1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কি চলবেই?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ জানুয়ারি ২০১৮

শনিবার ভোর রাতে যশোরে ৪ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ যদিও পুলিশের দাবি এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই, স্থানীয় লোকজন বলছেন ভিন্ন কথা৷

Bangladesh Ausschreitungen Streik
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

শনিবার ভোরে যশোর সদর ও ঝিকরগাছা উপজেলা থেকে এই লাশগুলো উদ্ধার করা হয়৷ একই সাথে ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের৷ পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তিদের তারা চেনেন না৷

যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শনিবার ভোররাতে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের নোঙ্গরপুর এলাকায় গোলাগুলি হচ্ছে ৯৯৯ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশের একাধিক দল সেখানে অভিযান চালায়৷ পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়৷ পরে ঘটনাস্থল থেকে দুই  ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়৷''

‘৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালায়’

This browser does not support the audio element.

একইসাথে ঘটনাস্থল থেকে ২টি ওয়ানশুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ৫টি কার্তুজ, ৫টি ধারালো অস্ত্র, দড়ি, স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷

একই সময় ঝিকরগাছা উপজেলার চাপাতলা মাঠ থেকে আরো দুই জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ সেখানেও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে৷ এই ৪ জনের কারো নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে দাবি আনিসুর রহমানের৷

ঝিকরগাছার ঘটনায় পুলিশের ভাষ্য হল, গ্রামবাসীর মাধ্যমে ডাকাত পড়েছে এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ উপজেলার চাপাতলা মাঠে অভিযান চালায়৷ এ সময় সেখান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে৷ পুলিশের ধারণা, ডাকাতির পণ্য ভাগাভাগি নিয়ে দু'গ্রুপের বিরোধে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে৷

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে যশোরের স্থানীয় এক সাংবাদিক টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে নিহতদের ডাকাত বলেই ধারণা করেছিলাম৷ পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এই ৪ জনের ঘটনার সঙ্গে পুলিশের একটা যোগসূত্র আছে৷ তবে এরা কোন এলাকার মানুষ সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারেনি৷ পরিবারের সদস্যদের পাওয়া গেলে পুরো বিষয়টা আরো পরিষ্কার হওয়া যাবে৷ আমাদের ধারণা, দায় এড়াতে পুলিশ এই কৌশল নিয়ে থাকতে পারে, যাতে তাদের ঘাড়ে কোনো ধরনের দায় না বর্তায়৷ কারণ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের সমালোচনা হয়৷ এই ধরনের ঘটনায় সমালোচনা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশ এই কৌশল নিয়ে থাকতে পারে৷''

‘যশোরে যেটা হল সেটা তাদের আরেক কৌশল’

This browser does not support the audio element.

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘‘এখন আমরা যে প্রবণতা দেখছি সেটা তো আরো ভয়ঙ্কর৷ যে ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের নামে মেরে ফেলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আগে ঘৃণা তৈরি করা হচ্ছে৷ ফলে তার মৃত্যু নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন না তোলে৷ বছর দেড়েক আগে আমরা ঝিনাইদহে দেখলাম একজন ব্যক্তিকে আগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে৷ কয়েকদিন পর ট্রাক চাপায় তার মৃত্যু হল৷ এরপর প্রচার করা হলো, সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে৷ আর যশোরে যেটা হল সেটা তাদের আরেক কৌশল৷ এভাবে নিয়মিত তারা কৌশল বদল করছে৷ যেটা একটা সভ্য দেশে কোনভাবেই চলতে পারে না৷''

এদিকে, বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশে বিদেশে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই৷ দু'দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক রিপোর্টে অভিযোগ করে বলেছে যে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০১৮'-তে বাংলাদেশের মানবাধিকারের কয়েকটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অনেকগুলো গুমের ঘটনা ঘটেছে৷ বিরোধী দলীয় সমর্থক ও সন্দেহভাজন জঙ্গি-উভয়কেই টার্গেট করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশীয় অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ডে ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ যেহেতু দেশটিতে ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচন হতে চলেছে, তাই এই সময় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভিন্নমতকে দমনের প্রচেষ্টাও বন্ধ করতে হবে৷''

‘এতে দেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

৯০টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারা ৬৪৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন তারা তৈরি করেছে৷

বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘কোন সভ্য দেশে এটা চলতে পারে না৷ আমরা বারবার বলছি, তারপরও এটা বন্ধ হচ্ছে না৷ বিষয়টা এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সত্যিকারের কোনো বন্দুকযুদ্ধও মানুষ বিশ্বাস করছে না৷''

ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রেও এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে৷ আমরা সরকারের প্রতি বারবার অনুরোধ করছি, এটা বন্ধ করুন৷ এতে দেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব৷ সেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছে৷ এটা হতে পারে না৷''

 

মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে কি আপনি একমত? মন্তব্য করুন নিচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ