1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিজয়ী’ প্রজন্ম চত্বর

আশীষ চক্রবর্ত্তী২০ মার্চ ২০১৩

হরতাল৷ শব্দটি বাংলার মতো হিন্দি, উর্দু, মালয়ালম এবং গুজরাটিতেও আছে৷ তবে বাংলাদেশে শব্দটি আতঙ্কের অন্য নাম৷ এই সত্যের মাঝেই প্রজন্ম চত্বরের আবির্ভাব৷ অসুন্দের বিপরীতে সুন্দর কিন্তু এখনো বিজয়ী!

ছবি: REUTERS

‘হরতাল' যে ভাষারই প্রাচীনতম সম্পদ হোক, এর প্রকাশ্য প্রয়োগ প্রথম হয়েছিল অবিভক্ত ভারতে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়৷ তবে মোহনদাশ করমচাঁদ গান্ধির নেতৃত্বে হরতাল হলেও তা ছিল শান্তিপূর্ণ৷ অসহযোগ আন্দোলনেও শান্তির পথ ছাড়েননি মহাত্মা গান্ধি৷ তিনি যে ‘মহাত্মা' ছিলেন তা মানেন বলেই নেলসন ম্যান্ডেলাও তাঁর অনুরাগী৷

বাঙালি অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধিকারের দাবি আদায়েও স্বতস্ফূর্তভাবেই মেনে নিয়েছিল শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন৷ সেসবই অতীত৷ কাজীর সেই গরু যেমন গল্পে আছে গোয়ালে নেই, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভও হয়ে গিয়েছিল সেরকম৷ স্বাধীন দেশ তাই হরতালের নামে সরকারি কর্মচারীকে নগ্ন করা দেখেছে, দেখেছে বাসচালকের বাসের ভেতরেই পুড়ে মরাসহ কত ধরণের মানবতার অপমান, জীবনের নিষ্ঠুর অপচয়৷

স্লোগান আর সংগীত প্রজন্ম চত্বরের প্রাণছবি: REUTERS

কোনটা আওয়ামী লীগ করেছে, কোনটা বিএনপি, কে বেশি করেছে, কে কম – সে হিসেব শুধু বিশেষ বিশেষ সময়ে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নে কে কতটা দায়ীত্বহীন সে কথাই শুধু জানাবে৷ সরকার এবং বিরোধী দল- ‘মিউজিক্যাল চেয়ার'-এর মতো দু দলের অবস্থান অদল-বদল করলে ভূমিকা আর দৃষ্টিভঙ্গিতে যে সাময়িক পরিবর্তনই আসে এ কথা কে না জানে! আসন বদলালে ভাষণও বদলায়, বদলে যায় সংসদের ঘোষণা, সাংসদের দায়িত্ব, সবার ওপরে তখন দল বা সরকার, দেশ নয়, দেশের মানুষও নয়৷

গত ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে তরুণ প্রজন্ম দেখাচ্ছে নতুন স্বপ্ন৷ যু্দ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে প্রথমে জড়ো হয়েছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন তরুণ৷ পেছনে ছিল না আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার৷ ছিলনা ‘জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও' স্লোগান৷ তবু মানুষ এসেছে৷ দলে দলে যোগ দিয়েছে প্রজন্ম চত্বরে৷ কোনো জাতীয় নেতা নেই জেনেও এসে তাঁরা কণ্ঠ মিলিয়েছেন ‘ক- তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার তুই রাজাকার', ‘স-তে সাকা চৌধুরী, তুই রাজাকার তুই রাজাকার' স্লোগানে৷

জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সহিংস বিক্ষোভে নামার পরও ‘প্রজন্ম চত্বর' ইটের জবাবে পাটকেল মারার অপসংস্কৃতি অনুসরণ করেনি৷ জামায়াত-শিবির একদিকে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে, অন্যদিকে প্রজন্ম চত্বর গেয়েছে জাগরণের গান, শাহজালাল কোথাও বা আঁকা হয়েছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ছবি৷ একদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি, আরেকদিকে রং তুলির সৃষ্টিকর্ম, সপ্তসুরের সৃষ্টিসুখের উল্লাস৷ এখনো তাই চলছে৷ রক্তপাত হয়েছে দেশজুড়ে, বিচারের রায়ের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জামায়াত-শিবির মেরেছে মানুষ, অনেক সহযোদ্ধার প্রাণ গিয়েছে পুলিশের গুলিতে৷

এরকম সহিংসতার দিকে পা বাড়ায়নি প্রজন্ম চত্বরছবি: Reuters

সহযোদ্ধা? দেশে তো কোনো যু্দ্ধ হচ্ছেনা, তাহলে জামায়াত-শিবিরের এক কর্মী কেন আরেক কর্মীর সহযোদ্ধা হতে যাবে? দাবি এবং পাল্টা দাবি তো যুদ্ধেরই নামান্তর৷ রাজনীতির মাঠে কবে থেকেই বাজছে যুদ্ধের দামামা! হরতাল এবং হরতাল বিরোধী সহিংসতা কম দেখা হলো না৷ হরতালহীন দিনেও রোমহর্ষক সহিংসতা দেখিয়েছে জামায়াত-শিবির৷ ব্যতিক্রম প্রজন্ম চত্বর৷ দেশ-বিদেশে যেখানেই উঠছে যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি, শাহবাগের ঢেউ সেখানেই৷ প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার একটা দৃষ্টান্তও নেই৷ পরমত নিশ্চিহ্ন করতে একজনও তুলে নেয়নি অস্ত্র৷ একটা গাড়িও পোড়েনি৷ একটা ঘরেও ওঠেনি প্রিয়জন হারানোয় কান্নার রোল৷ শান্তিকামী মানুষের মনে প্রজন্ম চত্বরই সত্যিকারের বিজয়ী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ