মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টারত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বিজিবির বন্দুকযুদ্ধে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা বলছেন৷ মৃতদেহের সঙ্গে ৭০ হাজার ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি৷
বিজ্ঞাপন
টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বিজিবির কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান খান জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে সীমান্ত এলাকায় একদল রোহিঙ্গা নৌকা করে নদী পার হচ্ছিলেন৷ সেই সময় বিজিবির সদস্যরা তাঁদের সমর্পণ করার আহ্বান জানান৷ ‘‘কিন্তু তা না করে তাঁরা গুলি চালায়,’’ বলে রয়টার্সকে জানান ফয়সাল হাসান৷ তিনি বলেন, ‘‘হামলা, পালটা হামলা শেষে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুজন রোহিঙ্গাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন৷’’
স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়৷
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ৷ তবে দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হওয়ায় তা রোহিঙ্গাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/A. Islam
মূল ভূখন্ড থেকে দূরে
বিশ বছরেরও কম সময় আগে ভাসান চর জেগে উঠেছিল৷ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/A. Islam
যাওয়া সহজ নয়
ভাসান চরে যেতে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো বাহন নেই৷ ঐ দ্বীপের কয়েকজন দোকানি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্ষার সময় সাগর উত্তাল থাকায় সাধারণ মাছ ধরার নৌকায় করে ভাসান চরে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
তিন মিটার উঁচু বাঁধ
উঁচু ঢেউ ও বন্যার হাত থেকে ভাসান চরকে বাঁচাতে সরকার ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে৷ এক দোকানি জানালেন, মাসে দু’বার বাঁধের বাইরের দিকে থাকা বাজার এক মিটার পর্যন্ত ডুবে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
একইরকম ভবন
রোহিঙ্গাদের জন্য ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি ভবনে ১৬টি ঘর রয়েছে৷ ১২x১৪ ফুটের একেকটি ঘরে একটি পরিবারের অন্তত চার জন সদস্যকে থাকতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
সৌরশক্তি
ভবনগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সেগুলোতে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য দুটি ডিজেল জেনারেটর ও বিশাল এক মাঠে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ খাবার পানির জন্য রয়েছে নলকূপ৷ আরও আছে বৃষ্টির পানি থেকে খাবার পানি পাওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/A. Islam
ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে ২০০২ সালে প্রথম এই দ্বীপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ এরপর কয়েকবার এটি স্থান পরিবর্তন করেছে৷ ভূমিক্ষয় ঠেকাতে সরকার চরটিতে তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
দ্বীপটি কি বাসযোগ্য?
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বীপটি এখনও বসবাসের উপযোগী নয়৷ তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করছেন, বাঁধের উচ্চতা যদি সাড়ে ছয় থেকে সাত মিটার করা যায় তাহলে দ্বীপটি বসবাসযোগ্য হতে পারে৷ তবে ভাসান চরে ফসল ফলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গাদের ভয়
কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা মারা যেতে পারেন৷ তবে প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘‘চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য এক স্বর্গ৷’’
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গারা কি ভাসান চরে যাবেন?
কয়েকটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে, নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ তবে রোহিঙ্গারা সেখানে না গেলে গৃহহীন বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷
ছবি: DW/A. Islam
9 ছবি1 | 9
বিজিবি বলছে, দুই মৃতদেহ থেকে একটি রাইফেল ও বুলেটসহ ৭০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে৷
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হাসান জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে ৪৪ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন৷ ‘‘তাঁরা সবাই মাদক পাচার, ডাকাতি, মানবপাচার ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন,’’ বলে জানান তিনি৷
রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন৷ এদের মধ্যে কয়েকজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন৷’’
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন৷
এদিকে, রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো এসব হত্যার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন৷ ‘‘আমরা কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সমর্থন করি না৷ তাই বলে আমরা এমন হত্যাকাণ্ডও সমর্থন করতে পারি না৷ এ ধরনের হত্যার তদন্তের দাবি জানাচ্ছি আমরা,’’ বলেন টেকনাফের কুতুপালং ক্যাম্পের আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের মহাসচিব সৈয়দ উল্লাহ৷ ‘‘স্থানীয় মানুষের সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা এসব করতে পারেন না,’’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷