জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে যে বিজ্ঞানীরা চিন্তিত – তা নতুন কিছু নয়৷ তবে এবার জানা গেছে, সাগরের ভেতরকার সুপ্ত তাপ যখন বেরিয়ে আসবে তখন সুমেরুর বরফ আরো গলে যাবে৷ এর ফলাফল নিয়ে তাই আরো উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
তাঁরা বলছেন, ২০৩০ সালে সমুদ্রের তলদেশে ৫,০০০ ফিট গভীরে যে সুপ্ত তাপ রয়েছে তা আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠবে এবং নতুনভাবে শুরু হবে বৈশ্বিক উষ্ণতা, যা গলিয়ে দেবে সুমেরুর বরফ৷ ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠে যখন এই তাপ উঠে আসবে তখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বিশ্ববাসী৷
সমুদ্রের গভীরে ৬,৫০০ ফিট গভীরে থেকে পানি সংগ্রহ করে, তা পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা৷ ১৯৯৯ থেকে সমুদ্র গর্ভে তাপ জমা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷ বিজ্ঞানী কা-কিট-তুং বলছেন, ‘‘৩০ বছর পর পর এই ধারা পরিবর্তীত হয়, অর্থাৎ একবার গরম, একবার ঠান্ডা৷ এখন চলছে ঠান্ডা পর্যায়৷ তাই ২০৩০ সালে গরমের পর্যায়টা কী হবে তা ভেবে দেখবার বিষয়৷ ''
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দ্বীপগুলো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতকেই বিশ্বের অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে, বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষে মানুষে হানাহানি৷ আইপিসিসি-র রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পৃথিবীর স্বর্গ হারানোর পথে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এটি পুরোপুরি তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷
ছবি: picture alliance/chromorange
বন্যার প্রকট আকার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে দেশটি৷ সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র তিন ফুট বেড়ে গেলেই দেশের অর্ধেক পানির নীচে তলিয়ে যাবে৷
ছবি: Tareq Onu
পানিতে নিমজ্জিত সম্পদ
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের কিছু গ্রাম এরই মধ্যেপানিতে তলিয়ে গেছে৷ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বেশ চিন্তিত সেখানকার চাষীরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
আইপিসিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ০.৩ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি শিল্পকারখানা যেখানে বেশি সেখানে গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে৷ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়বে ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার৷
ছবি: picture-alliance/AP
সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে বসবাস
সমুদ্রের পানি থেকে বাঁচার উত্তম পন্থা জানা আছে ডাচদের৷ প্রায় ১০০০ বছর আগে বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রথম পরিখা নির্মাণ করেছিল৷ এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছে সেখানে৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে ডাচরা৷
ছবি: picture-alliance/Ton Koene
ডুবছে বিশ্ব ঐতিহ্য
ইটালির ভেনিস পুরোটাই পানি বেষ্টিত৷ তাই সেখানে বন্যা কোনো আকস্মিত ঘটনা নয়৷ কিন্তু চিন্তা বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরটি ক্রমেই পানির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে৷ ইটালির সরকার ভেনিস রক্ষায় ৯.৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার এই প্রকল্প ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে৷
ছবি: AP
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে পানি সংকট এবং খরা দেখা দেবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর ফলে ফসল ভালোমত হবে না, দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি৷
ছবি: dapd
কোনো মানুষ রেহাই পাবে না
আইপিসিসি-র সভাপতি রাজেন্দ্র পাচৌরি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যদি ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তবে ঝুঁকির পরিমাণও সেই অনুপাতে বাড়বে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব থেকে বিশ্বের কোনো মানুষই রেহাই পাবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
মানবসৃষ্ট গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের কারণেই প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে – এমন ধারণা পাওয়া গেছে আগের বিভিন্ন গবেষণায়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, প্রশান্ত মহাসাগরে তাপমাত্রা তুলনামূলক কমেছে৷ তবে গবেষকরা বলছেন, এই শীতলতার কারণ হলো শিল্পকারখানার দূষিত ধোঁয়ার কারণে সূর্য কিরণ পৃথিবীতে আসতে বাধা পাচ্ছে৷
অপর এক বিজ্ঞানী জার্নাল নেচার জিওসায়েন্স এ লিখেছেন, ‘‘আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণেও সূর্য কিরণ পৃথিবীতে আসতে বাধা পাচ্ছে৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার বদলে দেখা দিচ্ছে শীতল আবহাওয়া৷ গরম লবণাক্ত পানি যখন অ্যাটলান্টিক সাগরে এসে পড়ে তখন সেখানকার ঠান্ডা পানির সাথে মিশে এটি নিমজ্জিত হয়৷
জাতিসংঘের মতে, এটা ৯৫ ভাগ নিশ্চিত যে মানুষের আচরণের কারণে কার্বন নিঃসরণ তাপামাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ৷ ১৯৬০ সাল থেকে এ কারণেই দাবদাহ, ঝড় ও সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে৷