অপরাধ ফেসবুক পোস্ট। বৃহস্পতিবার হংকংয়ের নতুন নিরাপত্তা আইনে চার ছাত্রকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
হংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন নিয়ে গোটা বিশ্ব সরগরম। হংকংয়ের নাগরিক থেকে শুরু করে অ্যামেরিকা, ইউরোপ-- সকলেরই বক্তব্য চীন যে নতুন আইন চাপিয়ে দিয়েছে হংকংয়ের মানুষের উপরে তা কেবল অগণতান্ত্রিক নয়, মানবতা বিরোধী। বৃহস্পতিবার রাতে সেই আইনে চারজনকে গ্রেফতার করল চীনের পুলিশ। অভিযুক্ত সকলেই ছাত্র। বয়স ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। পুলিশের অভিযোগ, ফেসবুকে হংকংয়ের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ওই ছাত্ররা। তারই জেরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী এ ধরনের কার্যকলাপ এখন হংকংয়েসম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ছাত্রদের ল্যাপটপ, ফোন সহ বহু ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
হংকংয়ের স্বাধীনতাকামী ছাত্রদের একটি দল এই গ্রেফতারের পরে জানিয়েছে অভিযুক্ত টনি চাং তাদের দলের প্রাক্তন নেতা। বেজিং নিরাপত্তা আইন ঘোষণা করার পরে তাদের দলটি কার্যকলাপ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ নতুন আইন অনুযায়ী, বিচ্ছিন্নতা, বাইরের দেশের সঙ্গে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে যোগাযোগ রাখা অপরাধ বলে গণ্য হবে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গত কয়েক দিন ধরে টনি এবং তাঁর অন্য সহযোগীদের নজরে রাখছিল পুলিশ। তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন, কী লিখছেন, কাদের সঙ্গে দেখা করছেন-- সবই খোঁজ রাখা হচ্ছিল। তারই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ টনিকে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়। বাকি তিনজনকেও কাছাকাছি সময়ে পুলিশ আটক করে। আটক সকলেই জুন মাস পর্যন্ত হংকংয়ের স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলন করেছেন।
২০১৯: বিক্ষোভের বছর
জাতিগত বৈষম্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের দাবি নিয়ে এবছর সারা বিশ্বের লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন৷ ভারত থেকে হংকং বা ইরাক থেকে সুদান, দাবি আদায়ে পুরো সাল জুড়েই রাস্তায় গণআন্দোলন চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Sen
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
বছরের শেষ দিকে এসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে পুরো ভারতে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে৷ ধর্মীয় বৈষম্যপূর্ণ ওই আইনের বিরুদ্ধে সব ধর্মের লোকজন একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছেন, এক সপ্তাতেই ঝরেছে অন্তত ২৩ প্রাণ৷
ছবি: Reuters/D. Sissiqui
বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাজধানী দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলে পুলিশ পাল্টা আঘাত করে; ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
হংকংয়ের স্থিতিশীলতায় ধাক্কা
চীনের মূলভূখণ্ডে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে জুন থেকে হংকংয়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা এখন স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলের স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে৷ গণদাবির মুখে সেপ্টেম্বরেই বিলটি বাতিল করা হলেও আন্দোলন থামেনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
নির্বাচনেও প্রভাব
হংকংয়ের স্বাধিকার আন্দোলনে লাখো মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাই সাড়া ফেলেছে যে নভেম্বরে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীর স্থানীয় নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থিরা বিশাল জয় পেয়েছেন৷
ছবি: Reuters/T. Siu
আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে ইরাক
সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের আমল থেকেও ‘খারাপ সময়ের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ইরাকিরা৷ দুর্নীতি, বেকারত্ব, সরকারের উপর ইরানের প্রভাব ইত্যাদি নানা অভিযোগ নিয়ে অক্টোবর থেকে সাধারণ মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ বিক্ষোভ দমনে সরকারের নৃংসতায় এরই মধ্যে ৪৬০ মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
বৈরুতে সংহতির মুষ্টি
জ্বালানি ও তামাক পণ্যের উপর বাড়তি করারোপ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অক্টোবরে যে আন্দোলন শুরু হয় তা থামাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাদ হারিরি৷ কিন্তু পদ থেকে সরে গেলেও হারিরি ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে যাওয়ায় বিক্ষোভ চলছে৷
ছবি: Reuters/A. M. Casares
ইরানে জ্বালানি তেল নিয়ে বিক্ষোভ
বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে নভেম্বর থেকে দেশটিতে জ্বালানি তেলের উপর রেশনিং শুরু হয়, পেট্রোলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ যার বিরুদ্ধে ২১টি নগরীতে সহিংস বিক্ষোভ হয়৷ বিক্ষোভে হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের৷
ছবি: Getty Images/AFP
ক্ষমতার লড়াই
এপ্রিলে সুদানের ক্ষমতা থেকে ওমর আল-বশিরকে উৎখাতের পর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থিদের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার লড়াই চলছে৷ যাতে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
রঙিন বিক্ষোভ
চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ এবং আরো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, অবসর ভাতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে দুই মাস আগে চিলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ তবে বিক্ষোভে এখনো নৃশংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
স্বাধীনতার লড়াই
স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বার্সেলোনা বহুদিন ধরেই স্বাধীনতা চাইছে৷ স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন হলেও কেন্দ্র সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়৷ মাদ্রিদ সরকারের দমনের বিরুদ্ধে কাতালুনিয়ায় বিক্ষোভ তাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷
ছবি: REUTERS/J. Nazca
10 ছবি1 | 10
বস্তুত, গোটা ২০১৯ সাল জুড়েই হংকংয়ে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। ২০২০ সালের গোড়ায় সেই আন্দোলন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, চীন পুলিশ এবং প্যারামিলিটারি দিয়েও তা দমন করতে পারেনি। এরপরেই গত জুন মাসে নতুন আইনের কথা জানায় বেজিং। নতুন নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী এ ধরনের আন্দোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে আন্দোলনরত প্রতিটি দলই সাময়িক ভাবে কার্যকলাপ স্থগিত রাখে।
আন্দোলনকারীদের একাংশের বক্তব্য, এ বার আর হংকংয়ে বসে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। দেশের বাইরে গিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হবে। কিন্তু চীনের বক্তব্য, বিদেশে বসে যদি কোনও হংকংয়ের নাগরিক আন্দোলন চালানোর চেষ্টা করেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নিয়মও নতুন আইনে আছে। ফলে কোনও ভাবেই আন্দোলন নতুন করে শুরু করা যাবে না।
চীনের এই নতুন আইন নিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজনীতিবিদ থেকে কূটনীতিবিদ-- অনেকেরই বক্তব্য, এই আইন মানবতা বিরোধী, অগণতান্ত্রিক এবং মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী। যদিও চীন এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, এই আইন মানুষের অধিকার খর্ব করছে না। দেশের বিরুদ্ধে কেউ যাতে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেটুকুই নিশ্চিত করা হয়েছে এই আইনের মাধ্যমে।
যুক্তরাজ্যের হাত থেকে হংকং চীনের কাছে গেলেও দীর্ঘ দিন ধরে সেখানকার মানুষ বহু স্বাধীনতা পেয়েছেন। চীনের শাসনে থাকলেও বিশেষ অধিকার ছিল তাদের। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নতুন নিরাপত্তা আইন হংকংয়ের সেই বিশেষ অধিকার কেড়ে নিয়েছে।