে যায়।
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
সেনার অভ্যুত্থান
সোমবার সকালে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চালায় সেনা। সভরেন কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান হয়। এরপরেই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
ছবি: Mahmoud Hjaj /AA/picture alliance
গ্রেপ্তার মন্ত্রীরা
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশের অধিকাংশ মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকলকেই অজানা ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুরহান জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্যই এই অভ্যুত্থান হয়েছে।
ছবি: Rasd Sudan Network/AA/picture alliance
২০১৯ সালের অভ্যুত্থান
তিন দশক ধরে সুদানের শাসন ক্ষমতা ছিল ওমর আল-বশিরের হাতে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপরেই সামরিক এবং রাজনৈতিক দলের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ২০২৩ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নতুন নির্বাচিত সরকার গঠনের কথা ছিল।
ছবি: Getty Images/AFP/E. Hamid
বুরহানের দাবি
বুরহান জানিয়েছেন, আগামী দুই বছর সামরিক শাসন জারি থাকবে। তবে ২০২৩ সালের নির্বাচন হবে। সেনাই সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
ছবি: Mohamed Nureldin Abdallah/REUTERS
সাধারণ মানুষের বক্তব্য
সাধারণ মানুষ বলছেন, এর ফলে সুদানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াটি নষ্ট হয়ে গেল। সেনা নতুন করে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিল দেশকে।
ছবি: Nureldin Abdallah/REUTERS
বিশ্বের নিন্দা
অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে সোমবার রাতেই বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সুদানের ঘটনা অত্যন্ত চিন্তার এবং দুঃখজনক। দুই বছর আগে রীতিমতো বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক শক্তি একনায়ক শাসককে ক্ষমতাচ্যূত করেছিল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটি নষ্ট করে দেওয়া হলো।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
অনুদান বন্ধ
অ্যামেরিকা এবং জাতিসংঘ সুদানের নতুন শাসককে অনুদান দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে। সুদানের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। অনাহারে আছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি অনুদান বন্ধ হলে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ছবি: ASHRAF SHAZLY/AFP via Getty Images
10 ছবি1 | 10
বিক্ষোভের মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে, রবার বুলেট ব্যবহার করছে। গুলিও চলছে। সবমিলিয়ে এখনো পর্যন্ত আটজন মারা গেছেন, আহত ১৭০ জন।
অ্যামেরিকা ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সুদানকে ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন সুদানের সদস্যপদ খারিজ করে দিয়েছে। ফলে আর্থিক দিক থেকেও চাপ দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও একই পন্থা নিয়েছিল আন্তর্জাতিক বিশ্ব। সেখানেও মানুষ লাগাতার সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তবুও সেনাশাসকরা অসামরিক নেতাদের হাতে ক্ষমতা ছাড়ছেন না।