‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়নি’
৪ মার্চ ২০২০প্রত্যাহার হওয়া ওই বিচারকের বিরুদ্ধে পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির আনা ‘আরো অনেক অভিযোগের' তদন্ত হবে বলেও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন তিনি৷
আইনমন্ত্রী দাবি করেন, ‘‘ওই বিচারকের চরম দুর্ব্যবহারের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে জামিন রিকল করে আওয়ামী লীগ নেতাকে জামিন দেয়া হয়৷ জামিন রিকল করার বিধানতো আছে৷' তবে জামিন দেয়া, না দেয়া আদালতের এখতিয়ার বলেও জানান তিনি৷
যা ঘটেছে
দুর্নীতির মামলায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আউয়াল এবং তাঁর স্ত্রীকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷ এর পরপরই তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়৷ বিকেলে যুগ্ম জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের আদালত থেকে জামিন রিকলের মাধ্যমে তাঁরা জামিন পান৷ আর এই সময়ের মধ্যে বিচারক প্রত্যাহার ছাড়াও পিরোজপুরে আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে৷
প্রতিক্রিয়া
বুধবার হাইকোর্ট ওই বিচারককে প্রত্যাহার কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন৷ আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বিষয়টি বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চর নজরে আনলে তাঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করেন৷ ১১ মার্চের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত৷
আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, ‘‘ওই বিচারককে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা হয়েছে৷ বিচার বিভাগকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে৷ এটা সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন৷ আগে আমরা জানতাম হাকিম নড়েতো হুকুম নড়েনা৷ এবার আমরা দেখলাম হাকিমও নড়ল, হুকুমও নড়ল৷''
তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার বিভাগ স্বাধীন৷ নিয়োগ, বদলি, পোস্টিং সব বিচার বিভাগের হাতে৷ এখানে প্রশাসন কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারেনা৷ এটা আদালত অবমাননা৷ বিচারক সরিয়ে দিয়ে আরেকজন বিচারক এনে জামিন নেবে এটাতো নজীরবিহীন ঘটনা৷''
এদিকে এই ঘটনাকে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আইনমন্ত্রী এবং দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন৷
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য
পদত্যাগের দাবি উড়িয়ে দিয়ে আইনমন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব ফালতু কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করিনা৷'' তিনি বলেন, ‘‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ আমি নিশ্চিত করে বলছি বিচার বিভাগের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি৷ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়নি৷ ওনার দুর্ব্যবহার এত খারাপ ছিলো যে তাঁকে প্রত্যাহার না করলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো৷ যত অভিযোগই থাকুক না কেন তিনিতো দুর্ব্যবহার করতে পারেন না৷''
এই বিচারকের বিরুদ্ধে ‘আরো অনেক অভিযোগের' ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী জানান, যেহেতু অভিযোগের তদন্ত হবে তাই আমি সেগুলো প্রকাশ করতে চাইনা৷ পিরোজপুর আইনজীবী সমিতি তাঁর বিরুদ্ধে রেজ্যুলেশন পাস করেছে৷
পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম বেলায়েত হোসেন রেজ্যুলেশন পাসের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘ওই বিচারক সবসময় আদালতে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন৷ এছাড়া তিনি জামায়াত শিবিরের লোক সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠান করেন৷ বাসায় নাচ, গান হয়৷ কিছু অবৈধ নিয়োগও দিয়েছেন তিনি৷''
কিন্তু বিচারকের বিরুদ্ধে জেলা আইনজীবী সমিতির এই রেজ্যুলেশন পাস করা হয় মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আউয়াল ও তার স্ত্রীকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়ার পর৷ এর ব্যাখ্যায় আইনজীবী সমিতির সভাপতি দাবি করেন, ‘‘জামিন না দেয়ার সাথে আমাদের রেজ্যুলেশন পাসের কোনো সম্পর্ক নাই৷ আমরা সকাল ১০ টায় বসতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তখন বসতে পারিনি৷ আমরা দুপুর ১টার পর বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিই৷''