বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন তিনি একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার সই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৩০ হাজার শরণার্থীকে গুয়ান্তানামো বে জেলে পাঠানোর জন্য সেখানে শরণার্থী শিবির তৈরির নির্দেশ দেবেন তিনি।
সামরিক এবং নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এদিন আরেকটি শরণার্থী বিষয়ক আইনে সই করেছেন ট্রাম্প। যার নাম ল্যাকেন রিলে অ্যাক্ট।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, গুয়ান্তানামো বে জেলে যে শরণার্থী শিবির তৈরি করা হবে, সেখানে অপরাধপ্রবণ শরণার্থীদের রাখা হবে, যারা মার্কিন নাগরিকদের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে। বস্তুত, এই ব্যক্তিদের 'অবৈধ এলিয়েন' বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের কথায়, ''এই শরণার্থীদের মধ্যে কিছু লোক এত খারাপ যে তাদের আমরা কোনো দেশে ফেরতও পাঠাতে চাই না। কারণ, আমরা চাই না, তারা আবার ফিরে আসুক অ্যামেরিকায়।''
শরণার্থী নিয়ে ট্রাম্পের মনোভাব
২০২৪ সালে নির্বাচনী প্রচারে নেমেই শরণার্থী এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে নতুন করে ভাগ্য নির্ধারণ হলো কুখ্যাত গুয়ান্তানামো জেলের৷ ২০০৯ সালে জেলটি বন্ধ করার কথা বলেছিলেন বারাক ওবামা৷ ট্রাম্প জানিয়েছেন, বন্ধ তো হবেই না, বরং আরো বন্দি পাঠানো হবে৷
ছবি: Reuters/B. Linsleyবলা হয়, মানবিকতা শব্দটির কোনো অস্তিত্ব নেই এই জেলে৷ মার্কিন এলিট ফোর্স ইউএস মেরিনের অন্যতম বেস কিউবার গুয়ান্তানামো৷ কুখ্যাত আন্তর্জাতিক অপরাধীদের এই জেলে রাখা হয় বলে দাবি৷ চলে অকথ্য অত্যাচার৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, এই জেলের বহু অপরাধীরই কোনো বিচার হয় না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Foxদিনের ২৪ ঘণ্টা কঠোর নিয়মের মধ্যে কাটাতে হয় জেলের বন্দিদের৷ তবে সকালে নমাজ পড়তে দেওয়া হয়৷ দল বেঁধে বন্দিরা সে সময় দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে নমাজ পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Linsleyএটাই হলো গুয়ান্তানামো বে জেলের প্রধান ফটক৷ এক বন্দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভেতরে৷ নিরাপত্তার চক্রব্যূহ তৈরি করা হয়েছে জেল চত্বরে৷ আজ পর্যন্ত কেউ সেই নিরাপত্তার বলয় ভেঙে বেরতে পারেনি৷ ওবামা বলেছিলেন, বন্ধ করে দেওয়া হবে এই জেল৷ অপরাধীদের অন্যত্র পাঠানোও হচ্ছিল৷ ট্রাম্পের ঘোষণার পর নতুন করে সাজানো হচ্ছে গুয়ান্তানামো৷
ছবি: Getty Images/U.S. Navy/S.T. McCoyবন্দিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার বিশেষ সুযোগ পায় না এই জেলে৷ দিনের সামান্য সময়েই তারা সেল থেকে মুক্তি পায়৷ কথা বলার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট জায়গা৷
ছবি: Getty Images/B. Linsleyজেলের ভিতর বন্দিদের জন্য রয়েছে কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা৷ কিন্তু সেই ক্লাসেও তাদের পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়৷ কখনো কখনো হাতও বেঁধে রাখা হয় চেয়ারের সঙ্গে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Shephardজেলে ঢোকার সময় বন্দিদের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে নেওয়া হয়৷ বদলে পাওয়া যায় পরনের পোশাক, তোয়ালে, চটি আর সামান্য খাবার৷ আর অবশ্যই হাতকড়া৷
ছবি: Getty Images/J. Mooreদিনের অধিকাংশ সময় এই ঘরেই কাটে বন্দিদের৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এই ঘরে জেরা করা হয় তাদের৷ অভিযোগ, অকথ্য অত্যাচারও চালানো হয়৷ বহু সময়েই জেরার সময় বন্দিদের চোখ বেঁধে রাখা হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Raedleএক বন্দিকে সেল থেকে জেরার ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াও অনেক সময় এই রাস্তায় ছেড়ে রাখা হয় হিংস্র কুকুর৷ বন্দিরা দাঁড়িয়ে পড়লে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কুকুর৷
ছবি: Getty Images/J. Mooreঅধিকাংশ সেলই অপ্রশস্থ৷ সবুজের চিহ্নমাত্র নেই আশপাশে৷ তারই মধ্যে বন্দিরা খুঁজে নেয় তাদের প্রার্থনার জায়গা৷
ছবি: Getty Images/J. Mooreদু’রকমের বন্দি আছে এই জেলে৷ একদলকে মনে করা হয় অতি অপরাধী৷ তাদের জন্য বরাদ্দ হয় আরো ছোট সেল৷ তুলনায় কম অপরাধীদের সেলের পরিসর হয় সামান্য বড়৷ এটা তেমনই এক সেল৷ শোনা যায়, ছোট সেলের বহু বন্দিই মানসিক বিকার হারিয়ে ফেলেন কয়েকবছরের মধ্যে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Linsley বস্তুত, ক্ষমতায় আসার পরেই একের পর বিতর্কিত এবং কড়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ট্রাম্প। শরণার্থীদের নিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিমান বিভিন্ন উড়ে যাচ্ছে। শরণার্থীদের হাতকড়া পরিয়ে প্লেনে তোলা হচ্ছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলেও বহু শরণার্থীকে ডিপোর্ট করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এভাবে সামরিক বিমানে হাত কড়া পরিয়ে পাঠানো হয়নি। ট্রাম্পের এবারের সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে আরো বিতর্ক সৃষ্টি করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ট্রাম্প বলেছেন, গুয়েনতানামো বে জেলে যাদের পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে, তারা ভয়াবহ অপরাধী। অন্য দেশে ডিপোর্ট করলে তারা আবার ফিরে আসবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। তা-ই তাদের গুয়ান্তানামো বে জেলে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
বিতর্কিত গুয়ান্তানামো বে
৯/১১-র পর গুয়েনতানামো বে জেল তৈরি করা হয়েছিল। মূলত সন্ত্রাসীদের জন্য তৈরি সেই জেলে বহু মানুষকে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তখন থেকেই এই জেল নিয়ে নানা বিতর্ক। জেলের ভিতর নিপীড়নের বহু কাহিনি আছে। বারাক ওবামা জানিয়েছিলেন, ধীরে ধীরে এই জেল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ক্ষমতা ছাড়ার আগে জো বাইডেন বেশ কিছু ব্যক্তিকে ওই জেল থেকে মুক্তি দিয়েছেন, এক যুগ কেটে গেলেও যাদের কোনো বিচার হয়নি। সেই জেলেই শরণার্থীদের রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)