বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন নারীকে দিন দিন নিরাপত্তাহীন করে তুলছে৷ প্রতিনিয়ত শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে না৷ তদন্তে ঢিলেমি করা হচ্ছে৷ আবার তদন্ত শেষ হলেও বিলম্ব হচ্ছে বিচার৷
বিজ্ঞাপন
‘এর মধ্য দিয়েই তৈরি হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি', বলছেন মানবাধিকার ও নারী আন্দোলনের কর্মীরা৷
বাংলাদেশের বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ৬৬০ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ অথচ কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত কাজই শেষ করতে পারেনি৷ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিচারহীনতার কারণেই আজকের এই পরিস্থিতি৷ তাহলে আমাদের দেশে নারীর কতটা ক্ষমতায়ন হয়েছে, তা ভেবে দেখার সময় কি এসেছে?''
সর্বশেষ গত ২১শে মে সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় রাস্তা থেকে এক গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে পাঁচজন দুর্বৃত্ত গণধর্ষণ করে৷ পরে রাতেই তাঁকে উত্তরা এলাকায় ফেলে যায় তারা৷ এই তরুণী বাদি হয়ে থানায় মামলা করলেও পুলিশ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷ এ ঘটনার দিন ১৫ আগে নারায়ণগঞ্জে একজন গার্মেন্টস শ্রমিককে বাসের মধ্যে ধর্ষণ করে চালক ও হেল্পার৷ ঐ ঘটনায় পুলিশ অবশ্য তাদের গ্রেপ্তার করেছে ইতিমধ্যেই৷
তারও আগে ১৪ই এপ্রিল ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন নারী লাঞ্ছনার শিকার হন৷ একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ঝোপের মধ্যে টেনে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে কয়েকজন ছাত্র৷ এ ঘটনায়ও সংশ্লিষ্ট পাঁচজন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়৷
এতগুলো ঘটনার মধ্যে কোনোটিতেই সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ৷ এটা কি আসলে পুলিশের ব্যর্থতা, নাকি গাফিলতি? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, পুলিশ এ সব ক্ষেত্রে একেবারেই আন্তরিক না৷ বরং অভিযোগকারী নারীই পদে পদে হয়রানির শিকার হন৷ পুলিশ তদন্তের নামে নানাভাবে হয়রানি করে ভিকটিমকেই৷'' তিনি গারো তরুণীর প্রসঙ্গে টেনে বলেন, ‘‘সে কিন্তু প্রথম যে পুলিশের কাছে গিয়েছিল, সেখানে সাহায্য পাইনি৷ একটা পর্যায়ে মিডিয়া সরব হলে পুলিশ এগিয়ে আসে৷''
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
ধর্ষিত গারো তরুণীর বড় বোনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের বাসা উত্তরায় হওয়ায় তাঁরা মামলা করার জন্য প্রথমে তুরাগ থানায় যান৷ কিন্তু অন্য এলাকার ঘটনা বলে পুলিশ রাত ৪টার দিকে তাঁদের ফিরিয়ে দেয়৷ এরপর ভোর ৫টার দিকে তাঁরা যান গুলশান থানায়৷ সেখানেও একই উত্তর মেলে৷ শেষে সাড়ে ৬টার দিকে ভাটারা থানায় গেলে বলা হয়, ওসি নেই, অপেক্ষা করতে হবে৷ এরপর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওসি থানায় আসেন এবং তাঁদের কথা শুনে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের মামলা নথিভুক্ত করা হয়৷
এদিকে রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণের শিকার আদিবাসী তরুণীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট৷ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রুল দেয়৷ পাঁচটি মানবাধিকার সংগঠনের করা একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এই বেঞ্চ তিনটি রুল ও দু'টি নির্দেশনা দেয়৷
অন্য একটি রুলে আদালত আরও জানতে চায়, ধর্ষণের শিকার তরুণীর প্রাথমিক অভিযোগ নিতে দেরি করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না? দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়৷ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব থানায় ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-গোত্র ও জন্মস্থান নির্বিশেষে কোনো ব্যক্তির অভিযোগ গ্রহণ করতে যেন দেরি না করা হয়, সে জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ঢাকা মেডিকেলের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার'-এ চিকিৎসাধীন ধর্ষিত গারো তরুণীর সঙ্গে আলাপ করে এসে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী জানান, অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে লড়াই চালিয়ে যাবে মেয়েটি৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ আন্তরিক হলে অবশ্যই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব৷'' তাই ১লা বৈশাখের ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি৷ মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিও বলেন একই কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সচেষ্ট হবে৷ ধর্ষিত এই তরুণীকে সব ধরনের সহযোহিতা দেয়া হবে৷
তরুণীর অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার'-এর তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিলকিস বেগম জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন ভালো৷ তবে মানসিকভাবে ‘ডিপ্রেশনে' আছেন৷ মানসিকভাবে তিনি বেশি বিপর্যস্ত৷ হয়ত কাউন্সিলরের কাছে আরও কয়েকটি ‘সিটিং' লাগবে তাঁর৷ তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে৷ তাই তিনি যদি পরিবারের কাছে যেতে চান, তাহলে যেতে পারবেন৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে মামলাটির তদন্ত করছে৷ শুধু তদন্তই নয়, তদন্ত তদারকির জন্য তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ ফলে আমাদের আন্তরিকতায় যে কোনো অভাব নেই, সেটা বোঝা যাচ্ছে৷ আমি আশা করছি, শিগগিরই অন্তত একজন ধর্ষক আটক হবে৷ এবং তার মাধ্যমে অন্যদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদেরও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘শুধু এই মামলাটি নয়, সবগুলো ঘটনারই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে৷''