1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আন্দোলনে রাজনৈতিক সমর্থন লাগবে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ নভেম্বর ২০১৬

ইতিহাসবিদ ড: মুনতাসির মামুন মনে করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি হতাশাজনক৷ তিনি বলেন, পাশ্চাত্যে নৈতিকতা নিজের থেকেই চলে আসে৷ বাংলাদেশও সেটার জন্য অপেক্ষা করতে পারে৷

Muntasir Mamoon
ছবি: Privat

বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড: মামুন৷

ডয়চে ভেলে: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা লক্ষ্য করি৷ বাংলাদেশে এই প্রবণতা আরো বেশি৷ এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

অধ্যাপক মুনতাসির মামুন: উত্তরণের উপায় হচ্ছে ‘গুড গভর্নমেন্ট'৷ আমাদের মতো দেশে যেখানে সামরিক প্রভাব ছিল, এখনও আছে, সেখানে সিভিল গভর্নমেন্টের পক্ষে কাজ করে, (বিচারহীনতার সংস্কৃতি) পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে যায়৷ এছাড়া নাগরিক হিসেবেও আমরা সচেতন নই৷ সরকারের যে বিভাগগুলো আছে সেখানেও কিন্তু আইনের লংঘন হলে প্রতিকারের জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ৷ আমাদের যে ঘটনাটা ঘটে গেছে নাসিরনগরে, সেটার জন্য লড়তে দু'একজন দাঁড়াচ্ছে৷ ফলে আমাদের জন্য কাজগুলো কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷

আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, যুদ্ধপরাধীদের বিচারসহ বেশ কিছু বড় মামলার বিচার হচ্ছে বা হয়েছে৷ সাধারণ মানুষের মামলার ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত করা যায়নি৷ এটা কিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব?

আমরা যেটা বলি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ হচ্ছে৷ যে দেশে বঙ্গবন্ধু খুন হয়েছিলেন, জাতীয় চার নেতা খুন হয়েছিলেন, সেখানে এই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার হয়নি, উল্টো খুনিরা পুরস্কৃত হয়েছিলেন৷ যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলো, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার হলো তখন, কিন্তু আমরা বলছি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হচ্ছি৷ একটা কথা মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর জনগণের চাপ ছিল এবং শেখ হাসিনার নিজেরও একটা ইচ্ছে ছিল বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ক্ষেত্রেও তাই৷ কিন্তু দৈনন্দিন যে মানবাধিকার লংঘন হয় সেটির বিচার কীভাবে হবে৷ আমরা সেখানে পৌঁছাতে পারছি না৷ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে অবিচার হয় সেখানে তাদের বদলি করা হয়, শাস্তি দেয়া হয় না৷ এটাও কিন্তু একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে গেছেষ৷ ফলে প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল এবং সেটি কী হবে তা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব না৷ 

Allap Interview Pof. Muntasir Mamoon - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সুশীল সমাজের এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা আছে কী? আমরা দেখি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও কোনো একটা পক্ষ নিয়েই কথা বলেন৷ তাঁদের ভূমিকা কি হতে পারে?

এক্ষেত্রে তাদের কোনো মনোযোগ আছে বলে আমি মনে করি না৷ অনেক সময় হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু ভূমিকা রাখে৷ আমার কাছে মনে হয় সেটাও যথেষ্ট না৷ আমরা যাঁদের সুশীল সমাজ বলি তাঁদের নিজেদের অনেক রকম এজেন্ডা আছে৷ এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাঁরা মনোযোগী৷ আমার মনে হয়, জনগণকে সচেতন হতে হবে৷ তাদের মনে রাখতে হবে বিচার পাওয়া আমার সাংবিধানিক অধিকার৷ আর সরকারও বিচার সহায়তা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে৷ এই বিষয়টিও সাধারণ মানুষ জানেন না৷ বিচার পাওয়া আমার অধিকার, কিছু হলে আমি বিচার চাইতে পারি এই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে একটা ক্যাম্পেইন শুরু হতে পারে৷

বাংলাদেশে অপরাধ করলে টাকা দিয়ে পার পাওয়া যায় বলে একটা ধারণা আছে৷ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তো খুবই প্রভাবশালী৷ তাদের বিচারের আওতায় আনার উপায় আছে কী?

আমি কোনো সম্ভাবনা দেখি না৷ আপনি যে প্রশ্ন করলেন সেটা সঠিক নয়, এটা আমি বলব না৷ আমি লেখালেখি করি৷ এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছুই নেই৷ আমরা অসহায়৷ সমাজে এখন একটা বদল হচ্ছে৷ নতুন যে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে সেটা অর্থ৷ অর্থ দিয়ে সব কেনা যায়৷ সেটা আমাদের নেই৷ আর থাকলেও কিনতে চাইব না৷ সেই অর্থের বিপরীতে একটা অবস্থান নেয়া খুবই কঠিন কাজ৷ এখন নাগরিক সমাজের কোনো প্রতিনিধি তৈরি হয় কিনা তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে৷ এই বাইরে আমাদের কিছু বলার নেই৷

বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হতে সরকারকে বাধ্য করতে জনগণ কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?

হ্যাঁ পারে৷ কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে জনগণ যদি কোনো দাবি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাহলে সরকারের তরফ থেকে বলবে, এটা নাগরিক দাবি না৷ এটা বিরোধীদের আন্দোলন৷ এখানে একটা বিভাজন তৈরি হয়ে গেছে৷ তাই আমি প্রথমেই বলেছি, সচেতনতা সৃষ্টি হতে পারে প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ সরকারের যে সংস্থা আছে তারা যদি যারা বিচার পাচ্ছে না তাদের ব্যাপারে এগিয়ে আসে তাহলেও আমরা অনেকখানি এগিয়ে যেতে পারি৷ এছাড়া উত্তরণের পথ আমার জানা নেই৷ আমরা বলতেও পারব না৷ অনেক বড় বড় কথা বলা যাবে৷ কিন্তু তা করে কোনো লাভ নেই৷ 

জনগণকে সচেতন করার ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

পরামর্শ কিছু না৷ আসলে পরামর্শ দিয়ে কোনো কাজ হবে না৷ নাগরিক সমাজের যাঁরা নেতৃত্ব দেন তাঁরা যদি সচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসেন এবং স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করেন, এজেন্ডা মনে করে, তাহলে একটা কাজ হতে পারে৷ এটাকে ওভাবে গ্রহণ না করলে কোনো কাজ হবে না৷

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কি কোন উপায় আদৌ আছে?

আসলে এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই৷ আমি কোনো ধারণা দিতে পারব না৷ পরিস্থিতি হতাশাজনক৷ প্রত্যেক দেশই এমন একটা সময় অতিক্রম করে৷ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে৷ অর্থ দিয়ে সবসময় কেনা যাবে না, আবার কেনাও যেতে পারে৷ পাশ্চাত্যে আমরা দেখেছি, নৈতিকতা নিজের থেকেই চলে আসে, অথবা তারা মানতে বাধ্য হয়৷ সেটার জন্য একটা সময় আসবে৷ সেটার জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারি৷ অথবা ঐ ধরনের কোনো নাগরিকের জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারি, যিনি এই বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন এবং কাজ করে যাবেন৷

বিচারহীনতার পাশাপাশি দায়মুক্তির একটা সংস্কৃতি আপনি খেয়াল করেছেন৷ এই সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ আছে?

এটা একসঙ্গেই যুক্ত৷ এটা নিয়ে আলাদা কিছু করার বা ভাববার নেই৷ যারা যখন ক্ষমতায় থাকেন তারা এটা করবেন৷ এক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি? যারা চুপ করে থাকতে পারেন না তাদের মাঠে নামতে হবে৷ সেই কথাই তো বলছি৷ আমরা যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কাজ করেছি ৪০ বছর ধরে৷ সেরকম আরো দু'জনকে ৪০ বছর থেকে কাজটা এগিয়ে নিতে হবে৷ এটা স্বতস্ফূর্তভাবে না হলে তো হবে না৷ একটা বিষয় বুঝতে হবে- সবকিছুর দায় দায়িত্ব যারা করে যাচ্ছে তাদের উপর বর্তানো ঠিক নয়৷ এতগুলো এজেন্ডা আমরা নিতে পারব না৷ আমরা এটাকে আমাদের জেনারেশনের দায় মনে করেছি সেজন্য আমরা জেল-জুলুম রিমাণ্ড নির্যাতন সহ্য করেছি, সাফল্যও পেয়েছি৷ কারণ জনগণকে আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি৷ এরজন্য রাজনৈতিক সাপোর্ট দরকার৷ না হলে এটা হয় না৷ বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়েও একইভাবে কাজ করতে হবে এবং এর জন্য রাজনৈতিক সাপোর্ট লাগবে৷ না হলে আমরা কোনো লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব না৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ