বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে আর সময় আছে মাত্র একমাস৷ কিন্তু এর প্রস্তুতি এখনো দৃশ্যমান নয়৷ আর এই প্রেক্ষাপটে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম শুরু করেছেন ফটো ক্যাম্পেইন৷
বিজ্ঞাপন
দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আলোকচিত্রী, অ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলমের ফটো ক্যাম্পেইনের শিরোনাম হচ্ছে ‘‘মেয়র সাহেব কবে?''৷ ২০ ফুট বাই ৭ ফুট আকৃতির একটি ব্যানারে শহিদুল আলম তাঁর তোলা কিছু ছবি প্রিন্ট করে এই ক্যাম্পেইন শুরু করেন ১১ আগস্ট থেকে৷ তিনি ব্যানারটি টানিয়ে দিয়েছেন হাতিরঝিলে ঠিক বিজিএমইএ ভবনের সামনে৷ ব্যানারটির সামনের সড়কেই সেদিন সকালে শহিদুল আলম তাঁর আরেক প্রতিষ্ঠান পাঠশালার শিক্ষার্থীদের একটি ক্লাশ নেন৷
Sahidul.mp3 - MP3-Stereo
কেন এই ফটো ক্যাম্পেইন জানতে চাইলে শহিদুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট ৬ মাসের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলেছে৷ কিন্তু কোর্টের সেই আদেশকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে৷ এভাবে আদালতকে যে অবমাননা করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ করার দরকার আছে৷
ঢাকার এক মেয়রের বক্তব্য উল্লেখ করে আলোচিত এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘‘মেয়র সাহেব বলছেন জলাধার দখল করে অবৈধ স্থাপনা করায় তিনি রাজধানীতে বন্যা বা জলাবদ্ধতার সমাধান করতে পারছেন না৷ হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন একটি অন্যতম অবৈধ স্থাপনা৷
‘‘মেয়র সাহেব (আনিসুল হক) নিজে বিজিএমইএ-র সভাপতি ছিলেন৷ প্রতিদিন তিনি অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কারচ্ছেন৷ কিন্তু বিজিএমই ভবন উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না৷ তাহলে আইন একেকজনের জন্য একেকরকম কিনা,'' প্রশ্ন তোলেন আলম৷
আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রতিবাদ কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন নাগরিক৷ নাগরিক হিসেবেই প্রতিবাদ করছি৷ আমার মনে হয় এখন আমাদের নাগরিকদের আরো জোড়াল প্রতিবাদ করা উচিত৷ কেউ হয়তো ভয়ে প্রতিবাদ করছেন না৷ কেউ হয়তো ক্ষমতার কাছে থাকার সুবিধা নিতে প্রতিবাদ করছেন না, সেটা আমরা বলতে পারবনা৷ কিন্তু প্রতিবাদটা হওয়া প্রয়োজন৷''
প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ৷ এরপর বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে তিন বছর সময় চাইলে আদালত ৬ মাস সময় দেন৷ আদালত ভবনটি বিজিএমইএ-কে নিজ খরচে ভাঙতে বলেন৷ কিন্তু আদেশের পর পাঁচ মাস পর হয়ে গেলেও ভাঙার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়৷ এই বিষয়ে জানার জন্য বিজিএমই সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি৷ তবে দু'দিন আগে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘এটি আমরা ভাঙবো কেন? আমরা উত্তরায় ভবন বানাচ্ছি সেটা শেষ হলে সেখানে চলে যাবো৷''
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে দৃকের শহিদুল আলমের একক প্রদর্শনী ‘‘ক্রসফায়ারের'' মাধ্যমে ‘‘আর নয়'' ক্যাম্পেইনের শুরু হয়৷ এরপর কল্পনা চাকমা গুম, তাজরিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, রানা প্লাজা, ট্যাম্পাকোসহ আর অনেক তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অকাল মত্যু, দৃকের কর্মী ইরফানুল ইসলামসহ দেশজুড়ে গুম-খুন-হত্য বিরুদ্ধে দৃক একই শিরোনামে প্রচারণা চালায়৷ এরই ধারাবাহিকতায় ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স' ভাঙার দাবিতে দৃকের ‘মেয়র সাহেব কবে?'- শিরোনামে ফটো ক্যাম্পেইন এখন চলছে৷
ঢাকায় জলাবদ্ধতার ১২ কারণ
দিনে দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতার চিত্র৷ ঘণ্টা প্রতি ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই এই শহরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যায়৷ বর্ষায় পরিস্থিতি হয়ে ওঠে ভয়াবহ৷ ঢাকায় জলাবদ্ধতার বারো কারণ নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
অপরিকল্পিত নগরায়ন
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মহানগরীতে এখন প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস করছেন৷ এই শহরের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ নানা অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে৷ ফলে শহরের বেশিরভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা
ঢাকা শহরের অনেক এলাকাতেই এখনো ময়লা ফেলা হয় খোলা জায়গায়৷ এসব ময়লা আবর্জনা, বিশেষ করে কঠিন বর্জ্যের একটা অংশ সরাসরি ড্রেনে গিয়ে প্রবাহ বন্ধ করে দেয়৷ ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় রাস্তাঘাটে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষায় খোড়াখুড়ি
ঢাকা শহরের সড়কগুলোতে খোড়াখুড়ির মহোৎসব শুরু হয় বর্ষা মৌসুমের ঠিক আগে থেকে৷ পুরো বর্ষা মৌসুম ধরেই চলে এসব খোড়াখুড়ি৷ সামান্য বৃষ্টিতেই তাই জলাব্ধতার সৃষ্টি হয় শহরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদী ভরাট
ঢাকা শহরের চারপাশে অবস্থিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতালক্ষ্যা প্রভৃতি নদীগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট করে ফেলেছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা৷ আর তাই বিশাল জনসংখ্যার এ শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
খাল দখল
ঢাকা নগরীর ৬৫টি খাল এক সময়ে এ মহানগরীর পানি নিষ্কাশনে বিশেষ ভূমিকা রাখত৷ কিন্তু রাজধানীর এই খালগুলো এখন খুঁজে পাওয়াও কঠিন৷ বেশিরভাগই চলে গেছে দখলদারদের হাতে৷ অনেকগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে৷ যে দু’য়েকটি টিকে আছে সেগুলোও দখলে জর্জরিত৷
ছবি: DW/M. Mamun
জলাশয় ভরাট
ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট করে আবাসান ব্যবস্থা গড়ে তোলায় বড় এই শহরের পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুড়িগঙ্গা দূষণ আর দখল
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী দখল আর দূষণে জর্জরিত৷ দখলে এ নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্থ হয়েছে আর দূষণে নদীর তলদেশে নানান বর্জ্য্ জমে এর গভীরতা কমিয়েছে৷ ফলে পানির প্রবাহ বাড়লেই তা উপচে পড়ে৷
ছবি: Reuters/M. P Hossain
অপরিকল্পিত বক্স কালভার্ট
রাজধানীর জলাবদ্ধতা রোধে ঢাকা ওয়াসা বিভিন্ন সময়ে যেসব বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেছে, তার বেশিরভাগই অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত৷ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তৈরি এসব বক্স কালভার্ট প্রয়োজনের তুলনায় সরু হওয়ায় বৃষ্টির পানি অপসারণে তেমন কাজে আসে না৷ অনেক ক্ষেত্রে এসব কালভার্টে অপচনশীল কঠিন বর্জ্য আটকে গিয়ে পানি নির্গমন পথও বন্ধ হয়ে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সমন্বয়হীন সংস্কার কাজ
ঢাকা শহরে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজে কোনো সমন্বয় না থাকায় সারা বছরই সড়ক খোড়াখুড়ি চলতেই থাকে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ওয়াসা স্যুয়ারেজ নির্মাণের জন্য একটি সড়ক খোড়া হলো, সে কাজ শেষ হতে না হতেই আবার খোড়াখুড়ি শুরু করল গ্যাস কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগ৷ ফলে সারা বছর সড়কগুলোতে এ ধরনের কাজ চলায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
পলিথিনের অবাধ ব্যবহার
ঢাকা শহরে চলছে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার৷ পলিথিন ব্যবহার না করার আইন থাকলেও তার সামান্যটুকুও মানা হয় না৷ ফলে দুই কোটি মানুষের এই শহরে প্রতিদিন যে বর্জ্য তৈরি হয় তার অধিকাংশজুড়েই থাকে পলিথিন৷ এসব পলিথিন পানি নিষ্কাশনের পথগুলো বন্ধ করে দেয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ড্রেনের ময়লা ড্রেনে
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ড্রেন থেকে ময়লা তুলে সেগুলো দিনের পর দিন ড্রেনের পাশেই ফেলে রাখা হয়৷ ফলে বৃষ্টি হলেই সে ময়লার পুনরায় ঠিকানা হয় ড্রেন৷ সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন আতঙ্ক ফ্লাইওভার নির্মাণ
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ফ্লাই ওভার নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রিতা৷ ঢাকার মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের ফলে এ এলাকার রাস্তাঘাটের দিনের পর দিন যে ক্ষতি হয়েছে, তার কখনোই সংস্কার না করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা৷