মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ইতিহাস চর্চার ব্যাপারে বাংলাদেশে এখনো সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই৷ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ রয়েছে তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগটিই সবচেয়ে সফল৷
বিজ্ঞাপন
২০০১ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে একটি মোবাইল জাদুঘর চালু করে৷ একটি বাসের মধ্যেই সাজিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস৷ বই পত্র, প্রামাণ্য দলিল, স্মৃতি, তথ্যচিত্র এসব দিয়ে সাজানো বাসটি ছুটতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে৷ ২০০৬ সাল থেকে এই প্রকল্পে যুক্ত করা হয় স্কুল৷ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে আর মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ করতে তাদের যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক ডয়চে ভেলেকে জানান, এটা হলো মুক্তিযুদ্ধের একটি মোবাইল জাদুঘর৷ ২২ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র আছে ‘বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস', দু'টি পোস্টার আছে – ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস' এবং ‘শান্তি সম্প্রীতির ভাবধারা'৷
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় স্থাপনা
দীর্ঘ ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল বাংলাদেশে, যাতে ৩০ লাখ নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে পাক বাহিনী৷ প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সেইসব শহিদদের স্মরণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর
ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর৷ ১৯৭১-এর ৭ মার্চ এখানে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয়৷৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দলিলও স্বাক্ষরিত হয়েছিল এখানেই৷ স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে আছে বাঙালি জাতিসত্তার অমরতার প্রতীক ‘শিখা চিরন্তনী’৷ স্বাধীনতা স্তম্ভটি বস্তুত ১৫০ ফুট উঁচু একটি গ্লাস টাওয়ার৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
অপরাজেয় বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্ত্বরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’৷ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার নারী-পুরুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বিজয়ের প্রতীক এই ভাস্কর্যটির স্থপতি সৈয়দ অব্দুল্লাহ খালিদ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নিদর্শন ও স্মারকচিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকা শহরের সেগুনবাগিচার একটি পুরানো ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, প্রমাণাদি, নিদর্শন, রৈকর্ডপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে এখানে রাখা হয়৷ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে এ জাদুঘর স্থানান্তরিত হয় ঢাকার আগারগাঁও এলাকার নিজস্ব ঠিকানায়৷
ছবি: bdnews24.com/A. M. Ove
বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ
ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশেই শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর দেশের প্রখ্যাত সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে এই স্থানের পরিত্যক্ত ইটের ভাটার পেছনের জলাশয়ে ফেলে রাখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসররা৷ নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ড স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইটের ভাটার আদলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় জায়গাটিতে৷ এর স্থপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় এ দেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করে৷ তাঁদের স্মরণে ৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিরপুরে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়৷ এর স্থপতি ফরিদ ইউ আহমেদ ও জামি আল শাফি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশায় এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জাগ্রত চৌরঙ্গী
ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে অবস্থিত৷ ১৯৭৩ সালে নির্মিত এই ভাস্কর্যের স্থপতি আব্দুর রাজ্জাক৷ ডান হাতে গ্রেনেড, বাঁ হাতে রাইফেল, লুঙ্গি পরা, খালি গা, খালি পা আর পেশিবহুল এক মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য এটি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাছেই এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বিজয় ৭১
ময়মনসিংহের কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘বিজয় ৭১’৷ মহান মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক এ সৌধ৷ ভাস্কর্যটিতে একজন নারী, একজন কৃষক ও একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি রয়েছে৷ ভাস্কর্যটির দেয়াল জুড়ে আছে পোড়া মাটিতে খোদাই করা মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাবলী৷ ২০০০ সালে নির্মিত এ ভাস্কর্যের শিল্পী শ্যামল চৌধুরী৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অন্যতম একটি স্থান মেহেরপুরের মুজিবনগর৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ আম্রকাননে বাংলাদেশের অন্তরবর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল৷ ১৯৭১ সালের এ ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল সেখানে উদ্বোধন করা হয় এ স্মৃতিসৌধ৷ স্মৃতিসৌধটির নকশা করেন স্থপতি তানভীর করিম৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সাবাশ বাংলাদেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার চত্বরের মুক্তাঙ্গনের উত্তর পাশে অবস্থিত৷ রাকসু এবং দেশের ছাত্রজনতার অর্থ সাহায্যে শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই ভাস্কর্য বিনা পারিশ্রমিকে নির্মাণ করেন৷ ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম৷ এই স্মৃতিস্তম্ভে আছে দু’জন মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি৷ একজন অসম সাহসের প্রতীক, অন্য মুক্তিযোদ্ধার হাত বিজয়ের উল্লাসে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
11 ছবি1 | 11
তিনি বলেন, ‘‘ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এসে স্কুল শিক্ষার্থীদের অনেকেরই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আর্কাইভ দেখা সম্ভব হয় না৷ আমরা তাদের সামনে বলতে গেলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করি৷ একদিনের এই প্রোগ্রাম শেষে আমরা একটা আবেদন রাখি৷ আর তা হলো তাদের পরিবারের বা এলাকার একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে তা আমাদের চিঠি আকারে লিখে পাঠানো৷ এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পেয়েছি স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে৷ এই চিঠিগুলো আমাদের এখন অনেক কাজে লাগছে৷ আমরা মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা কথা জানছি৷ এগুলো কম্পোজ করে সংরক্ষণ করছি৷ যারা পাঠাচ্ছে তাদেরও আবার পাঠাচ্ছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেশের ৬৪ জেলার ১,৬০০ স্কুলে গেছি৷ দেশের সব স্কুলে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে৷ এই প্রকল্পে আমরা বিপুল সাড়া পাচ্ছি৷ একদিনের অনুষ্ঠান শেষে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভীষণভাবে উজ্জীবিত হয়৷ আমরা এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিচ্ছি আর অজানা ইতিহাস তুলে আনছি৷''
‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পর্যাপ্ত নয়’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা পদ্ধতি প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট এবং গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র৷ এর উদ্যোক্তা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন৷ রাজশাহীতে গত আগস্টে শুরু হয়েছে ‘গণহত্যা নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ' বিষয়ক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণ কোর্স৷ ৫০ প্রশিক্ষণার্থীর তিনমাসের এই কোর্সে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষক, গবেষক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারীরা৷
তারা এ প্রশিক্ষণ রপ্ত করার পর গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে মাঠপর্যায় থেকে তুলে আনবেন মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের ইতিহাস৷ প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস বিষয়ে দক্ষ দেশবরেণ্য অধ্যাপক, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, গবেষক ও শিল্পীরা৷ তারা হাতে-কলমে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের শেখাচ্ছেন গবেষণা পদ্ধতি৷ প্রশিক্ষণ শেষে তারা রাজশাহী, নাটোর, পঞ্চগড় ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, অন্য দেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের নিয়ে গবেষণাপত্র রচনা করবেন৷ তাদের এই গবেষণাপত্রগুলো মূল্যায়ন করে মুদ্রণ করা হবে বই ও রচনা সংকলন৷ এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক৷
‘গেম বা অন্যকোনো ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরার সময় সতর্ক থাকতে হবে’
তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে আনা, চর্চা এবং ছড়িয়ে দেয়ার একটা ভালো উদ্যোগ এটি৷'' মাগুরা জেলা সদরের কাশিনাথপুর গ্রামের এক শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সিপাহী ইসরাইল বিশ্বাসের সন্তান হাফিজুর রহমান মিন্টু৷ তিনিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে চেষ্টা করছেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে৷ তিনি ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করেছেন প্রায় দু'শতাধিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই৷ একটি কাভার্ড রিকশা ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বানিয়ে তিনি নিজে প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং অন্যান্য দিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান মাগুরা শহরসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়৷ প্রতিটি স্পটে তিনি দু'ঘণ্টা করে অবস্থান নিয়ে তার লাইব্রেরিতে থাকা বই বিনামূল্যে পাঠকদের পড়ার সুযোগ করে দেন৷
অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধকে ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরার কাজ করছেন৷ কেউ গেমস এর মাধ্যমে পুরো মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে৷ সেরকম একটি গেম হলো ‘ম্যাসিভ ওয়ার ৭১'৷ ত্রিমাত্রিক এই গেম নির্মানণকরেছে ম্যাসিভ স্টুডিও৷ এর সত্ত্বাধিকারী মাহবুব আলম বলেন, ‘‘এই গেমের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের ভাবনাকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি৷ মুক্তিযুদ্ধ কোনো গেম নয়৷ তাই এটাকে গেম বা অন্যকোনো ডিজিটাল মাধ্যমে তুলে ধরার সময় সতর্ক থাকতে হবে৷''
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিচ্ছিন্নভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷ তবে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়া এবং সার্বিক ধারণা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়৷
২০১৭ সালের প্রথম শ্রেণি থেকে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই বাংলা সাহিত্যে জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি' ও মমতাজ উদ্দীনের ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা' ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলাদা কোনো লেখা নেই৷ অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' (সমাজ বিজ্ঞান) বইটির ২ থেকে ৩০ পৃষ্ঠায় বালাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যভিত্তিক একটি লেখা রয়েছে৷
‘এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পেয়েছি স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে’
সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই ‘সপ্তবর্ণা'-য় ‘পিতৃপুরুষের গল্প' শিরোনামে একটি গল্প রয়েছে যেখানে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে৷ হারুণ হাবিবের লেখাটিতে ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল সেই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে৷ পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘বীরের রক্তে স্বাধীন এদেশ' শিরোনামে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে একটি গদ্য রয়েছে৷ অপর গদ্যটি ‘স্মরণীয় যারা' শিরোনামে লেখা৷ মুক্তিযুদ্ধে যাদের অসামান্য অবদান রয়েছে, এমন নয়জনকে নিয়ে এটি লেখা৷ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় শহিদ হওয়া এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবদান ও তাদের প্রতি নির্মমতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে খুবই সংক্ষেপে৷
বাংলা বইয়ের বাইরে পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধ সামরিক বাহিনী, পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উপাধিসহ সার্বিক বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷
হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পর্যাপ্ত নয়৷ আর সেটা তুলে ধরতে হলে সঠিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন৷ রাজনীতিবিদদের একটা দায়িত্ব আছে৷ কিন্তু সে দায়িত্ব তারা সঠিকভাবে পালন করছেন না বা করেননি৷ আর পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধতে তুলে ধরার কাছ খুবই বিচ্ছিন্ন৷'' তবে তিনি এও মনে করেন সঠিক ইতিহাস পেতে অনেক সময় লাগে৷ আর সেই সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি৷
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-র সংগ্রহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে৷
ছবি: AP
উত্তাল মার্চ
১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ ঢাকার রাস্তায় স্বাধীনতার দাবিতে হারপুন হাতে বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: AP
যশোরে মুক্তিবাহিনী
২ এপ্রিল ১৯৭১৷ যশোরে মার্চ করছে মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
ত্রিপুরায় বাংলাদেশি শরণার্থী
১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল৷ প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের ত্রিপুরার মোহনপুরের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: AP
ভারত সীমান্তের কাছে বাংলাদেশিদের অবস্থান
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল৷ ভারত সীমান্তের ৩০ মাইলের মধ্যে কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকেই অবস্থান করছিল৷
ছবি: AP
বেনাপোলের কাছে শরণার্থী শিবির
১৪ এপ্রিল ১৯৭১, যশোরের বেনাপোলের কাছে ভারত সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: AP
আহত মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বোমা হামলায় আহত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন বেসামরিক মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনী
১৯৭১ সালের ৩ রা আগস্ট৷ ঢাকার কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হেমায়েতউদ্দীন একটি গোপন ক্যাম্প থেকে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন৷
ছবি: AP
১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে প্লাটুন
১৩ নভেম্বর ১৯৭১৷ ফরিদপুরে রাইফেল হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ৷ ৭০ সদস্যের একটি প্লাটুন গড়া হয়েছিল সেখানে৷ সেই প্লাটুন দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক ও চিকিৎসা দ্রব্য সরবরাহ করত৷ একদম বামে থাকা ১৯ বছর বয়সি তরুণটি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ ৭০ জনের প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনীর পারুলিয়া দখল
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পারুলিয়া গ্রাম দখল করে নেয় মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
আখাউড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
২৯ নভেম্বর, ১৯৭১৷ আখাউড়ায় অস্ত্র পাহাড়া দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারা৷ তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় সৈন্যদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনাদের হামলা
২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ যশোরে পাকিস্তানি সেনাদের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে ভারত ৷ এক পাকিস্তানি সেনাসদস্য রাইফেল নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে৷ অন্য সেনারা তখন অস্ত্র তাক করে পরিখার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনা
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সীমান্তের কাছে ডোঙ্গারপাড়ায় খোলা মাঠে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন এক ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP
ডিসেম্বরেও ঢাকায় পাকিস্তানি সার্জেন্ট
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ রাজধানী ঢাকার অদূরে একটি এলাকায় একজন পাকিস্তানি সার্জেন্ট দুই সেনাকে নির্দেশনা দিচ্ছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধবিরতি
রবিবার ১২ ডিসেম্বর. ১৯৭১৷ ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষায় আছেন বিদেশিরা৷ একটি ব্রিটিশ বিমান অবতরণ করেছে৷ ৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় বিদেশিদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই ঐ বিমানটি পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: AP
ভারতীয় ট্যাংক
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বগুড়ার দিকে রওনা হয়েছে৷
ছবি: AP
চার রাজাকারকে হত্যার পর মুক্তিবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা চার রাজাকারকে হত্যার পর আল্লাহ’র উদ্দেশে শুকরিয়া জানাচ্ছেন মুক্তিসেনারা৷
ছবি: AP
16 ছবি1 | 16
এ বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷