ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভ চলছে দেশজুড়ে৷ এদিকে দিল্লিতে বিক্ষোভ ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন৷
বিজ্ঞাপন
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল ভারতের ১৯ টি বামদল৷ দিল্লি থেকে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ জানিয়েছেন সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভকারীরা রাজপথে নেমে আসে৷ বাম দলের কর্মীদের পাশাপাশি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সাধারণ মানুষও৷ ব্যাঙ্গালুরুতে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ মহাত্মা গান্ধীর পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন৷ এসময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
দিল্লিতে বিক্ষোভ
04:17
অন্যদিকে রাজধানী নতুন দিল্লিতে লালকেল্লার সামনে বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি সকালে রাস্তায় নেমে এসেছেন জামিয়া মিলিয়া, দিল্লি ও জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ কিন্তু পুলিশ তাদেরকে ১৪৪ ধারা জারির কথা জানিয়ে বাধা দেয়৷ এসময় গোটা এলাকা ব্যারিকেড দিয়ে রাখে পুলিশ৷
এখন পর্যন্ত ১৪ টি বাস থেকে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তারপরও বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা আসছেন লালাকেল্লার সামনে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে দিল্লির ১৫টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন বিকাল ৫ টা পর্যন্ত তারা কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করবেন৷
এফএস/কেএম
ভারতে গত এক দশকের সাড়া জাগানো নাগরিক আন্দোলন
গত দশ বছরে ভারতে বেশ কিছু নাগরিক আন্দোলন হয়েছে৷ খুব সাড়া জাগানো আন্দোলনগুলো সম্পর্কে জানুন ছবিঘরে...
ছবি: AFP
নির্ভয়া আন্দোলন, ২০১২
ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে এক নারীর গণধর্ষণের ঘটনা নাড়িয়ে দেয় গোটা বিশ্বকে৷ বিচার চেয়ে পথে নামে হাজার হাজার মানুষ৷ কয়েক সপ্তাহব্যাপী এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন সমাজের সবস্তরের মানুষ৷ ফলে দিল্লি ছাড়াও একাধিক রাজ্যে চালু হয় সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন৷ দ্রুতগতিতে বিচারের কাজ সারতে শুরু হয় ‘ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট’৷ বিচারশেষে অভিযুক্ত চারজনের মৃত্যুদণ্ড হলেও এক অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের তিন বছরের কারাবাসের সাজা হয়৷
ছবি: DW/B. Das
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, ২০১১
কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকা ইউপিএ সরকারের সাথে জড়াচ্ছে তখন একের পর এক কেলেঙ্কারির অভিযোগ৷ ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে দুর্নীতি দমনে নতুন, কঠোর আইনের দাবিতে অনশনে বসেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে৷ সেই আন্দোলন থেকেই জন্ম নেয় নতুন রাজনৈতিক দল ‘আম আদমি পার্টি’৷ ২০১২ সালে দলটি দিল্লিতে সরকার গঠন করে৷ সরকারি কার্যকলাপকে বিচারের অধীনে আনতে ২০১৩ সালে পাশ হয় ‘লোকপাল বিল’৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন, ২০১১
পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়তে ব্যবসায়ী রতন টাটাকে কিছু জমি দেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ শিল্পের অছিলায় কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাশে পান সাধারণ মানুষ থেকে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদের৷ ফলস্বরূপ, ২০১১ সালে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর পতন হয় বামফ্রন্ট সরকারের৷ মুখ্যমন্ত্রীত্ব পান মমতা, নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পায় তৃণমূল কংগ্রেস৷
ছবি: UNI
‘হোক কলরব’, ২০১৪
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করতে কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই শুরু হয় প্রতিবাদ৷ কর্তৃপক্ষ না টললে এই আন্দোলন গড়ায় অনশনে৷ রাতের অন্ধকারে পুলিশ ডেকে আনেন তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী৷ ক্যাম্পাসে লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ শুরু হয় ‘হোক কলরব’ আন্দোলন৷ ক্রমাগত আন্দোলনের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য হয় অভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটি বা আইসিসি গঠন করতে৷
ছবি: Ronny Sen
রাষ্ট্রদ্রোহী জেএনইউ, ২০১৬
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান, এই শুরু৷ গ্রেপ্তার হন দুই ছাত্রনেতা উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও তৎকালীন ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট কানহাইয়া কুমার৷ তদন্তে রাষ্ট্রবিরোধিতার কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এই তিন ছাত্র ও গোটা জেএনইউকে ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ আখ্যা দেন অনেকে৷ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে লড়েন কানহাইয়া৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Chakraborty
সাধারণ ধর্মঘট, ২০১৬
২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রায় ১৬ লাখ মানুষ সারা দেশজুড়ে পালন করেন ২৪ ঘন্টাব্যাপী কর্মবিরতি ও ধর্মঘট৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে বাড়ন্ত বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সংগঠিত এই ধর্মঘট এখন পর্যন্ত বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আকারের ধর্মঘট৷ মোট দশটি শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি অসংগঠিত শ্রমিকদেরও স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল এই ধর্মঘটে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Paul
কৃষক আন্দোলন, ২০১৮ ও ২০১৯
পরপর দুই বছর, ২০১৮ ও ২০১৯, পথে নামলেন ভারতের কয়েক লাখ কৃষক৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে দিল্লিতে পৌঁছান তারা৷ কমতে থাকা ফসলের দাম, কৃষকের জন্য বরাদ্দ ভর্তুকি ও বীমার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন তারা৷ কিন্তু তার বদলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে আহত হন অনেক কৃষক৷ জল কামান ও লাঠিতে আহত হন অনেকে৷ কিন্তু আগামী বছর আবার পথে নামার কথা বলেছেন তারা৷