আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায় ধর্ষণের শিকার নারীদেরই শাস্তি হয়৷ বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের দায়ে জেলে যেতে হয় তাঁদের৷
বিজ্ঞাপন
পরিসংখ্যান বলছে, মৌরিতানিয়ার নারী কয়েদিদের ৪০ শতাংশেরও বেশি কয়েদির মূল অপরাধ বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক বা ‘জিনা'৷ নোয়াকচোট শহরে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যেই অন্তত ৫০ জন নারীর কারাদণ্ড হয়েছে৷ আশ্চর্যের বিষয়, বেশিরভাগ নারীই ধর্ষণের শিকার৷
উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার মরুভূমির মাঝে অবস্থিত দেশ মৌরিতানিয়া শরিয়া আইনে চলা একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র৷
অনেক ইসলামি রাষ্ট্রের মতো ধর্ষণের শাস্তি সেখানে মৃত্যুদণ্ড না হলেও সেখানকার আইন এখনো নারীবান্ধব নয়৷
সে দেশে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক অবৈধ৷ ফলে ধর্ষণের শিকার হলে নারীকে সবার আগে প্রমাণ করতে হয় যে যৌন সম্পর্কটি অনিচ্ছাকৃত ছিল৷ তা প্রমাণ করা সব সময়ই কঠিন৷ এ কারণে ধর্ষকের শাস্তি হোক না হোক বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণে ধর্ষিতার শাস্তি অবধারিত৷
ফলে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিত নারীকেই কারাভোগ করতে দেখা যায়৷ যেসব ক্ষেত্রে তাঁরা প্রমাণ করতে পারেন যে, তাঁদের সাথে জোর খাটানো হয়েছে, কেবল সেখানেই রেহাই পান নারীরা৷
আইনে ফাঁক রয়ে যাওয়ার কারণে খুব সহজেই ধর্ষনকে ‘জিনা' বলে চালিয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করে মৌরিতানিয়ার বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন৷
২৬ বছর বয়সি খাদি একজন ভুক্তভোগী৷ ধর্ষণের পর তিনি লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতে পারেননি৷ কিন্তু গর্ভাবতী হওয়ার পর বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়৷ একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি৷
বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের দায়ে হাজতবাস করতে হলেও প্রগতিশীল আইনজীবীদের সহায়তায় ছাড়া পান খাদি৷ কিন্তু সবার ভাগ্য এক রকম হয় না৷
মৌরিতানিয়ায় পুরুষদেরও ‘জিনা'-র দায়ে কারাদণ্ড হয়৷ কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কারাবাসের সময় হয় মেয়েদের তুলনায় কম৷
২০০৫ সালে কার্যকর হওয়া নতুন আইনের কারণে ছোট মেয়েদের আর ‘জিনা'-য় অভিযুক্ত করা যায় না৷ মৌরিতানিয়ার নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষা সমিতির কর্ণধার জিনাবু তালেব মুসা জানান যে, এ আইনের কারণে এখন সময় নিয়ে তদন্ত করা হয়, নেওয়া হয় সাক্ষ্যও৷ নারীকে কিছুটা হলেও সুযোগ দেওয়া হয় এখন৷ তবুও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ও মাঝে মাঝে ছোটদের জন্যও এই আইন খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে না৷
ধর্ষণের পর অনেক ক্ষেত্রে হাজতবাস এড়ানো গেলেও অল্পবয়সি, অবিবাহিত মেয়েরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে৷ ফলে বাড়তে থাকে তাদের প্রতি সামাজিক অবিচার৷
কিন্তু মুসা ও তাঁর সহযোগী ইলাই-এর উদ্যোগে একটি নতুন আইন আলোচনায় উঠে আসছে৷ ২০১২ সালে প্রস্তাবিত এই আইন লিঙ্গ বৈষম্য ও এ সংক্রান্ত সহিংসতার বিরুদ্ধে৷ ২০১৬ সালে আইনটি অনুমোদনের জন্য সংসদে পাঠালে সেখানে তুমুল বিতর্ক হয়৷ বলা হয়, এই আইন পশ্চিমা ধাঁচে গড়া ও সমকামের পক্ষে৷
আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি
এক সময় আফ্রিকাকে বলা হতো ‘অন্ধকার মহাদেশ’৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাদেশ সব দিক থেকে অনেক এগোলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ৷ ছবিগুলো তারই প্রমাণ৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
চলমান ছবি
এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় নিকিওয়ে মাসাঙ্গোর৷ চোখ খুলে দেখেন এক লোক তাঁর ওপরে৷ লোকটি বলল, চোখ ঢেকে রাখতে যাতে তাকে চেনা না যায়৷ তারপর সারা রাত ধরে চলল ধর্ষণ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই নারীর বয়স এখন ৮৭ হয়ে গেলেও সেই রাতের কথা ভোলেননি মাসাঙ্গোর৷ তাঁর এ ছবি তুলেছেন জার্মান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরির ফাইনালিস্ট লুঙ্গি মবুলওয়ানা৷
ছবি: Lungi Mbulwana
পুলিশের নির্মমতা
পুলিশের পা ধরে রেহাই চাইছেন এক ওকাডা মোটর সাইকেল ট্যাক্সি চালক৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ নগ্ন হয়ে জানিয়ে আরো বড় বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি৷ পুলিশ বেধড়ক পেটাতে শুরু করে৷ নাইজেরিয়া সরকার প্রধান সড়কগুলোতে ওকাডা নিষিদ্ধ করার পরও চালাতে যাওয়াই এই তরুণের প্রথম অপরাধ৷ রাস্তায় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজে ভীষণ কঠোর নাইজেরিয়ার পুলিশ৷
ছবি: Olufemi Ajasa
ইচ্ছা থাকলে শিক্ষা হয়
শিশুগুলো এখন স্কুল থেকে মাকোকোয় ফিরবে নৌকা চালিয়ে৷ ওদের ভাগ্য ভালো, কেননা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার লেখাপড়া, আর খুব কষ্ট করে হলেও তা তারা করতে পারছে৷ ওদের মতো ভাসমান বস্তির অনেক ছেলেমেয়েই কিন্তু এ সুযোগ পায়না৷
ছবি: Oluyinka Ezekiel Adeparusi
হতভাগ্যের আবেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার এই লোকটি ২০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে৷ সেই কষ্ট আছে, আছে অহঙ্কারও৷ মুখে অনেকগুলো ট্যাটু৷ প্রত্যেকটি ট্যাটু তাঁর দল এবং নিজের মর্যাদার প্রতীক৷ যত জটিলতা, যত দুর্ভোগই থাকুক জীবনে তারপরও সুন্দর কিছু থাকেই- ছবিটি দেখে তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!
ছবি: Theodore Afrika
সড়কে ন্যায়দণ্ড
মোবাইল ফোন চুরি করেছে- এই সন্দেহে একটু আগে মারধর করা হয়েছে তাঁকে৷ গণপিটুনির পর তাঁকে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তারপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ স্রেফ সন্দেহের বশে একজনকে নির্বিচারে পেটানোর অপরাধে কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ৷ সুবিচারের মানবাধিকার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানীতে অনেক মানুষেরই নেই৷
ছবি: Lulama Zenzile
গৃহহারার কান্না
বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার জন্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘর৷ আফ্রিকার আরেক দেশ চাদ-এর রাজধানীতে সাত সন্তানের এই মায়ের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে তাঁর অশ্রু৷ এভাবে গৃহহারা করা হয়েছে ৬৭০টি পরিরারকে৷ অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি কাউকে৷
ছবি: Salma Khalil Alio
সাংবাদিকের অধিকারের লড়াই
সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সোমালিয়ার সাংবাদিকরা৷ আব্দাল্লে আহমেদ মুমিন ছবিটি তুলেছেন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার নেয়ার কারণে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সময়৷ ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরিতে এই ছবিও স্থান পেয়েছে৷ প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক ডয়চে ভেলে এবং জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷ বুধবারই বিজয়ীদের হাত পুরষ্কার তুলে দেয়ার কথা৷