1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিজেপির বন্ধুরা, ভাবা প্র্যাকটিস করুন

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের কায়দায় এবার আপনাদের বাড়িগুলি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হোক?

কলকাতায় বিজেপি-র আন্দোলনে পুলিশের গাড়ি জ্বালানো হয়। ছবি: Satyajit Shaw /DW

মঙ্গলবার বিজেপির নবান্ন অভিযান দেখতে দেখতে কিছু পুরনো কথা মনে পড়ছিল। মনে পড়ছিল সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের রাস্তা। মনে পড়ছিল মধ্যপ্রদেশ, আসাম, দিল্লির একের পর এক সরকারবিরোধী আন্দোলনের ছবি। সেনা নিয়োগ নিয়ে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া আন্দোলন।

পুলিশের ব্যারিকেড, জলকামান, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, সরকারি সম্পত্তিতে আগুন। মঙ্গলবারের কলকাতা ঠিক যেন গত দুই বছরের বাকি ভারতের আন্দোলনের ফোটোকপি।

বিজেপির আন্দোলন ঘিরে কলকাতার প্রশাসন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, তা বাড়াবাড়ি সন্দেহ নেই। গণতান্ত্রিক পরিসরে আন্দোলন, মিছিলের অধিকার সকলের আছে। সে যে দলই হোক না কেন! উত্তরপ্রদেশ, আসাম, মধ্যপ্রদেশের বিরোধীদের ঠিক যেমন সে অধিকার আছে, পশ্চিমবঙ্গেও আছে। লখিমপুর খেরির ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি দলকে উত্তরপ্রদেশে ধুকতে দেয়া হয়নি। যে দলে দেশের সাংসদরা ছিলেন। অন্যায় হয়েছিল। কলকাতায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে মিছিল শুরু করার আগেই আটক করা হয়েছে। অন্যায় হয়েছে।

কিন্তু তারপর যা ঘটল, তা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন বিজেপির বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্ব! আপনাদের এক মিছিলের ঠেলায় রাজ্যের দুই ডজন পুলিশ অফিসার হাসপাতালে। প্রকাশ্য রাস্তায়, ক্যামেরার সামনে বাঁশ দিয়ে পুলিশ পেটানোর ছবি শুধু কলকাতার বাঙালি নয়, গোটা দেশ দেখেছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, আসাম প্রশাসনের রীতি মেনে এবার তাহলে তাদের নাম ছবি দিয়ে রাস্তায় টাঙিয়ে দেওয়া হোক! তাদের বাড়ির সামনে পৌঁছে যাক বুলডোজার! সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে তাদের দরজায় সেঁটে দেওয়া হোক ক্ষতিপূরণের নোটিস! রাজি তো!

অন্যান্য রাজ্যে সেসব হলে কলকাতার দলীয় দপ্তরে বসে আপনারাই তো বলেন, 'বেশ হয়েছে। ব্যাটাদের শিক্ষা হবে। দেশে আইনের শাসন চলছে।' আপনারা তো দেশের শাসক দল। স্বতপ্রণোদিত মামলা করুন। নিজেদের কর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে এবং আইনি পরিসরে মামলা করুন। নিজেদের উদ্যোগে টাঙিয়ে দিন তাদের ছবি পশ্চিমবঙ্গের মোড়ে মোড়ে। পারবেন? না, পারবেন না। মঙ্গলবার রাত থেকে আপনাদের লাখ লাখ টুইট, বাইট, উদ্ধৃতিতে এর কোনো উল্লেখ নেই। বরং ভাবটা এমন যে, যা হয়েছে, ঠিক হয়েছে।

স্যমন্তক ঘোষ. ডয়চে ভেলে। ছবি: privat

দ্বিচারিতা নয়? চরম দ্বিচারিতা। আসলে আপনারা, রাজনীতিকরা ভাবেন সাধারণ মানুষের স্মৃতি ক্ষণস্থায়ী। আপনারা যা বোঝাবেন, মানুষ গুলিসুতো খাওয়ার মতো তা-ই গিলে নেবে। আপনারা রাম বললে, মানুষও রাম বলবে, মরা বললে মরা। মুশকিল হলো, এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের যুগে, মোবাইল ক্যামেরার রমরমার যুগে মানুষ সব দেখে ফেলে। সবটাই দেখে ফেলে। আপনাদের এডিট করা ভিডিও সহযোগে টুইট মানুষ আর বিশ্বাস করে না। মানুষ দেখতে পায়, কলকাতার রাজপথে পুলিশের পিসিআর ভ্যান দাউ দাউ করে জ্বলছে। মানুষ দেখতে পায়, পুলিশকে ঘিরে ধরে বেদম মার। আবার মার, আবার।

হ্যাঁ, পুলিশও ঠিক এভাবেই মারে। মারতে মারতে আন্দোলনকারীকে রাস্তায় অচৈতন্য করে দিতে পারে পারে পুলিশ। আজ থেকে নয়, যুগ যুগ ধরে। সমর্থনযোগ্য নয়। না, পুলিশ একাজ কেবল কলকাতায় করে না, আপনাদের পরিচালিত রাজ্যগুলিতে ঠিক এমনই, এর চেয়েও ভয়াবহ কাণ্ড ঘটায় পুলিশ। জামিয়া মিলিয়ার ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদের সঙ্গে বিজেপি সরকার পরিচালিত পুলিশ কী করেছিল মনে পড়ছে এখন? মনে পড়ছে না নিশ্চয় কৃষক আন্দোলনের সময় হরিয়ানা সরকারের পুলিশ কৃষকদের সঙ্গে কী আচরণ করেছিল!

পুলিশের গাড়িতে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল কর্মীরা। ছবি: Satyajit Shaw /DW

মনে করুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন। দামাল কর্মীদের বাড়িগুলির সামনে বুলডোজার নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দেখান। তারপর বাকি কথা হবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ