1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিডিআর বিদ্রোহ: কমিশনের প্রতিবেদনের পর কী?

১ ডিসেম্বর ২০২৫

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যাদের দায়ী বলে চিহ্নিত করেছে তাদের প্রচলিত আইনে বিচারের সুপারিশ করেছে৷ রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়৷

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তদন্ত কমিশনের সদস্যরা (ফাইল ফটো)
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে যাদের দায়ী বলে চিহ্নিত করেছে তাদের প্রচলিত আইনে বিচারের সুপারিশ করেছে কমিশন৷ছবি: CA Press Wing

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল৷ কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা জড়িত তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি৷ পরবর্তী পদক্ষেপ সরকারের৷’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে৷ এই ঘটনার সাথে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা এবং পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে৷’’

তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে নতুন মামলার সুযোগ নেই৷ তবে আদালত আবেদনের ভিত্তিতে যদি রিকল করে তাহলে ফের তদন্ত শুরু হতে পারে৷ কারণ তদন্ত কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে গ্রহণযোগ্য হয় না৷’’

আর সাবেক কূটনীতিক মেজর (অব.) এমদদাদুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘ভারত ও ভারতীয় নাগরিকদের দায়ী করে যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তাতে দুই দেশের সম্পর্কে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷’’

অন্যদিকে, বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা, সবার নাম প্রকাশ ও প্রতিবেদন উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে৷ বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত এলাহী রহমান সিদ্দিকের ছেলে সাকিব রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হত্যার যে বিচার এখন উচ্চ আদালতে আছে তা সেটা অব্যাহত থাকবে৷ নতুনদের বিচারের আওতায় আনতে হবে৷’’

‘সবাইকে মুক্তি দিতে হবে’

This browser does not support the audio element.

তবে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. ফয়জুল আলম দাবি করেছেন, ‘‘সবাইকে মুক্তি দিতে হবে৷ কারণ তদন্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে সাধারণ বিডিআর সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত না৷ জড়িত ভারত, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা৷’’

তদন্ত প্রতিবেদনে যা আছে

রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে৷ পরে কমিশন প্রধান সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন৷ এতে জানানো হয়, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মূল সমন্বয়কারী সেই সময়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস৷ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ পুরো ঘটনায় শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত ছিলো৷ প্রতিবেদনে কীভাবে আলামত নষ্ট করা হয় তাও উল্লেখ করা হয়েছে৷

শেখ হাসিনা ও তাপস ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নাম এসেছে তদন্তে এসেছে৷

এর বাইরে শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবরকেও দায়ী করা হয়েছে৷

কমিশনের সভাপতি আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘ওই ঘটনার সময় ৯২১ জনের মতো ভারতীয় বাংলাদেশে এসেছিল৷ তার মধ্যে ৬৭ জনের মতো লোকের কোনো হিসাব মিলছে না৷ তারা কোন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে, এটা ঠিক বলা যাচ্ছে না৷’’ 

তিনি বলেন, ‘‘এই ব্যাপারেও আমরা সরকারকে সুপারিশ করেছি ওই ব্যক্তিরা কোথায়, কেন আসলো; সেটা খুঁজে বের করার জন্য৷ এ বিষয়ে ভারতের কাছে জানতে চাওয়ার জন্য আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি৷’’

‘ভারতীয় নাগরিকদের তালিকাও দিয়েছি’

মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান ডয়চে ভেলেকে সোমবার বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিবেদন সঠিক ও তথ্যভিত্তিক৷ প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ আছে৷ যারা বিডিআর হত্যায় জড়িত তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি৷ ভারতীয় যে নাগরিকদের কথা বলা হয়েছে তাদের তালিকাও আমরা দিয়েছি৷ আমরা এর উদ্দেশ্যও বলেছি৷ আমাদের তদন্তে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি৷ আর যারা জড়িত তাদের প্রচলিত আইনে বিচারের সুপারিশ করেছি৷ বাকিটা সরকারের কাজ৷’’

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘বিডিআর হত্যা মামলাটি এখন আপিল আদালতে আছে৷ বিচারিক আদালতের রায়ে অনেকেরই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে৷ এখন একই ঘটনায় যেমন দুইটি মামলা চলতে পারে না, তেমনি এখন যে বিচার সর্বোচ্চ আদালতে চলছে সেটাতো বন্ধ করা যাবে না৷ ফলে আপনি যদি বলেন আবার মামলা করে নতুনদের সেখানে আসামি করতে হবে তাহলেতো আগের মামলা বাতিল করতে হবে৷ যারা দণ্ডিত হয়েছে তাদের দণ্ড বাদ হয়ে যাবে৷ এটাতো আইনে নেই৷ তবে যদি রিকল করা হয়, আদালত যদি মনে করেন তাতে যুক্তি আছে তাহলে নতুন করে আবার তদন্ত শুরু হতে পারে৷ তাতেও আগের দণ্ড স্থগিত হয়ে যাবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এই তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের কোনো আইনগত মূল্য নেই৷ আবার তদন্ত করতে হলে পুলিশ বা পুলিশের যে সব সংস্থার তদন্তের এখতিয়ার আছে তারাই তদন্ত করতে পারবে৷ ওই তদন্তে কমিশনের তদন্ত সহায়ক হতে পারে৷’’

‘‘আর এই কমিশন গঠন করার সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আপত্তি করা হয়েছিলো যে, যেটার বিচার হয়ে গেছে সেটা নিয়ে যেন আর কিছু করা না হয়৷ এখন সমস্যা হলো যাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে তাদেরকে কি আপনি ছেড়ে দিয়ে আবার তদন্ত করবেন? তাহলে যে সেনা কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা কি সেটা মানবেন?’’

সাবেক কূটনীতিক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘এই প্রতিবেদনে এক্সাজারেশন আছে৷ যা বলা হয়েছে তা আইনের দৃষ্টিতে প্রমাণ করা যাবে না৷ আর আগে একটা তদন্ত হয়েছে৷ তার বিচার হয়েছে৷ এখন আরেকটা তদন্তে নতুন তথ্য দেয়া হয়েছে৷ ফলে বিষয়টি কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো?’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখানে ভারত ও ভারতীয়রা কীভাবে জড়িত, তার কী তথ্যপ্রমাণ আছে সেটা আমি এখনো জানি না৷ কারণ পুরো রিপোর্ট তো প্রকাশ হয়নি৷ পত্রপত্রিকায় দেখেছি৷ তবে যা দেখেছি তাতে মনে হচ্ছে এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে এই প্রতিবেদন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ এমনিতেই সম্পর্ক খারাপের দিকে৷ এখন তা আরো খারাপ হবে৷’’

‘‘এই কমিশন গঠনের আগে কিন্তু সেনাপ্রধান রাওয়া ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন এনাফ ইজ এনাফ, ফুল স্টপ৷ তিনি নিজেও কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের সময় উদ্ধার অভিযানে ছিলেন,’’ বলেন তিনি৷

পরিবারের সদস্যরা যা বলছেন

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মর্তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে৷ একইসঙ্গে জড়িত কেউ যেন বিচার থেকে রেহাই না পায়, সে বিষয়ে সরকারের কঠোর ভূমিকা কামনা করেছেন তারা৷ নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা উল্লেখ করে শহিদ পরিবারগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছেন৷

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত এলাহী রহমান সিদ্দিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটা মামলা করেছিলাম৷ এখন তদন্তে যাদের নাম এসেছে তাদের যেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর প্রসিকিউট করেন৷ সেটা করার পরপরই প্রতিবেদন যেন প্রকাশ করা হয়৷ কারণ আমরা জানি এখানে সামরিক বাহিনীর অনেক কর্মকতার নাম আছে৷ সেই কারণে সবার নাম প্রকাশ করা হয়নি৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই তদন্ত কমিশনের এখতিয়ার হলো মামলাটি যে পর্যন্ত হয়েছে তার বাইরে৷ ফলে হত্যা মামলায় যাদের দণ্ড হয়েছে যেটা নিয়ে নতুন করে কিছু করার সুযোগ নেই৷ কারণ তাদের অপরাধ প্রমাণিত, সেটা সেভাবেই থাকবে৷’’

‘‘তবে ৯ হাজারের মতো বিডিআর সদস্যের অভ্যন্তরীণ বিচারে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হয়েছে৷ তারা সাজা খেটে বের হয়ে গেছে৷ তারা এখন ক্ষতিপূরণ চাইছে৷ সেটা তো আমাদের কাছে চায় না৷ সরকারের কাছে চায়৷ সরকার দিলে দেবে৷ আর বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮০০ জনকে আটক রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে৷ কিন্তু তাদের বিচারই শুরু হয়নি৷ তাদের মধ্যে ৩৫০ জনের মতো জামিন পেয়েছে গত বছরের ৫ আগস্টের পর৷ তারা জামিন পেতেই পারে৷ কিন্তু হত্যা মামলার ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না,’ বলেন তিনি৷

বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতির বক্তব্য 

বিডিআর বিদ্রোহে চাকরিচ্যুত এবং সাজাপ্রাপ্তদের সংগঠন বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. ফয়জুল আলম বলেন, ‘‘তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে এটা প্রমাণ হয়ে গেছে বিডিআর সদস্যরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত না৷ এরসঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের নেতারা আর ভারত৷ তাই ফাঁসি, যাবজ্জীবন থেকে বিভিন্ন মেয়াদে যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে৷ তারা তো দায়ী নয়, তাদের ওপর দায় চাপানো হয়েছে৷’’

‘‘এর বাইরে ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর সদস্যকে বিডিআরের অভ্যন্তরীণ বিচারে চাকরিচ্যুত করা হয়েছেন এবং শাস্তি দেয়া হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ আর বিস্ফোরক মামলায় এখনো যারা আটক আছেন তাদের জামিন দিতে হবে৷ তাদের মধ্যে তিনশ’র কিছু বেশি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিন পেয়েছেন,’’ বলেন তিনি৷ 

ফয়জুল আলম নিজেও সাত বছর কারাভোগ করে মুক্ত হয়েছেন৷ এই দাবিতে সোমবার বিকালে তারা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন৷

বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও বিচার

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ২৭ মিনিটের দিকে বিজিবির (তখনকার বিডিআর) বার্ষিক দরবার চলাকালে দরবার হলে ঢুকে পড়ে একদল বিদ্রোহী সৈনিক৷ এদের একজন তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে৷ এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা৷ বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে৷ পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশপাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে তারা৷

বিদ্রোহীরা দরবার হল ও এর আশপাশ এলাকায় সেনা কর্মকর্তাদের গুলি করতে থাকে৷ তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন সেনা কর্মকর্তারা৷ ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়৷ পরে পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর৷ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ৷ ৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে তখনতার বিডিআর মহাপরিচালকসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিজিবি সদস্য ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন৷

এই ঘটনায় দুইটি মামলা হয়৷ একটি বিস্ফোরক আইনে এবং আরেকটি হত্যা মামলা৷ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত হত্যা মামলার রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়৷ খালাস দেয়া হয় ২৭৮ জনকে৷ চারজন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পায়৷

পরে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জন আসামির মধ্যে ১৩৯ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন৷ একই সঙ্গে আটজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেয়া হয়৷

এছাড়া বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ জন আসামির মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট৷ এদের মধ্যে দুইজন আসামির মৃত্যু হয় এবং ১২ জন আসামিকে খালাস দেয়া হয়৷

বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মামলায় এত বেশি সংখ্যক আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় আর কখনো হয়নি৷ আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সবাই সাবেক বিডিআরের সদস্য৷ ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ রাইফেলস-এর (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়৷

এই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা আরেকটি মামলার এখনো বিচার শুরু হয়নি৷ ওই মামলায় কমবেশি ৮৩৫ জন বিডিআর সদস্য কারাগারে ছিলেন৷ গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাড়ে তিনশ’র মতো জামিন পেয়েছেন৷

আর বিডিআরের অভ্যন্তরীণ বিচারে কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুত এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ