বিজ্ঞান চর্চা
৪ জুন ২০১২বিশ্বে বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণাপত্র প্রকাশে সবচেয়ে এগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ তার পরেই এতদিন ছিল যুক্তরাজ্যের নাম৷ সম্প্রতি তাকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে চলে গেছে চীন৷ আর আগামী বছরের মধ্যে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকেও পেছনে ফেলে দেবে চীন – এমন তথ্য দিয়েছে ব্রিটেনের জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি - ‘দ্য রয়েল সোসাইটি'৷
এইতো গেল একটা দিক৷ আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন আবিষ্কারের জন্য চীনের মেধাস্বত্ত্বের আবেদনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ এবং সেটা রকেটের গতিতে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেডমার্ক ও মেধাস্বত্ত্ব কার্যালয় বলছে, ২০০৯ সালে চীন ১,৬৫৫টি পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছিল৷ ঠিক ১০ বছর আগে যেটার পরিমাণ ছিল মাত্র ৯০৷
চীনের এই অগ্রগতির পেছনে রয়েছে সরকারের নেয়া বেশ কিছু পরিকল্পনা৷ যার মধ্যে একটি হচ্ছে বিজ্ঞানীদের বেতন সহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাড়ানো৷ শুধু তাই নয়, গবেষণার জন্য বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে৷ ফলে বিদেশে থাকা অনেক বিজ্ঞানী দেশে ফিরে যেতে উৎসাহী হয়েছেন৷
‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' ওইসিডি বলছে, বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় চীন বর্তমানে প্রতি বছর ১৫৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে৷ দশ বছর আগে যেটার পরিমাণ ছিল মাত্র ত্রিশ বিলিয়ন৷ যদিও পুরো ইউরোপকে এক ধরলে তাদের গবেষণা ব্যয়ের পরিমাণ এখনো চীনের প্রায় দ্বিগুণ, প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে৷ গবেষণা কাজে তারা প্রতি বছর খরচ করে প্রায় চারশো বিলিয়ন ডলার৷
আর বিজ্ঞানীদের দেয়া অন্যান্য আর্থিক সুবিধার মধ্যে রয়েছে, কোনো উঁচুমানের আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকায় গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারলে মোটা অঙ্কের টাকা৷ যেটার পরিমাণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক বছরের বেতনের সমান৷
চীনে বিজ্ঞানীদের এসব সুবিধা দেয়ার ফলে শুধু বিজ্ঞানীরাই নন, বিদেশে লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে যেতে উৎসাহী হচ্ছেন তরুণ শিক্ষার্থীরাও৷ ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটির এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৭৮ থেকে ২০০৬ – এই ২৮ বছরে চীনের প্রায় সাড়ে দশ লক্ষ শিক্ষার্থী বিদেশে পড়ালেখা করতে গিয়েছিল৷ কিন্তু তাদের ৭০ ভাগই আর দেশে ফিরেনি৷ তবে পরিসংখ্যান বলছে, সরকারের নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার কারণে এই সংখ্যাটা অনেক কমে আসছে৷
অন্যরকম বিশ্লেষণ
এতক্ষণ আমরা কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ ও সেটা সফল হওয়ার একটা দিকের কথা কথা শুনলাম৷ এবার আমরা বিষয়টি একটু অন্যভাবে বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো৷ যেমন – গবেষণাপত্র প্রকাশের বিষয়টি৷ পরিসংখ্যান বলছে যে, সেটা বেড়েছে৷ কিন্তু এটা এমন এক বিষয় যেটা শুধু সংখ্যা দিয়ে যাচাই করাটা ভুল হবে৷ কেননা এক্ষেত্রে গবেষণাপত্রের মানটাই প্রধান বিবেচ্য৷ এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চীন বেশ পিছিয়ে৷
বিজ্ঞান বিষয়ক দুটি শীর্ষ সাময়িকী হচ্ছে ‘নেচার' আর ‘সায়েন্স'৷ ওইসিডি বলছে, ২০০৯ সালে চীনের প্রকাশিত প্রায় দুই লক্ষ ৮৫ হাজার গবেষণাপত্রের মাত্র ০.০৫ ভাগ প্রকাশিত হয়েছে এই দুটি সহ অন্যান্য শীর্ষ জার্নালগুলোতে৷ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত পত্রের সংখ্যা চীনের প্রায় দ্বিগুণ, এবং তার অর্ধেকেরই বেশি প্রকাশিত হয়েছে নামকরা সব সাময়িকীতে৷ আর যুক্তরাজ্য চীনের অর্ধেক সংখ্যক পত্র প্রকাশ করলেও তাদেরও অর্ধেকের বেশি প্রকাশিত হয়েছে নামকরা জার্নালে৷
তবে এর চেয়েও ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে, গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য আর্থিক সুবিধা দেয়ায় অনেক চীনা বিজ্ঞানী নকল করে পত্র প্রকাশের চেষ্টা চালিয়েছে৷ অনেকে আবার ভুল তথ্যের আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেছে৷ এমন কিছু ঘটনা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় সেটা আদতে চীনের ভাবমূর্তির জন্য সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
এছাড়া এখনো বিদেশে আছেন এমন চীনা বিজ্ঞানীরা বলছেন, সরকার বেতন বাড়িয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু সেটাই সব কথা নয়৷ বড় কথা হচ্ছে, চীনা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীদের জন্য একটা বড় বাধা৷ কেননা সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই৷ এছাড়া চীনের বড় বড় বিজ্ঞানীরা তরুণ বিজ্ঞানীদের সহযোগিতা করতে ভয় পান৷ পাছে তাদের সুনাম নষ্ট হয়ে যায়৷
প্রতিবেদন: রয়টার্স/জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন