1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিচারকের এমন সীমা লঙ্ঘনে ধর্ষকরা উৎসাহিত হবে'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ নভেম্বর ২০২১

৭২ ঘন্টা পার হলে ধর্ষণ মামলা না নেয়ার পরমর্শ দিয়ে বিচারক সীমা লঙ্ঘন করেছেন৷ আর এর ফলে ধর্ষকরা উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা৷ সংশ্লিষ্ট বিচারক ভিক্টিমের চরিত্র হনন করেছেন বলেও মনে করেন তারা৷

Bangladesch | Angeklagten im Vergewaltigungsfall Raintree Hotel freigesprochen
ছবি: MAHMUD ZAMAN OVI/bdnews24.com

বহুল আলোচিত রেইন্ট্রি হোটেল ধর্ষণ মামলার রায়ে পাঁচ আসমিকেই খালাস দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছাম্মাত কামরুন্নাহার৷বৃহস্পতিবার ঘোষিত রায়ের পর্যক্ষেণে তিনি বলে, ‘‘৭২ ঘন্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না৷ পুলিশ যেন ৭২ ঘন্টা পর কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয়৷'' তিনি আরো মন্তব্য করেন, ‘‘ভিক্টিম যৌনকর্মে অভ্যস্ত৷ মেডিকেল রিপোর্ট ও ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি৷'' পাঁচজন আসামির চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও তাদের মারপিট করে জবাবন্দি নেয়ার কথা বলেন তিনি৷ তিনি তদন্তের ত্রুটির কথাও বলেন৷ এজন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনাও করেন৷

কিন্তু পুলিশ যেন ৭২ ঘন্টা পর কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয় এবং ভিক্টিম যৌনকর্মে অভ্যস্ত- তার এই কথা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই নারীরা শাহবাগ থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত ‘‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা'' করে বিচারকের পর্যবেক্ষণের প্রতিবাদ জানান৷ তারা সাক্ষ্য আইনের ‘ধর্ষণ বান্ধব' ধারা বাতিলের দাবি তোলেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় বইছে৷

নারী নেত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘‘বিচারকের ওই মন্তব্য ধর্ষকদের উৎসাহিত করতে পারে৷ ধর্ষকরা এখন ধর্ষণের পর ভিক্টিমকে ৭২ ঘন্টার বেশি আটকে রাখতে পারে রেহাই পাওয়ার জন্য৷ আর থানাগুলো ধর্ষণের মামলা নিতে আরো অনীহা প্রকাশ করতে পারে৷''

তার কথা, ‘‘শুধু মেডিকেল রিপোর্টই ধর্ষণ মামলার বিচারের একমাত্র সাক্ষ্য প্রমাণ নয়৷ উচ্চ আদfলতের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, শুধুমাত্র ভিক্টিমের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেও বিচার করা যাবে৷ পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য এবং আলামতের ভিত্তিতেও বিচার করা যাবে৷ কারণ, একজন নারী বাংলাদেশের যে প্রেক্ষাপট তাতে সামাজিক কারণে অনেক সময়ই ঘটনা লুকিয়ে রাখতে চায়৷ আবার ট্রমার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে আলামত সংরক্ষণের বিষয়টি তখন ভাবতেও পারে না৷ ঘৃণার কারণে পরিস্কার হয়ে যায়৷ গোসল করে ফেলে৷''

‘ওই বিচারক তার মন্তব্যে সংবিধান ও আইনের সীমা লঙ্ঘন করেছেন’

This browser does not support the audio element.

অ্যাডভোকেট সালমা আলী জানান, তিনি অনেক ধর্ষণ মামলাই ভিক্টিমের পক্ষে পরিচালনা করেছেন, যা ধর্ষণের ছয় মাস থেকে এক বছর পর দায়ের করা হয়েছে৷

আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, রেইন্ট্রি হোটেল ধর্ষণ মামলায় বিচারকের পর্যবেক্ষণ সংবিধান ও আইনের বিরুদ্ধে গেছে৷ কারণ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার কোনো সময় বেঁধে দেয়া নেই৷ আর সংবিধানে জীবন, সম্পত্তি রক্ষার অধিকার ও বিচার পাওয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে৷ বিচারক তার মন্তব্যের মাধ্যমে বিচার পাওয়ার অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছেন৷

সংবিধান বিশ্লেষক, আইনের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘ওই বিচারক তার মন্তব্যে সীমা লঙ্ঘন করেছেন৷ তিনি সংবিধান ও আইনের সীমা লঙ্ঘন করেছেন৷ বিচারিক আদালতের কাজ সুনির্দিষ্ট বিষয়ের বিচার করা৷ জ্ঞান দেয়া তাদের কাজ নয়৷ এটা উচ্চ আদালতের কাজ৷ তিনি তার সীমার বাইরে গিয়ে মন্তব্য করেছেন৷''

তিনি মনে করেন. এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হবে৷ তাছাড়া তার মতে, বিচারক যে নারীর চরিত্র হনন করেছেন৷ তা মেনে নেয়া যায় না৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে নারীকে অসম্মান করার যে মানসিকতা আছে, বিচারক তার মন্তব্যে সেটাই করেছেন৷ একজন বিচারক যদি এটা করেন তবে তা ভয়াবহ৷''

তার মতে, ‘‘একজন যৌনকর্মীও ধর্ষণের শিকার হতে পারেন, এটা বুঝতে হবে৷''

সালমা আলী বলেন, ‘‘একটি মেয়েকে তার বয়ফ্রেন্ডও ধর্ষণ করতে পারে৷ ধর্ষণ বিষয়টি বুঝতে হবে৷ আমাদের দেশে নারীরাও যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের হতে পারে- এই বিচারক তার প্রমাণ দিলেন৷''

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘‘বিচারক আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কীভাবে গ্রহণ করবেন সেটা তার ব্যাপার৷ কিন্তু সেটা নিয়ে উপেক্ষামূলক মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়৷ কারণ, হাইকোর্ট স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, কেউ যদি আদালতে দেয়া জবানবন্দি পরে প্রত্যাহার করার আবেদনও করেন, তাতে জবানবন্দি অগ্রহণযোগ্য হয় না৷'' তার মতে, ‘‘বিচারিক আদালত দেশের সব মামলা নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন না৷ আর তিনি যে মন্তব্য করেছেন তাতে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে৷''

‘আমাদের দেশে নারীরাও যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের হতে পারে এই বিচারক তার প্রমাণ দিলেন’

This browser does not support the audio element.

সালমা আলী মনে করেন, ‘‘এই মামলায় ক্ষমতাবানদের দাপট স্পষ্ট৷ মামলা দায়ের থেকে শুরু করে তদন্ত ও বিচার সবখানেই৷ তদন্তেও অনেক ত্রুটি আছে৷''

এর কী প্রতিক্রয়া হবে এবং কতটা বেআইনি এবং অসাংবিধানিক তা দেখার জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আইন ও সংবিধানের বাইরে গিয়ে মনগড়া কোনো মতামত দিলেই তো হবে না৷ নিশ্চয়ই এটা নিয়ে আপিল হবে৷ উচ্চ আদালতে যাবে৷ তখন আদালত এটা দেখবেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ