৯ মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনটিকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে রাশিয়া৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার দিনটি উদযাপন ঘিরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের নতুন কোন ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
ঐতিহাসিক কারণে ইউরোপে বিভিন্ন দেশও ভিন্ন নামে দিবসটি পালন করে৷ ফ্রান্স ও স্লোভাকিয়াতে এদিন সর্বাত্মক ছুটি পালিত হয়৷ নাৎসিদের বিরুদ্ধে যারা জার্মানিতে লড়াই করেছেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মরণে ৮ মে দিবসটি পালন করে বার্লিন৷ নেদ্যারল্যান্ডসে এই দিবসটি পালিত হয় ৫ মে৷ আর রাশিয়া এটিকে বিজয় বা মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ৯ মে৷ এ বছর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া তা কিভাবে উদযাপন করবে সেদিকে নজর সারা বিশ্বের৷
গত কয়েক বছর ধরেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন দিনটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ জার্মান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ দিনটিকে সামনে রেখে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে ইতিহাসের একপাক্ষিক বর্ণণাই তুলে ধরছেন পুটিন৷ চলতি বছর এ দিনটিকে ঘিরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নতুন করে তিনি অপপ্রচার ছড়াতে পারেন এমনটাই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের৷
জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক দলের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রোডেরিখ কিজেভেটার মনে করেন, পুটিন এই দিন ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়োজিত হাজার হাজার সেনা সদস্যকে প্রভাবিত করতে পারেন৷ তথ্য অনুযায়ী, দেশটির অধিকৃত বন্দরনগরী মারিউপলে বড় ধরনের সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করতে পারে রুশ বাহিনী৷
রাশিয়ার উপর কে, কত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার উপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে পশ্চিমা দেশগুলো৷ সঙ্গে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান৷ পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়াও৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শীর্ষে যুক্তরাজ্য
রাশিয়ার উপর কারা কত নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তার হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট কাস্টেলাম ডট এআই৷ তাদের হিসাবে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ক্রেমলিনের উপর সবচেয়ে বেশি ৮৭৮টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ এই তালিকায় রুশ ব্যাংক, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আব্রাহোমোভিচের (ছবি) মতো ধনকুবের কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সৎ কন্যাও রয়েছেন৷
ছবি: Mike Egerton/empics/picture alliance
সম্পদ জব্দ করছে সুইজারল্যান্ড
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ৬১৭ কোটি ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড, যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার উপর সুইজারল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার সংখ্যা ৭৭৪টি৷
ছবি: Jean-Christophe Bott/EPA-EFE
আরো বাড়াতে চায় ইইউ
ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিভিন্ন খাত, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ কয়েক দফায় সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৭০৫-এ, যা আরো বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ এছাড়া ফ্রান্সের অর্থ বিভাগ নিজেরাও আলাদাভাবে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা করেছে, যার সংখ্যা ৬৯৬৷
ছবি: IAN LANGSDON/AFP/Getty Images
টার্গেটে মিডিয়া ব্যাক্তিত্বরাও
ক্যানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও৷ চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম নির্বাহীসহ দশ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করে দেশটি৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ান টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ানও৷ সব মিলিয়ে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৬ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্যানাডা৷
ছবি: Muhammed Ibrahim Ali/IMAGESLIVE via ZUMA Press Wire/picture alliance
বিনিয়োগকারীরাও ছাড় পাচ্ছে না
অস্ট্রেলিয়ায় সম্পদ আছে রাশিয়ার এমন ধনকুবেরদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ গত সপ্তাহে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ডে অ্যালুমিনা পরিশোধনাগারের বিনিয়োগকারী ওলেগ দেরিপাস্কা (ছবি)৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার উপর ৪৭৯টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture.alliance/dpa/Tass/V. Smirnov
অন্যদের চেয়ে কম যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে মিত্র দেশগুলোর তুলনায় এখনও তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি ছোট৷ কাস্টেলাম এর হিসাবে হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের উপর ২৯৩ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন৷ তবে ২৪ মার্চ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমা ও এর ৩২৮ সদস্য এবং ৪৮টি প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Brendan Smialowski/AFP
তৎপর জাপানও
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শুরু থেকেই সরব জাপান৷ রাশিয়ার রাজনীতিবিদ, তাদের স্বজনদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ তার মধ্যে আছেন ডুমার ১১ সদস্য, ব্যাংকার, শিল্পপতিও৷ ২২ ফেব্রুয়ারির পর এখন পর্যন্ত মোট ৮৮টি নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: The Yomiuri Shimbun/AP Images/picture alliance
নিষেধাজ্ঞায় শীর্ষে রাশিয়া
রাশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া দেশ৷ মোট সাত হাজার ৩৮৬টি নিষেধাজ্ঞার বোঝা বিশ্বের অন্যতম এই পরাশক্তির কাঁধে৷ এর মধ্যে চার হাজার ৩৬২টি দেয়া হয়েছে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরে৷ এর আগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান (৩৬১৬৷ এরপর রয়েছে সিরিয়া (২৬০৮), উত্তর কোরিয়া (২০৭৭), ভেনেজুয়েলা (৬৫১), মিয়ানমার (৫১০) ও কিউবা (২০৮)৷
ছবি: Mikhail Klimentyev/AP/picture alliance
নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য
২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত চার হাজার ৩৬২টি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে ব্যক্তির উপরে৷ তিন হাজার ৯১৫টি নিষেধাজ্ঞাই এ সংক্রান্ত৷ আর বাকি ৪৩৭টি দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের উপরে৷
ছবি: Anton Novoderezhkin/Tass/imago images
রাশিয়ার পাল্টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ক্রেমলিন৷ অন্যদিকে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোসহ ৩১৩ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এছাড়াও মার্চের শুরুতে রাশিয়া ‘অবন্ধুসুলভ’ ৪৮ দেশের তালিকা প্রকাশ করে৷ বুধবার পুটিন ঘোষণা দিয়েছেন দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য শোধ করতে হবে রুবলে৷
ছবি: Bai Xueqi/ Xinhua News Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
এদিকে দিনটি উদযাপন উপলক্ষ্যে রাজধানী কিয়েভে আয়োজিত অনু্ষ্ঠানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদোমির জেলেনস্কি বলেন, ‘‘আবারো শয়তান ফিরে এসেছে, ভিন্ন নামে এবং ভিন্ন স্লোগান নিয়ে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে এই শয়তান তার কৃতকর্মের দায় এড়াতে পারবে না৷ কোনো বাংকারেও লুকিয়ে থাকতে পারবে না৷’’
জার্মানিতে পুটিনপন্থী সমাবেশের আশঙ্কা
এদিকে দিনটি উপলক্ষ্যে জার্মানিতে অবস্থানরত রাশিয়ানদের অনেকেই পুটিনের সমর্থনে সমাবেশের আয়োজন করতে পারেন বলে জানিয়েছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বিভিন্ন শহরে গাড়িতে নিষিদ্ধ ‘জেড চিহ্ন' প্রদর্শন করতে পারেন তারা৷
ডি ভেল্ট পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার প্রেসিডেন্ট থমাস হালডেনভাং বলেন, রাশিয়ার অপপ্রচার ছড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস হতে পারে এটি৷
তিনি বলেন, ‘‘পুরো জার্মানিতেই গাড়ির প্যারেড ও সমাবেশ হতে পারে৷ জেড চিহ্ন নিয়ে তারা এমন প্যারেড বা সমাবেশে অংশ নিতে পারে৷''
ইউক্রেন হামলার সময় রাশিয়ার অনেক সেনাবহরে ইংরেজি জেড অক্ষরের প্রতীকটি দেখা গেছে৷ পরে জার্মানির কয়েকটি রাজ্য এই চিহ্ন ব্যবহারকারীকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সমর্থক বলে চিহ্নিত করে৷
পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানী বার্লিনসহ বড় রাজ্যগুলোতে নিরাপত্তারক্ষীরা বাড়তি প্রস্তুতি নিচ্ছে৷