প্রবল বিক্ষোভ ও চাপের মুখে পড়ে তার প্রস্তাবিত বিচারবিভাগীয় সংস্কার স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করলেন নেতানিয়াহু।
বিজ্ঞাপন
এরপরই ট্রেড ইউনিয়নগুলি তাদের ধর্মঘটের ডাক প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিলেন। তার প্রতিবাদে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান। ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ধর্মঘটের ডাক দেয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জানায় তারা এই সংস্কারের বিরোধী। এমনকী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি ও জোট শরিক নেতাদের একাংশ এই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না।
এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ''যখন গৃহযুদ্ধ এড়ানোর জন্য আলোচনার একটা বিকল্প আছে, তখন আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেই বিকল্পই নিচ্ছি।''
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল পার্লামেন্ট ডাকা হয়েছে। ততদিন পর্যন্ত যেন নেতানিয়াহু তার পরিকল্পনা রূপায়ণ না করেন।
নেতানিয়াহু বিচারবিবাগের সংস্কার করে বিচারপতিদের নিয়োগের পূর্ণ ক্ষমতা সরকারের কাছে রাখতে চান। বিচারবিভাগ যাতে কোনো নেতাকে দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগে ক্ষমতাচ্যূত না করতে পারেন, সেটাও নিশ্চিত করতে চান।
যেভাবে চরমে উঠল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
গাজাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের৷ তবে এবছর কয়েকটি বিশেষ ঘটনার ফলে উত্তেজনা চরমে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
সীমান্তে বোমাবাজি
গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি সীমান্তে একটি বোমা বিস্ফোরণে চারজন ইসরায়েলি সৈন্য আহত হন৷ প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিভিন্ন লক্ষ্যের উপর বিমান হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
জাতিসংঘের সাহায্য
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ) গাজা স্ট্রিপের অর্ধেক মানুষের মুখ্য সরবরাহের উৎস৷ ২৫শে ফেব্রুয়ারি তারিখে সংস্থাটি সাবধান করে দেয় যে, গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷ কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউএনআরডাব্লিউএ-র জন্য অর্থসাহায্য বন্ধ করেছে৷ সংস্থাটি পরে জানায় যে, অন্তত জুলাই মাস অবধি গাজায় সরবরাহ চালু থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Jarar'Ah
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী আক্রান্ত
১৩ই মার্চ ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহর গাড়ির বহর গাজায় আক্রান্ত হয়৷ পশ্চিম জর্ডানের ফাতাহ গোষ্ঠীর রাজনীতিক হামদাল্লাহ সচরাচর গাজা সফর করেন না৷ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ঐ আক্রমণের জন্য হামাসকেই দায়ী করেছেন, কেননা হামাস হামদাল্লাহর পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ অপরদিকে হামাসের দাবি যে, ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও সম্প্রীতির হানি ঘটানোর জন্যই ঐ আক্রমণ চালানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
ইসরায়েলি বিমান হানা
১৮ই মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণের ফলে কেউ আহত না হলেও, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিমান হানা চালিয়ে হামাসের একটি সুড়ঙ্গ প্রণালী ধ্বংস করে৷ পরবর্তী কয়েক দিনে বেশ কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনি সীমান্তের ক্ষতিগ্রস্ত কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
সীমান্ত বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা স্ট্রিপের ফিলিস্তিনিরা ঘোষণা করে যে, ইসরায়েল অধিকৃত এলাকাগুলিতে প্রত্যাবর্তনের অধিকারের দাবির সমর্থনে সীমান্তে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে৷ ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের দাবি মেনে নিতে রাজি নয়৷
ইসরায়েল কর্তৃক ভূমি দখলের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালে আরব প্রতিবাদের স্মরণে ৩০শে মার্চ তারিখটিকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷ এবছর ভূমি দিবসের পদযাত্রায় প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনি অংশগ্রহণ করেন৷ কিছু বিক্ষোভকারী সীমান্তের বেড়া পার হবার চেষ্টা করেন ও ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও অনেকে আহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
সীমান্তে প্রতিবাদের দ্বিতীয় পর্ব
৬ই এপ্রিল সীমান্তে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও সংঘর্ষে একজন সাংবাদিক ও ন’জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
‘আমরা ওদের ওপর আঘাত হানবো’
৯ই এপ্রিল তারিখে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সীমান্তের কাছে অবস্থিত স্ডেরট শহরে ঘোষণা করেন, ‘‘আমাদের একটি সহজ-সরল নীতি আছে, যা আমরা বারংবার জ্ঞাপন করার চেষ্টা করি৷ যদি কেউ তোমাকে আক্রমণ করে, তাহলে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে আক্রমণ করো৷ আমরা ওদের এই গাজা সীমান্তে আমাদের ওপর আঘাত হানতে দেবো না; বরং আমরা ওদের ওপর আঘাত হানবো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
সীমান্তে বিক্ষোভের তৃতীয় পর্যায়
১৩ই এপ্রিল তারিখে উদ্যোক্তারা সীমান্তের কাছে বিক্ষোভরত জনতাকে ইসরায়েলের পতাকার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে বলেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া
১৩ই এপ্রিল সীমান্তের কাছে আহত এক তরুণকে সাহায্য করার জন্য ছুটে এসেছেন তাঁর সঙ্গীরা৷ ৩০শে মার্চ প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন ও শত শত আহত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
10 ছবি1 | 10
ধর্মঘটের ডাক প্রত্যাহার
নেতানিয়াহু যখন এই ঘোষণা করছেন, তখন লাখখানেক মানুষ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সোমবার থেকে দেশজুড়ে ধর্মঘটও ডাকা হয়েছিল। তবে এই ঘোষণার পর ট্রেড ইউনিয়নগুলির কনফেডারেশন দ্রুত সেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়।
এর আগে ফেডারেশন তাদের সাত লাখ সদস্যকে কাজ করা বন্ধ করার কথা বলেছিল। এই সব কর্মীরা স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ব্যাঙ্কিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মী।
এই ধর্মঘটের জের বিমান চলাচলেও পড়েছিল।
প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ''এখন সময় হলো এই বিষয়টিকে নিয়ে খোলাখুলি ও যুক্তিগরাহ্য আলোচনা করার।''
সাবেক প্রধানমন্ত্রী লাপিদ বলেছেন, তারা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তার দল আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদি সরকার ঠিকভাবে আলোচনা করে, তাহলে এই সংকট থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছেন, ''আলোচনার সিদ্ধান্তের ফলে সমঝোতায় আসার জন্য আরো কিছুটা সময় পাওয়া গেল।'' যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।