বারাণসীর পর এবার অযোধ্যা। বাবা বিশ্বনাথের পর রামলালা। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্বের মন্দির পরিক্রমা চলছে।
বিজ্ঞাপন
গত সোমবার অযোধ্যায় বিশ্বনাথ মন্দির করিডোরের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। গঙ্গায় ডুব দিয়েছেন, পুজো করেছেন। বিজেপি-র বারোজন মুখ্যমন্ত্রী, তিনজন উপ-মুখ্যমন্ত্রী, প্রচুর সাধু-সন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারপর মোদী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন। তিনিই তাদের অযোধ্যায় নির্মীয়মান রামমন্দির দর্শন এবং রামলালার পুজো করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানাচ্ছে।
সেইমতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, উপ মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি জে পি নাড্ডা অযোধ্যায় গেছেন।
এতজন মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম
অযোধ্যায় এতজন মুখ্যমন্ত্রী একসঙ্গে আগে কখনো আসেননি। বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী ও নেতারা রামলালা দর্শন করছেন, হনুমান গড়িতে পুজো দিয়েছেন, তারা সরযূ ঘাট দর্শন করেও পুজো করেছেন। নির্মীয়মান রামমন্দিরও ঘুরে দেখবেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যও তাদের সঙ্গে আছেন।
নির্বাচন, মন্দির দর্শন ও রাজনীতি
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। আরো দুইটি বিজেপি শাসিত রাজ্যেও আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভোট হবে। গোয়া ও মণিপুর। নির্বাচনের আগে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব ও মুখ্যমন্ত্রীদের এই কাশী, অযোধ্যা দর্শন নিয়ে ইতিমধ্যেই সোচ্চার সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। তিনি বলেছেন, বিজেপি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এই কাজ করছে।
অখিলেশ বলেছেন, ''মোদী বারাণসীতে বলেছেন, এক মাস ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছেন। খুব ভালো। একমাস কেন, তিনমাস ধরে হোক। শেষ সময়ে অনেকে ওখানেই থাকেন।''
এরপরই বিজেপি নেতারা অখিলেশের প্রবল সমালোচনা করেছেন। সংসদীয়মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল বলেছেন, ''কাশী বিশ্বনাথ নিয়ে হিন্দুদের বিশ্বাস অখিলেশের মধ্যে নেই। তিনি তার ভোটব্যাঙ্ককে তুষ্ট করতে চান। তাছাড়া সমাজবাদী সরকারই পাঁচ করসেবককে গুলি করে হত্যা করেছিল।''
আরেক মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল বলেছেন, ''আওরঙ্গজেব বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। আজ অখিলেশ তাদের পাশে আছেন।''
লোকমত পত্রিকার রাজনৈতিক সম্পাদক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বিজেপি জানে, উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উপর মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই কাশী, অযোধ্যা, হিন্দুত্ব ছাড়া তাদের জেতার কোনো পথ নেই। তাই তারা সেই পথেই হাঁটছে।''
অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো
অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ অগাস্ট ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুপোর ইট প্রতিষ্ঠা করবেন গর্ভগৃহে।
ছবি: AFP/S. Kanojia
আমন্ত্রিত ১৭৫ জন
করোনাকালে এই অনুষ্ঠান করা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। মন্দিরের পুরোহিত করোনায় আক্রান্ত। অমিত শাহেরও করোনা হয়েছে। কিছু নিরাপত্তা রক্ষীরও। তাই নিমন্ত্রিতের সংখ্যা কাটছাঁট করে ১৭৫-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। মূল মঞ্চে থাকার কথা পাঁচজনের। প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, আরএসএস প্রধান এবং ট্রাস্টের প্রধান নিত্যগোপাল দাসের। বাকিরা সামনে দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন।
ছবি: IANS
মুসলিম অতিথি
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন মামলাকারী ইকবাল আনসারি। আমন্ত্রিতদের মধ্যে তাঁকেই প্রথম কার্ড পাঠানো হয়। আনসারি জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই যাবেন। মামলার রায় এসে গেছে। বিরোধ এখন অতীতের ঘটনা। শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার ফারুকিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ছবি: IANS
সারা দেশ থেকে জল ও মাটি
ভূমিপুজো অনুষ্ঠানের জন্য দেশের সব প্রধান নদী থেকে জল এসেছে অযোধ্যায়। এসেছে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানের মাটি। অযোধ্যার পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরযূর জল তো আছেই। ভূমিপুজোর পর মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। মন্দির হবে তিন তলা। গর্ভগৃহের উপর থাকবে শিখর, যা ১৬১ ফুট উঁচু। পাঁচটি গম্বুজ থাকবে। পুরো মন্দির হবে পাথরের তৈরি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
আবার ২৮ বছর পর
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই প্রথমবার অযোধ্যায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আঠাশ বছর আগে তিনি অযোধ্যায় গিয়েছিলেন মুরলী মনোহর জোশীর সঙ্গে। ভাষণও দিয়েছিলেন। তারপর আর যাননি। এ বার প্রথমে তিনি যাবেন হনুমান গড়ির মন্দিরে। রামের আগে বজরঙ্গবলীর পুজো দিতে হয়, এই রীতি মেনে সেখানে পুজো দিয়ে যাবেন মূল অনুষ্ঠানে। ভূমিপুজো করবেন বারাণসী থেকে আসা পুরোহিতরা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া
অযোধ্যা এখন কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া। বস্তুত লখনউ থেকে অযোধ্যা যেতে গেলেই কিছুটা দূর পর পর পুলিশের ব্যারিকেড। যাঁরা যাচ্ছেন, পরিচয়পত্র দেখিয়ে যেতে হচ্ছে। নাম লিখে রাখা হচ্ছে। শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তায় কোনো ফাঁক রাখা হচ্ছে না।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
হলুদের ছোঁয়া
অযোধ্যায় এখন নজর কাড়ছে হলুদ রং। প্রধানমন্ত্রী যে পথ দিয়ে যাবেন, তাতে রয়েছে হলুদ তোড়ন। দুইপাশে হলুদ পতাকা। কিছু বাড়িতেও পড়েছে হলুদের পোচ। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, পুরসভা এই কাজ করেছে জ্যোতিষী ও বিশেষজ্ঞদের কথা মেনে। হলুদ না কি শক্তির প্রতীক। শুধু হলুদ নয়, অযোধ্যায় এখন রং-এর মেলা। হলুদ ও গেরুয়া তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে সবুজ, নীল, মেরুন সহ একাধিক রং।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু
ভূমিপুজো উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু। ভূমিপুজো শেষ হলেই যা বিলি করা হবে। ফলে অযোধ্যায় লাড্ডুর কারিগররা চূড়ান্ত ব্যস্ত। দেশি ঘি, বেসন ও চিনি সহযোগে বানানো হয় এই লাড্ডু।
ছবি: IANS
বিশেষ কৌটায় লাড্ডু বিলি
লাড্ডু বিলি করা হবে বিশেষ টিফিন কৌটায়। করোনার কারণে অযোধ্যাবাসীরা বাড়িতে বসে টিভিতেই অনুষ্ঠান দেখবেন। তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারে লাড্ডুর কৌটো।
ছবি: IANS
সেজে উঠেছে অযোধ্যা
সেজে উঠেছে অযোধ্যা। ঝকঝকে রাস্তা। অনেক রাস্তা চওড়া হয়েছে। নতুন করে পিচ পড়েছে। চারদিকে পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। রাতে সরযূর তীরে বাড়ি ও মন্দির নানা রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে। অন্য তীর থেকে দেখলে বোঝা যায়, কতটা রঙিন করে তোলা হয়েছে অযোধ্যাকে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
9 ছবি1 | 9
প্রবীণ সংবাদিক জয়ন্ত ভট্টচার্য ডয়চ ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সম্প্রতি দুইটি জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি-র আসন কমবে। তারা ২২১ থেকে ২২৪ আসন পেতে পারে। মানুষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রশাসন নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাই এখন ধর্মকে সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চলছে।''
রামমন্দিরের কাজ চলছে
অযোধ্যায় এখন রামমন্দির নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে দর্শন শুরু হওয়ার কথা। তার আগে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। রামলালার মূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪০ ফুট গভীর করে ভিত করা হয়েছে। মির্জাপুর ও বেঙ্গালুরু থেকে গ্রানাইট আনা হয়েছে। রাজস্থানের মারকানা থেকে মার্বেল আসছে। মন্দিরের ভিত তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। মন্দির হবে ৩৬০ ফুট লম্বা, ২৩৫ ফুট চওড়া এবং ১৬১ ফুট উঁচু। মন্দিরের মাথায় পাঁচটি শিখর থাকবে। মন্দির হবে তিনতলা। প্রতিটি তলা ২০ ফুট করে উঁচু।