1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিজেপিকে রুখতে বিরোধীদের ‘নরম হিন্দুত্ব'

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ ডিসেম্বর ২০১৮

ভারতে কি রাজনীতি ক্রমশ আরো বেশি ধর্মাশ্রিত হয়ে উঠছে? বিজেপিকে টেক্কা দিতেকংগ্রেসের মন্দির রাজনীতি এই প্রশ্নটা তুলে ধরেছে৷ এই প্রবণতায় উদ্বেগ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূচিতেও দেখা যাচ্ছে একই প্রবণতা৷

Hindu Temple
ছবি: DW/P. Samanta

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল৷ তবু আজকের ভারতের প্রতিষ্ঠাতারা এই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন৷ সেই ভাবনা থেকেই ভারতের সংবিধান রচিত হয়েছিল৷ জনসমষ্টির ৮০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও ভারত তাই হিন্দুরাষ্ট্র নয়৷ কিন্তু এই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের৷ ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির মোকাবিলায় এতদিন যেখানে বিরোধীরা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের উপর জোর দিতো, সেখানে তারা ক্রমশ ধর্মকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ছে৷ সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে সেই প্রবণতাই দেখা গেল৷ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী অগুণতি মন্দির সফর করলেন৷ সেখানে পুজো দিলেন৷ সঙ্গে ছিলেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ এই ছবি ফলাও করে প্রকাশিত হলো সংবাদপত্রে, দেখানো হলো টিভি চ্যানেলে৷ অথচ কিছুদিন আগেও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের এভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের নজর টানতে মন্দিরে যেতে দেখা যায়নি৷ নির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্যে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোটে জেতার একটি হাতিয়ার হিসাবে বিরোধীরাও এবার ধর্মকে এভাবে ব্যবহার করবে?

‘খুবই খারাপ লক্ষণ এটা’

This browser does not support the audio element.

কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অরুণাভ ঘোষ তাঁর দলের এই রণনীতির সঙ্গে সহমত নন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই রাজনীতিই আজ দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ খুবই খারাপ লক্ষণ এটা৷ অথচ এটা কংগ্রেসের পরম্পরা নয়৷ জওহরলাল নেহরু মন্দিরে যাননি ভোট পেতে৷ নরসিমা রাও থেকে হালের মনমোহন সিংয়ের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা চলে৷'' আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মন্দিরে গিয়েছেন, এ কথা স্বীকার করেও কংগ্রেস নেতা অরুণাভ বলেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধানকে রক্ষা করতে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা মেনে চলতে হবে৷ তিনি বলেছিলেন, ধর্ম থাকবে মনে-কোণে-বনে৷ ধর্ম কখনো রাজনীতির বিষয় হতে পারে না৷ বিজেপির বিরুদ্ধে এ নিয়েই আমাদের লড়াই৷''

‘নিজস্ব কর্মসূচি ছেড়ে এই পথ নিতে হচ্ছে, এটা দুঃখের’

This browser does not support the audio element.

জাতীয় রাজনীতির মতো একই প্রবণতা আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে৷ এখানেও বিজেপির রামনবমীর মোকাবিলা করতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস হনুমান জয়ন্তী পালন করছে৷ এটা যে বিজেপির রাজনীতির প্রভাবেই হচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক নির্বেদ রায়৷ তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যখন সংবিধানবিরোধী কাজ করছে, তার মোকাবিলা করা জরুরি৷ মোকাবিলার পদ্ধতি কী হবে, সে ব্যাপারে নানা মত থাকতে পারে৷ হনুমান জয়ন্তী পালন, না অন্যভাবে সেটা করা হবে, ভাবতে হবে৷ তবে এটা ঠিক, কেন্দ্রের মোকাবিলায় আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি ছেড়ে এই পথ নিতে হচ্ছে, এটা দুঃখের৷'' যদিও তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ থেকে সরে এসেছে বলে তিনি মনে করেন না৷ নির্বেদ বলেন, ‘‘গান্ধীজি তাঁর সভায় হিন্দু ও ইসলামের ধর্মশাস্ত্র পাঠ করতেন৷ আমরা যদি হিন্দুদের উৎসব পালন করি, তাহলে যাঁরা মুসলিম তোষণের অভিযোগ তোলেন, তাঁরা কী বলবেন? আমরা সব সম্প্রদায়কে নিয়ে চলছি৷ এটা গান্ধীজির দেখানো পথ৷''

‘ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকর’

This browser does not support the audio element.

মধ্যপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে দীর্ঘদিনের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা নিশ্চয়ই ছিল৷ কিন্তু তার সঙ্গে বিজেপির কট্টর হিন্দুত্বের মোকাবিলায় যে কংগ্রেসের ‘নরম হিন্দুত্ব' কাজে এসেছে, এ কথাও মেনে নিচ্ছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কংগ্রেস, তৃণমূলসহ বিরোধী দলগুলি ধর্মকে হাতিয়ার করছে, এই প্রবণতা দুর্ভাগ্যজনক৷ এটা আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকর৷ আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের কথা তুলে ধরা হলেও এটা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, কোনো দল প্রচারের ধর্মের আশ্রয় নিতে পারবে না৷ সেই সুযোগে ধর্মের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে৷'' রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে ধর্মের থেকে অর্থনৈতিক কারণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল৷ জিএসটি চালু থেকে কৃষকের সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ের নির্বাচনে৷ তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার কারণটি রয়েইছে৷'' তবে বিজেপির হাতিয়ারকে ভোঁতা করতে সংখ্যালঘুদের কাছে টানার পাশাপাশি নরম হিন্দুত্বের প্রচার যে ক্রমশ ভারতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠছে, এ কথা মানছেন অনেক পর্যবেক্ষক৷

‘বিজেপি এটা চিরকাল বিশ্বাস করে’

This browser does not support the audio element.

আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা আরো বেশি ঝুঁকতে পারে হিন্দুত্বের প্রচারের দিকে৷ তাহলে কি বিজেপির কৌশলে বদল আসবে? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টই বলেছে, হিন্দুত্ব জীবনধারণের প্রণালী৷ বিজেপি এটা চিরকাল বিশ্বাস করে, নতুন নয়৷ এর সঙ্গে রাজনৈতিক কৌশলের সম্পর্ক নেই৷ বিরোধীরা যা করছে, সে সম্পর্কে একটি প্রবাদবাক্য বলা চলে— অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ৷ যারা আজমল কাসাবকে সমর্থন করে, তাদের এই আচরণে মানুষ মত বদল করবে না৷ তবে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে নিশ্চই কিছু ভুল-ভ্রান্তি আমাদের হয়েছে, তা আমরা শুধরে নেবো৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ