1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিচার বিভাগ সংস্কার করতে না পারলে আগের সিস্টেমেই ফেরত যাবো'

দিল আফরোজ জাহান
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিচার বিভাগ সংস্কারে বিভিন্ন প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। এর সময়োপযোগীতা, বাস্তবায়নে সম্ভাব্য জটিলতা এবং সম্ভবনা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা৷

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত
বিচার বিভাগকে স্বাধীন এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত করার জন্য বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে এ সংক্রান্ত কমিশনছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

ডয়চে ভেলে: বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে, তা কতটা সময়োপযোগী বলে মনে করেন এবং কেন?

মিতি সানজানা: বিচার ব্যবস্থা যে সংস্কারে সুপারিশ বা প্রস্তাবনাগুলো এসেছে, সেটি আমার কাছে মনে হয় খুবই সময় উপযোগী। সেখানে প্রায় ৩০ টি বিষয় – যার মধ্যে রাষ্ট্রপতির একচ্ছত্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ (বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে), সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, শৃঙ্খলা অধস্তন যে আদালত রয়েছে, সেখানেও বিচারক নিয়োগ, বিভিন্ন চাকুরির শর্তাবলী, সুপ্রিম কোর্টে আলাদা সচিবালয় স্থাপন, আদালত ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের স্থায়ী অফিস স্থাপন, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা গঠন এবং বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘব করা, দুর্নীতি বন্ধে নানা ধরনের কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কারণ, আমাদের যে আদালতগুলো রয়েছে, সেখানে যে বিচারপ্রার্থীরা যান, তারা নানান ধরনের দীর্ঘসূত্রতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রাজনীতিকরনের যে প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটিরও কিন্তু ভিকটিম হয়ে থাকেন  বিচারপ্রার্থীরা। আমার মনে হয়, এই প্রস্তাবনাতে অনেক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো আসলে আমি জানি না কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, কিন্তু আমি মনে করি এটা খুবই সময়োপযোগী।

বিচারিক প্রক্রিয়ার দক্ষতা উন্নত করতে যে সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা কি যথাযথ মনে হয়?

যে প্রস্তাবনাগুলো রয়েছে, তার ভেতরে অনেক ‘কোর' জায়গাতে হাত দেয়া হয়েছে। যেমন, এখানে আইন শিক্ষা সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, আইন শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন, দেখভালের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্থায়ী এবং স্বতন্ত্র আইন শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হবে। এখানে আইন পেশার বিভিন্ন সংস্কারের লক্ষ্যে আসলে প্রফেশনাল কন্ডাক্ট, প্রফেশনাল এথিক্স – এই ব্যবস্থাগুলো যুগোপযোগী করার কথা বলা রয়েছে। এখানে, বিকেন্দ্রীকরণের যে কথা বলা হচ্ছে – হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, সেটি মনে হয় অত্যন্ত প্রয়োজন। কেননা, সারা বাংলাদেশ থেকে যারা বিচারপ্রার্থী রয়েছেন, তাদের কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীর হাইকোর্টে আসতে হয় বিভিন্ন মামলা করতে। যে প্রস্তাবনা রয়েছে, সেখানে কিন্তু রাজধানীর প্রতিটি বিভাগীয় যে সদর রয়েছে, সেখানে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার কথা বলা রয়েছে। এবং এখানে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। আমার মনে হয়, আসলেই যদি  এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, তাহলে সেটি বিচার ব্যবস্থা এবং পুরো বিচার ব্যবস্থার প্রক্রিয়াটিকে আরো সমৃদ্ধ করবে। 

বাংলাদেশে বিচারিক সংস্কার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধাগুলো কী কী?

বিচারকরা যখন যে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি তারা আনুগত্য প্রদর্শন করেন বা  তারা একই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন, তখন সেটি কিন্তু বিচার ব্যবস্থা এবং সাধারণ নাগরিক যারা রয়েছেন, তাদের স্বচ্ছ বিচারপ্রাপ্তিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন যে, দেশে যখন যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এসেছেন, কোনো রাজনৈতিক সরকার কখনোই চায়নি যে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক। সব সরকার তাদের মন-মতোন বিচারক চেয়েছেন এবং তাদের পছন্দের মতো তারা বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন। এবং তারা সব সময় চেয়েছেন সেই বিচারক সেভাবেই কাজ করবে। কাজেই বলা যায় যে, রাজনীতিবিদরা যখন বিচার বিভাগকে নিজেদের মতো করে তারা ব্যবহার করতে চান। সেটা সব সরকারই করেছে। সেই হস্তক্ষেপটি যদি থাকে, সেটি কিন্তু অবশ্যই স্বাধীনভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

সুপারিশগুলো আমার কাছে মনে হয় খুবই সময়োপযোগী: ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

This browser does not support the audio element.

১৯৯৪ সালে একটি রিট পিটিশন করেছিলেন তৎকালীন জেলাজজ এবং জুডিশিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাজদার হোসেন। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশন থেকে যার চুড়ান্ত রায় হয়েছিল ১৯৯৯ সালে এবং প্রায় আট বছর পর ২০০৭ সালে মূল প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়েছিল। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার প্রধান যে উদ্দেশ্য ছিল, সেটির ফল কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত পাচ্ছি না। এবং আমরা সব সময় দেখে আসছি যে, এই পৃথকীকরণ কাগজে-কলমে হওয়া সত্ত্বেও, বিচার বিভাগ কখনোই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। আমার কাছে মনে হয় যে, এই রাজনৈতিক যে হস্তক্ষেপ, সেটি আসলে বিচার বিভাগের স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা।...এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমি মনে করি, যেহেতু একটি অরাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আছে এবং সেই থাকা অবস্থায় তারা যদি এই বাস্তবায়নগুলো করতে পারতেন আর সেক্ষেত্রে সেটি আমাদের জন্য খুবই ভালো হতো। আমার মনে হয় যে, যেহেতু রাজনৈতিক দল যারা রয়েছেন, তারাও অন্তর্বর্তী-সরকারকে সহায়তা করতে চাচ্ছেন, তারা চাচ্ছেন অন্তর্বর্তী-সরকার যাতে কোনো অবস্থাতেই ব্যর্থ না হন। কাজেই তাদের সাথে আসলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই রাজনীতিকরণ, সেটি কিন্তু আইনজীবীরা কখনোই চান না। কারণ, এটা একটা পেশাজীবী সংগঠন, আমাদের আইনজীবী সমিতি যারা রয়েছেন, আর সেখানে যখন নির্বাচনগুলো হয়, সেই নির্বাচনগুলোতে একটি বড় রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। আমি মনে করি, এই বিচারিক প্রক্রিয়াটাকে, সংস্কারগুলোকে আমি যখন বাস্তবায়ন করবো, সেখানে কিছু কিছু জায়গায় আমাকে সংবিধানে হাত দিতে হবে এবং এইখানে সাংবাধানিক যে সংস্কার সেটি মূল বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, সংবিধান আসলে সংস্কার করতে গেলে, সেটি কিন্তু আসলে একটি রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমেই হতে হবে। কিন্তু এখন এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যা করতে পারে – প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন আইন করেত পারেন, যেই আইনগুলো হয়তো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে তারা যদি সেগুলো অ্যাডাপ্ট করে নেয়, তাহলে তো সেগুলো আইন হয়ে গেল। কিন্তু সাংবিধানিক সংস্কার করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাঁধা থেকে যাবে। আমার মনে হয়, একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঐকমত্যে পৌঁছালেও, সাংবিধানিক যে জটিলতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র একটি ইলেক্টেড গভর্নমেন্টের পক্ষেই করা সম্ভব, সেই জায়গাতে একটি বড় বাঁধা আসতে পারে।...এখানে সংবিধানের যে বিষয়গুলো রয়েছে, বিচারপতি কিভাবে নিয়োগ দেয়া হবে, কিভাবে অপসারণ করা হবে – এই বিষয়গুলোতে যাতে আইন মন্ত্রণালয় বা নির্বাহী বিভাগের একচ্ছত্র আধিপত্য না থাকে, সেই বিষয়গুলো এসে যায়। আমার কাছে মনে হয় যে, সংবিধানের এই বিষয়গুলোতে যেখানে সাংবিধানিক পরিবর্তন দরকার, সারা দেশের সামগ্রিক মানুষের স্বার্থে, সকলের স্বার্থে, এই বিষয়গুলোতে যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছান এবং সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেন, সেক্ষত্রে হয়তো পরবর্তীতে ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট আসবেন, তাহলে তারা যদি এই বিষয়গুলোকে অ্য্যাডাপ্ট এবং বাস্তবায়ন করেন, সেক্ষেত্রে তো আসলে এই জটিলতাগুলো থাকে না। তাহলে আসলে এই বিষয়টি ওভারকাম করা যেতে পারে৷ কিন্তু তার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

কেন?

ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে অন্য দলগুলো, কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসার পর তারা যদি মনে করে, তারা তাদের মতো করে সাজাবে। তারা বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে, যেমনটা হয়ে এসেছে - প্রত্যকটা রাজনৈতিক দল, তারা যেভাবে করে, আসলে হস্তক্ষেপ করে এসেছে এখন পর্যন্ত বিচার বিভাগে কখনোই সেটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে পারেননি। পরবর্তী ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট এসে যদি মনে করেন যে, না, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে, ক্ষমতায় থাকার কারণে তারা বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, সেক্ষেত্রে আসলে এই সংস্কারগুলো তেমন ফ্রুটফুল (ফলপ্রসূ) হবে না৷

বিচারিক সংস্কারের জন্য জনসচেতনতা এবং সমর্থন কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে?

এই যে বিচারকদের যেমন রাজনৈতিক বিশেষ দলগুলোর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শণ। এই বিষয়গুলো সাধারণ জনগণের ভিতরে এতটাই তাদের মস্তিষ্কের মধ্যে গেঁথে আছে যে, যখন একজন বিচারপ্রার্থী আইনজীবির কাছে যান, অনেক ক্ষেত্রেই তারা জিজ্ঞাসা করেন যে, এই যে মামলাটি তিনি করছেন, তার আউটকাম কী হতে পারে? অর্থাৎ, তার মানে, তিনি এক ধরনের গ্যারান্টি চাচ্ছেন আইনজীবীর কারণে। যেহেতু আমাদের বিচার ব্যবস্থা এমন যে, সেখানে এমন ধরনের প্র্যাক্টিস হয়ে এসেছে – যেখানে হয়তো তারা বিচারকের সাথে সম্পর্ক, বিচারকের উপরে কতটুকু রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা যায়...সাধারণ যে বিচারপ্রার্থী, তাদের কিন্তু এই ধরনেরই একটা কনসেপ্ট সব সময় রয়ে গিয়েছে।... তো এই ধারণাটি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে, আর যখনই এই রাজনীতিকরণ থেকে বের হয়ে আসবে, পলিটিসাইজ করা বন্ধ হবে, এই যে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে যে, বিচার বিভাগের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করা হবে না। রাজনৈতিকদলগুলোকে কিন্তু এটি নিশ্চত করতে হবে। এবং তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসবেন। বিচার বিভাগ সাধারণ নাগরিকের জন্য সেটি শেষ আশ্রয়স্থল। তো সেখানে রাজনৈতিকদলগুলোকে জনগণের ম্যান্ডেট পেতে হলে, এটিকে তাদের নিশ্চত করতে হবে যে, তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবেন না।

হাইকোর্ট বিভাগে ২০০৫ সালের একটি রায় রয়েছে, যেখানে বলা হযেছে যে, আদালতে প্রবেশদ্বার চত্বরের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক জমায়েত মিছিল, ঘেরাও এ ধরনের কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে। আমরা কিন্তু দেখি যে, এ ধরনের কর্মসূচি সব সময় হয়েই আসছে। এই জিনিসগুলোকে বন্ধ করতে হবে। আইনজীবী সমিতির যে, পেশাজীবী কল্যাণের উদ্দেশ্য, অরাজনৈতিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং সমিতিগুলোর নির্বাচনে দলীয় প্যানেলপ্রথা, যেগুলো রয়েছে, সেগুলো বন্ধ করা। এ বিষয়ে কিন্তু কমিশন সুপারিশ করেছে এবং বিচারকদের পেশাগত ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শণকে অসদ আচরণ হিসেবে ধরে, এটিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ কিন্তু এখানে রয়েছে। এবং আদালত প্রাঙ্গনে আইনজীবীরা যাতে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে, মানে পেশাগত অসদাচরণ হিসেবে সেটিকে দেখানোর বা ধরার সুপারিশ এখানে করা হয়েছে। এবং সেই অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমি মনে করি যে, এই বিষয়গুলো যদি সত্যি সত্যি আইন আকারে সেগুলোকে...আইন তো করতে পারেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে রয়েছেন, তারা তো আসলে আইন করতে পারেন। সেই আইনগুলো যদি তারা আসলে করে যেতে পারেন, পরবর্তীতে কোনো রাজনৈতিক সরকার এসে যদি সেগুলোকে রিজেক্ট করে বা সেই আইনগুলোকে গ্রহণ না করে বাতিল করে দেয়, তখন কিন্তু জনগণ ভালো-মন্দর পার্থক্যটি বুঝে যাবে। এবং তারা জনগণের ম্যান্ডেট হারাবে। কাজেই আমি মনে করি, এ সরকার যতটুকু সম্ভব আসলে সংস্কারের প্রস্তাবনা প্র্যাক্টিকালি যতটুকু সম্ভব, সেই কাজগুলো কিন্তু উনারা করে যেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে কিন্তু তারা অবশ্যই জনসমর্থন পাবেন আমি মনে করি। এবং বিচারপ্রার্থী এবং সাধারণ নাগরিক যারা রয়েছেন, তাদের একটি ব্যাপক সমর্থন তারা পেতে পারেন।

বিচারিক সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে কী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে?

আমার মনে হয়, যতগুলো আইন আসলে করা সম্ভব বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার জন্য, পৃথকীকরনের জন্য এবং প্র্যাক্টিক্যালি এটিকে এনফোর্স করার জন্য সেই কাজগুলো তারা করবেন।...এখানে দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নির্দেশের জন্য অবশ্যই সেটি ঐকমত্য গঠন করা, জনমত গঠন করা – যাতে জনগণ সেই বিষয়ে তারা যখন সচেতন হবেন, পরবর্তীতে কোনো পরবর্তীতে ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট আসলে তারি কিন্তু তাদের সেই দাবিটা তুলতে পারবেন। কাজেই এখানে যেটি তারা করতে পারেন জনসমর্থনের মাধ্যমে এবং সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের মাধ্যমে যেইগুলো আসলে আইন করা সম্ভব, সেইগুলো আইনের রূপ দেয়া, তার মাধ্যমে সংস্কার যে প্রক্রিয়াগুলো সেগুলোকে যতদূর সম্ভব সামনে এগিয়ে নেয়া । 

বিচারিক সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে, এর সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে?

সম্ভাব্য পরিণতি যা আছে, তার চেয়ে তো খারাপ হওয়ার তেমন কিছু নেই। আমরা অনেক খারাপের মধ্য দিয়ে এসেছি। সম্ভাব্য পরিণতি যা হবে – রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সেখানে হবে, এই যে দীর্ঘদিন যাবত যারা বিচারপ্রার্থী এই যে দীর্ঘসূত্রতার ফলাফল তারা ভোগ করবে। আর সেই সাথে সাথে বিচার ব্যাহত হবে।... এই যে বিচার বিভাগের রাজনৈতিক যে হস্তক্ষেপ অনেক বছর ধরেই চলে এসেছে। যখন যেই রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা বিচার বিভাগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য, ক্ষমতা দখলের জন্য, ক্ষমতায় থাকার জন্য বিচারকে ব্যবহার করেছেন। যে যখন ক্ষমতায় ছিলেন, কেউ কম করেছেন, কেউ বেশি করেছেন, কেউ একশ করেছেন, কেউ ষাট করেছেন।

এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা সংস্কার না করতে পারি, আমরা যেখানে ছিলাম, আমরা সেখানেই থাকবো। সামনের দিকে আমরা আর এগিয়ে যেতে পারবো না এবং বিচার বিভাগ হলো প্রতিটি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, সেটি তার একটি মৌলিক অধিকার। তো সেই অধিকারটি যেভাবে ক্ষুণ্ণ হয়ে এসেছে, সেভাবে আগামীতে ক্ষুণ্ণ হবে। কাজেই আমি মনে করি যে, সংস্কার প্রক্রিয়াটিকে যতদূর সম্ভব সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।..এটি আসলে শুধু থিওরেটিক্যালি থাকলে হবে না, প্র্যাক্টিক্যালি দেশের জনগণকে কিন্তু এর সুফল ভোগ করতে হবে। এবং এটি সবচেয়ে বড়। আইনের শাসন হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি বড় কম্পোর্টনেন্ট যেটার মাধ্যমে আসলে প্রত্যকটি মানুষের ন্যায় বিচার সুসংহত হয়। কাজেই সেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে অবশ্যই স্বাধীন করতে হবে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে হবে। এবং এই সংস্কার যদি আমরা করতে না পারি, তাহলে আগের পুরানো যে সিস্টেম সেটিতে আমরা ফেরত যাবো।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ