অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে দক্ষিণপন্থি দলের এক উদ্যোগ বানচাল করলেন সুইস ভোটাররা৷ ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের আরও উন্নতির পথ খুলে গেল৷ ইইউ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের নিষ্পত্তি করতে সুইজারল্যান্ডে সরাসরি ভোটারদের রায় জানার চল রয়েছে৷ রবিবারের এক গণভোটে এমনই কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল৷ তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল ইইউ-র সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে৷ সে দেশের কট্টর দক্ষিণপন্থি এসভিপি দল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওণভোট সুইজারল্যান্ডের মধ্যে মানুষের অবাধ চলাচল বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়ে ভোটারদের সমর্থনের আশা করেছিল৷ তাদের যুক্তি, দেশ বিদেশি নাগরিকে ভরে যাচ্ছে৷ জনসংখ্যা বাড়ার কারণে আবাসন থেকে শুরু করে সামাজিক কল্যাণ কাঠামোর উপর চাপও বাড়ছে৷ উল্লেখ্য, বছরে গড়ে প্রায় ৭৫,০০০ ইইউ নাগরিক সুইজারল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন৷ দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশই এখন বিদেশি৷
সুইজারল্যান্ডের ভোটাররা অবশ্য দক্ষিণপন্থি দলের এমন উদ্যোগের বিপক্ষে রায় দিয়েছেন৷ রবিবার ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন৷ বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায়ও এমন পূর্বাভাষ পাওয়া গিয়েছিল৷ ইইউ-র সঙ্গে চুক্তি বাতিল হলে দক্ষ কর্মীর অভাব দেখা দেবে এবং সুইজারল্যান্ডের সম্পদে টান পড়বে বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন৷
ইইউ-র সঙ্গে সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে গণভোটের আগেও বাধার মুখে পড়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় দল এসভিপি৷ সরকার, সংসদ, শ্রমিক ও মালিক সংগঠন এবং অন্য সব রাজনৈতিক দল সেই উদ্যোগের বিরোধিতা করে৷ ফলে সংবিধান সংশোধন করে অভিবাসনের বিষয়টি শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়ে সীমিত রাখার প্রচেষ্টা বিফল হলো৷ দেশের একটা বড় অংশের আশঙ্কা, শুধু মানুষের অবাধ চলাচলের নিয়ম বাতিল করলে ইইউ-র সঙ্গে সার্বিক সম্পর্কের ক্ষতি হবে, যার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে এক বিশেষ শর্তের আওতায় সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সহযোগী বাকি বোঝাপড়াগুলিও বাতিল করতে পারে৷
ভোটারদের এই রায়ের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা আরো নিবিড় হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ নাগরিক অধিকারের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতার কাঠামো আরও মজবুত করতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আরও গতি পাবে৷ ইইউ সে দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন বোঝাপড়াগুলিকে একটি চুক্তির অন্তর্গত করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এর ফলে অবশ্য অতীতে সুইজারল্যান্ড যে সব ছাড় আদায় করতে পেরেছিল, সেগুলি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে৷ তাই সে দেশের সরকারও এ বিষয়ে দরকষাকষি করছে৷ ২০১৪ সালে এসভিপি দলেরই উদ্যোগে অন্য এক গণভোটে মানুষ সামান্য ব্যবধানে প্রস্তাবের পক্ষে রায় দেওয়ায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বড় ধাক্কা খায়৷ সে যাত্রায় সম্পর্ক মেরামত করতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছিল৷
রবিবারের গণভোটের ফলাফল ঘোষণা করার পর ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন দ্বিপাক্ষিত সম্পর্ক আরও জোরালো ও গভীর করে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷ ইইউ সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল এক টুইট বার্তায় সুইজারল্যান্ডের গণভোটের রায়কে স্বাগত জানিয়ে লেখেন, ‘‘সুইস জনগণ স্পষ্ট বার্তা পাঠায়েছে৷ আমাদের সামনে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে৷’’
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
প্রতি বছরই বাংলাদেশিরা কাজ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে৷ বৈধপথে বিদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি৷
ছবি: DW
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
ছবি: Positive light
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
ছবি: AFP
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/A. Farnsworth
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: picture-alliance/FOTOGRAMMA/M. Alberico
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷