1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিচার বিভাগ স্বাধীনের পথে যাত্রা

২ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে রোববার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি হয়েছে৷ এর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পথ খোলায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনতার পথে যাত্রা শুরু করলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷

সচিবালায় (প্রতীকী ছবি)
বাংলাদেশে রোববার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি হয়েছেছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

তবে তারা এও বলছেন, বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন হলো সেটা দেখার জন্য কাজের ক্ষেত্রে আরো অপেক্ষা করতে হবে৷ 

সচিবালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রথম বৈঠক ৭ ডিসেম্বর রোববার অনুষ্ঠিত হবে৷

সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয়ের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার গেজেট প্রকাশ করলেও পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে এটা অনুমোদন করতে হবে৷ নয়তো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে যে আশা তৈরি হয়েছে তা মুখ খুবড়ে পড়বে৷ 

বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে ১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার এসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা মামলা করেছিলেন৷ ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেন৷ সেই রায়ের ২৬ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় স্থাপন করা হলো৷

মাসদার হোসেন মঙ্গলবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন আর প্রশাসন বা সরকার বিচারকদের চাপ দিয়ে বিচার প্রভাবিত করতে পারবে না৷ জামিন দিতে বাধ্য করা, রায় পাল্টে দিতে বাধ্য করা, বিচার প্রভাবিত করা- এগুলো আর সম্ভব হবে না৷ কারণ সরকারের হাতে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শাস্তি - এগুলো এখন আর কিছুই নেই৷ পুরোটাই দেখবে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়, প্রধান বিচারপতি৷ কিন্তু কোনো বিচারক যদি অসৎ হয় সেটা আলাদা কথা৷ আগে দেখা গেছে সরকারের কথায় জামিন না দিলে বিচারককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, বদলি করে দেয়া হয়েছে৷’’

‘মানসিকতার পরিবর্তন না হলে হবে না৷’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘তবে এখনো একটি বিষয় বাকি আছে৷ যারা জুডিশিয়াল সার্ভিসে আছেন, কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়, শ্রম আদালত বা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে কাজ করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে থাকবে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তাদেরও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের অধীনে আনা জরুরি৷’’

গেজেটে বলা হয়েছে, শুধু বিচারকাজে নিয়োজিত যারা আছেন, সেই বিচারকদের বিষয়গুলো সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের হাতে চলে গেছে৷ কিন্তু বিচার বিভাগের যারা অন্য কোনো জায়গায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন, যেমন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, আইন কমিশনের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়গুলো আইন মন্ত্রণালয়ের হাতেই রয়ে গেছে৷

এক প্রশ্নের জবাবে মাসদার হোসেন বলেন, ‘‘এখন বিচারপতি ও বিচারকদের জবাবদিহিতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে৷ আর প্রধান বিচারপতির জবাবদিহিতা রাষ্ট্রপতির কাছে৷ তারপরও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ কিন্তু এক দিনে তো আর সব ঠিক হয়ে যাবে না৷ মানসিকতার পরিবর্তন বড় ব্যাপার৷ সেটা পরিবর্তন না হলে তো হবে না৷’’

প্রধান বিচারপতির নিয়োগ রাষ্ট্রপতির হাতেই আছে৷ রাষ্ট্রপতি এক্ষেত্রে কাজ করেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে৷ তাহলে প্রধান বিচারপতির নিয়োগ কীভাবে রাজনীতিমুক্ত হবে? এই প্রশ্নের জবাবে মাসদার হোসেন বলেন, ‘‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনে আমরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের কথা বলেছি৷ আর একবারে শুরুতে পরীক্ষার মাধ্যমে৷ এরইমধ্যে পরীক্ষার মাধ্যমে ২৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ কমিটি৷ কিন্তু নিয়োগের আগে তাদের নাম পরিচয় পাবলিক করার জন্য বলেছিলাম৷ সেটা করা হয়নি৷ ওটার দরকার ছিলো, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা জানা যেত৷ এখন গুরুতর কোনো অভিযোগ না থাকলে সুপ্রিম কের্টের আপিল বিভাগের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতিই হবেন প্রধান বিচারপতি৷ ফলে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিলেও তিনি ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিতে পারবেন না৷ এখন দেখার বিষয় সেটা মানা হয় কীনা৷’’ 

‘এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ’

This browser does not support the audio element.

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচার ব্যবস্থা সংক্রান্ত যে কমিশন হয় সেই কমিশনের সদস্য মাসদার হোসেন৷

‘প্রশংসনীয় উদ্যোগ’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন তিন হাজার ডলার, এটা সাত হাজার ডলার কবে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন৷ কিন্তু এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ৷ এবং নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ৷ তবে পুরোপুরি স্বাধীন করতে হলে অনেকগুলো প্রশাসনিক রদবদল করতে হবে৷ এটা সময়সাপেক্ষ এবং আমি আশা করবো আগামী সরকার এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার পথে এগিয়ে যাবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আপিলের বিধানই বিচারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পদ্ধতি৷ আপনার বিচারিক আদালতের রায় পছন্দ না হলে হাইকোর্টে যেতে পারেন৷ সেটা পছন্দ না হলে আপিল বিভাগে যেতে পারেন৷ সেটা পছন্দ না হলে রিভিউ করতে পারেন৷ বাংলাদেশের আর কোনো বিভাগের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে এই চারবার আপিলের সুযোগ কি আছে?’’

‘‘আরেকটি বিষয় হলো উন্মুক্ত আদালত৷ সবার সামনে বিচার হয়৷ আপনি চাকরির পরীক্ষা দিতে গেলে যারা পরীক্ষা নেন তার বাইরে কেউ থাকে? তাই বুঝতে হবে চারবার আপিলের বিধান আর উন্মুক্ত বিচারই বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে,’’ বলে মনে করেন ড. শাহদীন মালিক৷

‘আর্থিকভাবে কতটা স্বাধীন হয় তাও দেখার আছে’

আর্থিক ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় এখনো পুরোপুরি স্বাধীন নয়৷ কোনো প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় যদি ৫০ কোটি টাকার কম হয় সে ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এটা অনুমোদন করবেন৷ ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে এটা পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকের সভায় উপস্থাপন করবেন প্রধান বিচারপতি৷ সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতের বাজেট অনুমোদন করা হবে৷ তবে এই বাজেট ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা উচ্চ আদালতের থাকবে৷

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয় স্বাধীন বিচার বিভাগের পথে আরো এক ধাপ অগ্রগতি৷ এটা সাধুবাদ পাওয়ার মতো কাজ৷ ‘‘তবে দেখতে হবে অধস্তন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, শৃঙ্খলা, বেতন-ভাতা- এগুলো তারা এখন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেন কী না৷ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এখন তাদের এটা প্রমাণ করতে হবে,’’ বলেন তিনি৷

ব্যারিস্টার শফিক বলেন, ‘‘বিচার বিভাগ স্বাধীন করে দেয়া হলো৷ এখন যদি মানসিকভাবে স্বাধীন না হয়, অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয় তাহলে তো আর স্বাধীন হবে না৷ সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে৷ আর্থিকভাবে কতটা স্বাধীন হয় সেটাও দেখার আছে৷ রাষ্ট্রের তিনটি স্বাধীন বিভাগের মধ্যে এখন একটি হলো বিচার বিভাগ৷ এর প্রধান হলেন প্রধান বিচারপতি৷ সেটাই প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আসলে প্রধান বিচারপতির জবাবদিহিতা এখন রাষ্ট্রপতির কাছে৷ আমার মনে হয় না সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে৷’’

সাবেক বিচারক ড. শাহজাহান সাজু বলেন, ‘‘আগে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা সব আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিলো৷ এখন সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে এলো৷ এতে বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পথ খুলে গেল৷ কিন্তু মানুষ তো রাগ, অনুরাগ, বিরাগ বা আবেগের ঊর্ধ্বে নয়, সেটাও আমাদের মনে রাখতে হবে৷ সেটা দেখার জন্য এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আছে৷ তারা কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে দেখবে৷ আর প্রধান বিচারপতির বাপারে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করা যাবে৷ রাষ্ট্রপতি সেটাকে তদন্তযোগ্য মনে করলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠাবেন৷ তবে সেই কাউন্সিলে প্রধান বিচারপতি থাকবেন না, যেহেতু তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ