বিজেপি এলে পশ্চিমবঙ্গ জ্বলবে, রাহুল গান্ধীর হুঁশিয়ারি
১৪ এপ্রিল ২০২১
পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে বিজেপি সম্পর্কে সাবধান করে দিলেন রাহুল গান্ধী। বললেন, বিজেপি এলে আগুন জ্বলবে।
বিজ্ঞাপন
প্রথম চার পর্বের নির্বাচনী প্রচারে তাঁকে দেখা যায়নি। পঞ্চম পর্বের প্রচার শেষ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে এলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। উত্তরবঙ্গে একাধিক জনসভা করে রাহুল বলেছেন, ''আমি এখানে ভাষণ দিতে আসিনি। আমি এটা বলতে এসেছি, যদি বাংলা বিজেপি-র কাছে চলে যায়, তাহলে বাংলার মানুষের সব চেয়ে বড় ক্ষতি হবে। কারণ, বিজেপি এলে বাংলায় আগুন জ্বলবে।'' রাহুলের অভিযোগ, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ভাগ করতে চাইছে।
বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলের বিরুদ্ধে লড়ছে কংগ্রেস। তবে তারা বামেদের সঙ্গে জোটে লড়ছে। গোয়ালপোখরে প্রথম জনসভায় রাহুল অনেক বেশি সমালোচনা করেছেন বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর। তিনি তৃণমূলেরও সমালোচনা করেছেন, তবে তা তুলনায় অনেক কম।
রাহুল বলেছেন, ''বাঙালির মধ্যে যে সৌভ্রাতৃত্ব আছে, তা নষ্ট করতে চাইছে বিজেপি। এটাই ওরা আসামে করেছে। এটাই তামিলনাড়ুতে করার চেষ্টা করেছে। ওদের কিছু হবে না। আগুন লাগলে এখানে লাগবে। বাংলা জ্বলবে। মা-বোন কাঁদবেন। এটাই হবে। একবার বাংলাকে বিভাজিত করতে পারলে আগুন লাগবেই। এমন আগুন লাগবে যা আগে কেউ কখনো দেখেননি।''
পশ্চিমবঙ্গে বাম জোটের ভোট-কৌশল
পশ্চিমবঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট গঠন করে লড়ছে বাম ও কংগ্রেস। সঙ্গে আছে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ। কী ভোট-কৌশল নিয়েছে তারা।
পশ্চিমবঙ্গে এর আগে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক জোট হয়নি। এবার হয়েছে। ব্রিগেডের জনসভায় দেখা গেছে জোটের ছবি। সেই ব্রিগেডে সীতারাম ইয়েচুরি ভাষণ দিচ্ছেন।
ছবি: Sandip Saha/Pacific Press/picture alliance
বার্তা দেয়ার জন্য
এর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করলেও ভোটের প্রচারে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের এক মঞ্চে দেখা যায়নি। গত বিধানসভা নির্বাচনে একেবারে শেষে রাহুল গান্ধীর জনসভায় ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফলে সমঝোতার বার্তা ঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। তাতে ক্ষতি হয়েছে বাম-কংগ্রেসের। তাই এবার আঁটঘাট বেঁধে লড়াই।
ছবি: Sonali Pal Chaudhury/NurPhoto/picture alliance
সঙ্গী আইএসএফ
নতুন দল তৈরি করেছেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। দলের নাম ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। সিদ্দিকির দলকে জোটে নিয়েছে বাম ও কংগ্রেস। কারণ, তারা মুসলিম ভোট ভাগ হতে দিতে চায় না। মুসলিম ভোট পাওয়ার উপরই নির্ভর করছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বামেদের জয়ের সম্ভাবনা।
ছবি: Naushad Bhai
সিদ্দিকিকে নিয়ে বিতর্ক
আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। তুলেছেন আনন্দ শর্মার মতো কিছু নেতা। তারা বলছেন, সিদ্দিকি কট্টরপন্থি। তাই তার সঙ্গে জোট কংগ্রেসের আদর্শের বিরোধী। তার জবাব দিয়েছেন অধীর। ঘটনা হলো, সিদ্দিকি আলাদা লড়লে মুসলিম ভোট কাটতে পারেন। তাই নিজেদের স্বার্থেই কংগ্রেস তার সঙ্গে জোটে গেছে।
ছবি: Naushad Bhai
সকলকে সঙ্গে নিয়ে
বাম নেতারা এবার সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চান। তাই ব্রিগেডের সভায় সব দলের নেতা ভাষণ দিয়েছেন। এমনকী জোটের আসন ঘোষণার কাজও তারা একসঙ্গে করতে চান। তাই সিপিএম সহ বাম দলগুলির এবং আইএসএফের প্রার্থী ঘোষণার সময়ও কংগ্রেসের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ছবি: UNI
বিকল্প হওয়ার লক্ষ্যে
বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট তৃণমূল ও বিজেপি-র বিকল্প হতে চায়। তারা যে শক্তিশালী তা বোঝানোর চেষ্টা চলছে। গতবার বামেরা কংগ্রেসের থেকেও কম আসন পেয়েছিল। তাই বিধানসভায় বিরোধী নেতার পদ পেয়েছিলেন কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। এবার তারা আসন বাড়াতে চাইছে। তৃণমূল ও বিজেপি-র বিকল্প হতে চাইছে জোট।
বাম প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। একগুচ্ছ তরুণ নেতা ও নেত্রীকে প্রার্থী করা হচ্ছে। ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা নেতা-নেত্রীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই উদ্যোগ বামেদের।
ছবি: Payel Samanta/DW
কংগ্রেসে অধীরই প্রধান
কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় এবং আসন জেতানোর ক্ষমতার নিরিখে সব চেয়ে এগিয়ে অধীর চৌধুরী। তিনি নিজের জেলা মুর্শিদাবাদে সব চেয়ে জনপ্রিয় নেতা। অন্য জেলাতেও তার জনসভায় ভালো ভিড় হচ্ছে। কংগ্রেস প্রার্থীদের জেতানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিতে হচ্ছে অধীরকে।
ছবি: Zumapress/Imago Images
জোট কি পারবে?
বামেদের নেতৃত্বে সংযুক্ত মোর্চা কি সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবে? হারাতে পারবে বিজেপি ও তৃণমূলকে? বামেদের ডাকা ব্রিগেডের সভায় প্রচুর ভিড় হয়েছে। তা দেখেই জোট ভোটে সাফল্য পাবে এমন কথা বলা যায় না। জোটের সামনে খুবই কঠিন চ্যালেঞ্জ। তৃণমূলের প্রধান বিকল্প এখন বিজেপি। এই দুই দলকে পিছনে ফেলে জোট এগিয়ে যেতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তবে ওই দুই দল গরিষ্ঠতা না পেলে, তখন জোটের গুরুত্ব খুবই বেড়ে যাবে।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
9 ছবি1 | 9
রাহুল বলেছেন, ''উত্তর প্রদেশকে দেখুন। ভোটে জেতার জন্য সেখানে আগুন লাগিয়েছিল। ভোটে জিতেছে। আজ ওখানে দেখুন কী অবস্থা।'' কংগ্রেসের সাবেক সভাপতির মতে, বিজেপি সহিংসতা ও ঘৃণা ছাড়া আর কিছু জানে না।
রাহুল কেন এতদিন পশ্চিমবঙ্গে এসে প্রচার করেননি? সেই প্রশ্ন কংগ্রেসের বিরোধী নেতারা আগেই তুলেছিলেন। কংগ্রেস নেতাদের জবাব ছিল, শেষ তিন পর্বে কংগ্রেসের শক্ত জমিতে ভোট হবে। তাই রাহুল এখন এসেছেন।
তবে রাহুলের মঞ্চে বাম প্রার্থীরা ছিলেন। আর দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে লাল পতাকা হাতে প্রচুর বাম কর্মী-সমর্থকও ছিলেন। এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় পরিবর্তন।
উত্তরবঙ্গে মমতাও
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুধবার উত্তরবঙ্গে যান। তিনি মাথাভাঙায় জনসভা করেন। শীতলকুচির আহতদের দেখতে যান। আনন্দ বর্মনের বাবা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি। কিন্তু তার মামা ও দাদু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মমতা জানিয়েছেন, আনন্দ বর্মনের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কড়া শাস্তি দেয়া হবে। আর শীতলকুচিতে সিআরপিএফের গুলিতে মৃত চারজন ও রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত একজনের পরিবারকে রাজ্য সরকার সাহায্য দেবে। তবে আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকায় কী সাহায্য দেয়া হবে তা তিনি জানাননি।