1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৪০ হাজার চিঠিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ ডিসেম্বর ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ইতিহাস চর্চার ব্যাপারে বাংলাদেশে এখনো সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই৷ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ রয়েছে তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগটিই সবচেয়ে সফল৷

বিজয় দিবস
ছবি: DW/M. M. Rahman

২০০১ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে একটি মোবাইল জাদুঘর চালু করে৷ একটি বাসের মধ্যেই সাজিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস৷ বই পত্র, প্রামাণ্য দলিল, স্মৃতি, তথ্যচিত্র এসব দিয়ে সাজানো বাসটি ছুটতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে৷ ২০০৬ সাল থেকে এই প্রকল্পে যুক্ত করা হয় স্কুল৷ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে আর মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ করতে তাদের যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক ডয়চে ভেলেকে জানান, এটা হলো মুক্তিযুদ্ধের একটি মোবাইল জাদুঘর৷ ২২ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র আছে ‘বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস', দু'টি পোস্টার আছে – ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস' এবং ‘শান্তি সম্প্রীতির ভাবধারা'৷

তিনি বলেন, ‘‘ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এসে স্কুল শিক্ষার্থীদের অনেকেরই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আর্কাইভ দেখা সম্ভব হয় না৷ আমরা তাদের সামনে বলতে গেলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করি৷ একদিনের এই প্রোগ্রাম শেষে আমরা একটা আবেদন রাখি৷ আর তা হলো তাদের পরিবারের বা এলাকার একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে তা আমাদের চিঠি আকারে লিখে পাঠানো৷ এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পেয়েছি স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে৷ এই চিঠিগুলো আমাদের এখন অনেক কাজে লাগছে৷ আমরা মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা কথা জানছি৷ এগুলো কম্পোজ করে সংরক্ষণ করছি৷ যারা পাঠাচ্ছে তাদেরও আবার পাঠাচ্ছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেশের ৬৪ জেলার ১,৬০০ স্কুলে গেছি৷ দেশের সব স্কুলে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে৷ এই প্রকল্পে আমরা বিপুল সাড়া পাচ্ছি৷ একদিনের অনুষ্ঠান শেষে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভীষণভাবে উজ্জীবিত হয়৷ আমরা এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিচ্ছি আর অজানা ইতিহাস তুলে আনছি৷''

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পর্যাপ্ত নয়’

This browser does not support the audio element.

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা পদ্ধতি প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট এবং গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র৷ এর উদ্যোক্তা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন৷ রাজশাহীতে গত আগস্টে শুরু হয়েছে ‘গণহত্যা নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ' বিষয়ক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণ কোর্স৷ ৫০ প্রশিক্ষণার্থীর তিনমাসের এই কোর্সে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষক, গবেষক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারীরা৷

তারা এ প্রশিক্ষণ রপ্ত করার পর গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে মাঠপর্যায় থেকে তুলে আনবেন মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের ইতিহাস৷ প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস বিষয়ে দক্ষ দেশবরেণ্য অধ্যাপক, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক ও শিল্পীরা৷ তারা হাতে-কলমে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের শেখাচ্ছেন গবেষণা পদ্ধতি৷ প্রশিক্ষণ শেষে তারা রাজশাহী, নাটোর, পঞ্চগড় ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, অন্য দেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের নিয়ে গবেষণাপত্র রচনা করবেন৷ তাদের এই গবেষণাপত্রগুলো মূল্যায়ন করে মুদ্রণ করা হবে বই ও রচনা সংকলন৷ এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক৷

‘গেম বা অন্যকোনো ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরার সময় সতর্ক থাকতে হবে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে আনা, চর্চা এবং ছড়িয়ে দেয়ার একটা ভালো উদ্যোগ এটি৷'' মাগুরা জেলা সদরের কাশিনাথপুর গ্রামের এক শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সিপাহী ইসরাইল বিশ্বাসের সন্তান হাফিজুর রহমান মিন্টু৷ তিনিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে চেষ্টা করছেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে৷ তিনি ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করেছেন প্রায় দু'শতাধিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই৷ একটি কাভার্ড রিকশা ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বানিয়ে তিনি নিজে প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং অন্যান্য দিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান মাগুরা শহরসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়৷ প্রতিটি স্পটে তিনি দু'ঘণ্টা করে অবস্থান নিয়ে তার লাইব্রেরিতে থাকা বই বিনামূল্যে পাঠকদের পড়ার সুযোগ করে দেন৷

অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধকে ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরার কাজ করছেন৷ কেউ গেমস এর মাধ্যমে পুরো মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে৷ সেরকম একটি গেম হলো ‘ম্যাসিভ ওয়ার ৭১'৷  ত্রিমাত্রিক এই গেম নির্মানণকরেছে ম্যাসিভ স্টুডিও৷ এর সত্ত্বাধিকারী মাহবুব আলম বলেন, ‘‘এই গেমের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের ভাবনাকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি৷ মুক্তিযুদ্ধ কোনো গেম নয়৷ তাই এটাকে গেম বা অন্যকোনো ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরার সময় সতর্ক থাকতে হবে৷''

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিচ্ছিন্নভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷ তবে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়া এবং সার্বিক ধারণা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়৷

২০১৭ সালের প্রথম শ্রেণি থেকে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই বাংলা সাহিত্যে জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি' ও মমতাজ উদ্দীনের ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা' ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলাদা কোনো লেখা নেই৷ অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' (সমাজ বিজ্ঞান) বইটির ২ থেকে ৩০ পৃষ্ঠায় বালাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যভিত্তিক একটি লেখা রয়েছে৷

‘এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পেয়েছি স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে’

This browser does not support the audio element.

সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই ‘সপ্তবর্ণা'-য় ‘পিতৃপুরুষের গল্প' শিরোনামে একটি গল্প রয়েছে যেখানে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে৷ হারুণ হাবিবের লেখাটিতে ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল সেই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে৷ পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘বীরের রক্তে স্বাধীন এদেশ' শিরোনামে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে একটি গদ্য রয়েছে৷ অপর গদ্যটি ‘স্মরণীয় যারা' শিরোনামে লেখা৷ মুক্তিযুদ্ধে যাদের অসামান্য অবদান রয়েছে, এমন নয়জনকে নিয়ে এটি লেখা৷ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় শহিদ হওয়া এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবদান ও তাদের প্রতি নির্মমতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে খুবই সংক্ষেপে৷

বাংলা বইয়ের বাইরে পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধ সামরিক বাহিনী, পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উপাধিসহ সার্বিক বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷

হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পর্যাপ্ত নয়৷ আর সেটা তুলে ধরতে হলে সঠিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন৷ রাজনীতিবিদদের একটা দায়িত্ব আছে৷ কিন্তু সে দায়িত্ব তারা সঠিকভাবে পালন করছেন না বা করেননি৷ আর পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধতে তুলে ধরার কাছ খুবই বিচ্ছিন্ন৷'' তবে তিনি এও মনে করেন সঠিক ইতিহাস পেতে অনেক সময় লাগে৷ আর সেই সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি৷

এ বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ