ইয়েমেনের আদেন শহরে প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস ঘিরে ফেলেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা৷ সৌদি সমর্থনপুষ্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ বিন দাহার এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য সৌদি আরবে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয় আদেনে৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট সাউদার্ন ট্র্যানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) সরকারকে পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়েছিল৷ সেই সময়সীমা পার হওয়ার পর শহরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে এসটিসি৷ তাতে বাধা দেয়ার পরই শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ৷ গত তিন দিনের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৬ জন মারা গেছে৷ মধ্য আদেনে প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস ঘিরে ফেলার পর এসটিসির যোদ্ধাদের উল্লাস করতে দেখা গেছে৷
এদিকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আদেনে সব রকমের মানবিক সাহায্য কার্যক্রম বন্ধ করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন৷ সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট ইতিমধ্যে আদেনে সংঘর্ষে লিপ্ত দু'পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ জোটের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আদেনে স্থিতি এবং নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার, জোট তা করবে৷'' ইয়েমেন সংকটের শুরু থেকেই সৌদি আরব নিয়ন্ত্রিত জোটকে সমর্থন জানিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র দু'পক্ষের প্রতি রক্তপাত বৃদ্ধি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে৷
ইয়েমেনে সংকট আরো ঘনাচ্ছে
এক মারাত্মক গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে ইয়েমেন একটির পর একটি সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে৷ কখনো অনশন ও দুর্ভিক্ষ, কখনো কলেরা মহামারী৷ সংঘাতের দাম দিচ্ছেন দেশের বেসামরিক জনগণ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
বিপর্যয়ের মূল কারণ
জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধই হলো ইয়েমেনে একটির পর একটি সংকটের মূল কারণ৷ ২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করার অভিযান শুরু করার পর থেকে দশ হাজারের বেশি মানুষ এই সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন৷ ২০১৫ সালের মার্চ মাসে একটি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নির্মম অভিযান শুরু করে, যা বেসামরিক জনগণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ অভিযান আন্তর্জাতিক ভাবে সমালোচিতও হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
যারা অনাহারে মরছে
যুদ্ধের কারণে বেসামরিক নাগরিকদের একটি বড় অংশের কাছে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না৷ দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷ অন্তত ২২ লাখ শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে৷ যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীরা যাতে ত্রাণসাহায্য প্রেরণের সুযোগ দেয়, সেজন্য জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ সৃষ্টি করতে বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
বাস্তুহারা
যুদ্ধে ২২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন, তাদের মধ্যে মুহাম্মাশীনের মতো প্রান্তিক গোষ্ঠীরা রয়েছে৷ এই সংখ্যালঘু উপজাতি গোষ্ঠী আদতে আফ্রিকা থেকে ইয়েমেনে আসে৷ ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ সত্ত্বেও সোমালিয়া থেকে বহু মানুষ ইয়েমেনে পলায়ন করছেন, যার ফলে ইয়েমেনে ২৫৫,০০০-এর বেশি সোমালি উদ্বাস্তু অবস্থান করছেন বলে ইউএনএইচসিআর-এর বিবৃতিতে প্রকাশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
কলেরা
চলতি অক্টোবর মাসে ইয়েমেনে সম্ভাব্য কলেরা রোগের ঘটনা ৭৫০,০০০ ছাড়িয়ে যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন জানিয়েছে৷ এ বছর ইয়েমেনে অন্তত ২,১৩৫ জন মানুষ কলেরায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি সাবধান করে দিয়েছে যে, বছর শেষ হবার আগে ইয়েমেনে কলেরার ঘটনা দশ লাখে পৌঁছাতে পারে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূল্য দিচ্ছে যারা
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ইয়েমেনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গণ বলে গণ্য করা হয়৷আরব উপদ্বীপে ইয়েমেনই আল-কায়েদার গতিবিধির মূল ঘাঁটি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে আল-কায়েদা নেতাদের বিরুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার করে থাকে৷ এ ধরণের আক্রমণে অনেক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Arhab
অঙ্গহীন শিশু
সংঘাতে জর্জর দেশে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন৷ ইয়েমেনে এক কোটি দশ লাখের বেশি শিশুর মানবিক সাহায্য প্রয়োজন বলে জাতিসংঘের অনুমান৷ চলতি অক্টোবর মাসে সংস্থাটি বলেছে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ‘‘প্রায় ভেঙে পড়তে চলেছে,’’ অপরদিকে শিশুরা ‘‘অপুষ্টি, পেট খারাপ বা শ্বাসনলীর সংক্রমণের মতো প্রতিরোধ্য কারণে’’ প্রাণ হারাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
শান্তির কোনো লক্ষণ নেই
জাতিসংঘের সমর্থিত শান্তি আলাপ-আলোচনার একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ সৌদি আরব ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি-র আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সরকারকে মদত দিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করেছে৷ অপরদিকে হুথি বিদ্রোহীরা একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন দাবি করেছে৷ কিন্তু কোনো পক্ষই দৃশ্যত আপোশ করতে সম্মত নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Mohammed
7 ছবি1 | 7
ইয়েমেনে সংকটের সূত্রপাত ২০১৪ সালে৷ ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতিরা রাজধানী সানা দখল করে নিলে প্রেসিডেন্ট আবেদ রাব্বো মানসুর হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন৷ আদেনকে ডি-ফ্যাক্টো রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি হাদির পাশে দাঁড়ায় সৌদি আরব৷ ২০১৫ সালে সৌদি সমর্থনপুষ্ট জোট বাহিনী ইয়েমেনে সামরিক অভিযান শুরু করে৷
চার বছর ধরে চলমান যুদ্ধের কারণেইয়েমেনে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার, বিশেষ করে সে দেশের নারী ও শিশুদের সংকটাপন্ন বর্তমান নিয়ে উদ্বেগ এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেছে৷
কিন্তু যুদ্ধ থামেনি৷ বরং সম্প্রতি সংকট নতুন মোড় নিয়েছে৷ গত মাসে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ'র বাহিনীর ঐক্যে ফাটল ধরে৷ হুতিদের আধিপত্যে হতাশ সালেহ সৌদি নিয়ন্ত্রিত জোটের দিকে ঝুঁকে পড়েন৷ এরপরই সালেহকে হত্যা এবং তাঁর অনেক অনুসারীকে আটক করা হয়৷