টানা তিন মাসব্যাপী আর জি কর আন্দোলন চলেছে। জনতা রাজপথ দখল করেছে। তা সত্ত্বেও আন্দোলন থিতিয়ে যেতে না যেতেই ফিরিয়ে আনা হল বিতর্কিত চিকিৎসক অভীক দে-কে।
বিজ্ঞাপন
গত ৯ আগস্ট আর জি করের বক্ষরোগ বিভাগের সেমিনার রুমে এই অভীক দে উপস্থিত ছিলেন। এখানে পাওয়া গিয়েছিল তরুণীর চিকিৎসকের দেহ। তুমুল বিতর্কের জেরে মেডিকেল কাউন্সিলের সমস্ত কাজকর্ম থেকে অভীককে সরানো হয়েছিল। তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কাউন্সিলে। একইভাবে কাউন্সিলে ফিরে এসেছেন বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। এ নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা।
‘আবার একটা অভয়ার কান্ডের জন্য তৈরি থাকতে হবে’
অভীক ও বিরূপাক্ষ
আর জি কর হাসপাতালে ৯ আগস্ট লাল জামা পরে দেখা গিয়েছিল চিকিৎসক অভীক দেকে। কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক দাবি করেছিলেন তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ। যদিও আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এই দাবী নাকচ করে দিয়ে বলেন যে তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট নন। তিনি আদতে এই হাসপাতালেরই কেউ নন। বহিরাগত হয়েও অভীক কীভাবে সেদিন সকালে সেমিনার রুমে উপস্থিত হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এরপর অভীককে ঘিরে একাধিক অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল থ্রেট কালচার ও দুর্নীতি। বিভিন্ন হাসপাতালে পড়ুয়াদের হুমকি দিয়ে হাতে রাখা হতো, এই অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে রয়েছে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও। চিকিৎসক আন্দোলন তুঙ্গে থাকায় মাস দুয়েক আগে মেডিকেল কাউন্সিল থেকে সরানো হয়েছিল তাকে।
অভীকের মতো প্রায় একই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন বিরুপাক্ষ বিশ্বাস। তাকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সাসপেন্ড করেছিল। তিনি ছিলেন কাউন্সিলের এথিক্যাল কমিটির সদস্য। চিকিৎসকদের আন্দোলন চলাকালীন বিরুপাক্ষের রেকর্ডেড ফোন কল ভাইরাল হয়। এই ক্লিপের সত্যতা ডিডাব্লিউ যাচাই করেনি। এখানকার কথোপকথনে শোনা গিয়েছিল, এক সিনিয়র তার জুনিয়র মেডিকেল ছাত্রকে রীতিমতো শাসানি দিচ্ছে। বিরুপাক্ষ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অস্বীকার করেছেন অভীকও।
অপসারিত চিকিৎসককে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের বড় অংশ। এর বিরুদ্ধে কাউন্সিলের সামনে অবস্থানে বসেন তারা। 'জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস' সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখায়। কাউন্সিলের বৈঠকেই এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন কোনও কোনও চিকিৎসক। প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য দপ্তর যাকে সাসপেন্ড করেছে, তাকে কিভাবে কাউন্সিলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে?
কলকাতার প্রতিবাদস্থলের চেহারা এখন কেমন?
আরজি করে চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের পর উত্তাল হয়েছিল কলকাতা। চলছিল অন্য প্রতিবাদও। আজ সেই ছবিটা কেমন?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আরজি করের বিক্ষোভস্থল
প্রতিবাদের কেন্দ্রস্থল ছিল এটাই। প্রতিবাদীদের ভিড়ে, স্লোগানে, নতুন নতুন পোস্টারে প্রতিবাদস্থলের চেহারা আলাদা ছিল। এখন সেই জায়গাটা ফাঁকা। জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে দুইটি সংগঠন হয়েছে। সবাই কাজে ফিরেছেন। এই জায়গার পাশ দিয়ে গেলে আগের বিক্ষোভের ছবিগুলো চোখে ভেসে ওঠে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পোস্টারে পোস্টারে
প্রতিবাদস্থলের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পোস্টার। শুধু প্রতিবাদীরাই নেই। একসময় জোরালো প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল কলকাতা। সাধারণ মানুষ নেমে এসেছিলেন পথে। আজ তার কেন্দ্রস্থলে শূন্যতা বিরাজ করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আছে দেওয়াললেখা
আরজি কর হাসপাতালে ঘুরলেই চোখে পড়বে নানা ধরনের পোস্টার, ছবি ও দেওয়াললেখা। তার পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা, আসা-যাওয়া করছেন রোগীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একই ছবি মেডিক্যাল কলেজেও
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও লাগাতার বিক্ষোভ হয়েছে। সেই বিক্ষোভস্থলে এখন রোগীর আত্মীয়রা একটু বিশ্রাম করে নিচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তায় ছবিগুলো এখনো আছে
মেডিক্যালের সামনে রাস্তায় প্রতিবাদের ছবি মলিন হলেও এখনো আছে। আছে মেডিক্যালের ভিতরের পোস্টার ও দেওয়াললেখাও। নেই সেই প্রতিবাদ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ধর্মতলাও স্বাভাবিক
ধর্মতলার অবস্থানমঞ্চের সামনের অবস্থা স্বাভাবিক। সেখানে রাস্তায় এই ছবি না থাকলে বোঝাই যেত না, এখানে অবস্থান, প্রতিবাদ হয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গান্ধীমূর্তির পাশটাও ফাঁকা
এখানে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাতেন এসএলএসটি-র চাকুরিপ্রার্থীরা। সেই জায়গাও এখন ফাঁকা। অন্তত বুধবার এখানে কোনো প্রতিবাদকারীর দেখা পাওয়া যায়নি। তারা আর রোজ আসেন না বা আসতে পারেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিবাদ চলছে
ডিএ বা মহার্ঘভাতা-সহ নানা দাবিতে সরকারি কর্মীদের বিক্ষোভ চলছে। তারা ৬৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গ্রুপ সি ও ডি-র কর্মীদের বিক্ষোভ
এছাড়াও চলছে সরকারি গ্রুপ সি ও ডি কর্মীদের বিক্ষোভ। তাদের বিক্ষোভ ৭৮৭ দিনে পড়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভও চলছে
মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির কাছে আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভও চলছে। কলকাতা হাইকোর্ট ১৪ হাজার ৫২টি খালি পদে নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, এই নিয়োগ নিয়েও গড়িমশি করা হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
যদিও কাউন্সিলের সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ের বক্তব্য, "আর জি করের ঘটনার পর অভীককে কাউন্সিলের কাজ থেকে অপসারিত করা হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। অভীক নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তাই তাকে পদে ফেরানো হয়।"
সহ সভাপতি সুশান্ত রায় এক সুরেই বলেছেন, "অভীক ও বিরুপাক্ষের বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। তাই তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।"
সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া
কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ চরমে উঠেছে। তথ্য ও প্রমাণ না থাকার দাবি খারিজ করছেন চিকিৎসকরা। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "মেডিকেল কাউন্সিলে যারা আছেন, তাদের অনেকের নামই থ্রেট কালচার ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আছে। অভয়া কান্ডের পর মানুষের আন্দোলন এত জোরদার হয়েছে যে সেই আন্দোলনের ফলে তারা কিছুটা চাপে পিছু হটে ওদের বিরুদ্ধে কিছু সাময়িক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। মেডিকেল কাউন্সিলের সাধারণ নিয়ম, বিধি মেনে মিটিং করে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আন্দোলনের চাপ নেই, আবার মেডিকেল কাউন্সিলিংয়ের কাজগুলিতে তাদের ডাকা হচ্ছে। আমরা জানি তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রমাণের কোন শেষ নেই।"
তার বক্তব্য, "সরকারের তৈরি এনকোয়ারি কমিটি তাদের বিরুদ্ধে অনেক তথ্য প্রমাণ পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটিও সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আসলে ঘুরপথে দুর্নীতি, থ্রেট কালচারকে ফিরিয়ে আনার একটা চেষ্টা চলছে, যাতে চিরদিনের জন্য এগুলো এখানে বহাল থাকে। যে সমস্ত চিকিৎসক আন্দোলন করছেন তাদের একটা বার্তাও দেয়া হচ্ছে যে এই মেডিকেল কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য দপ্তরকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসক এবং জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট- এর সদস্য ডাঃ অনিন্দ্য মণ্ডল ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি মিটিংয়ে দেখেছিলাম, যারা অভিযুক্ত তাদের প্রতি ওর একটা সফট কর্নার ছিল। যারা অভিযুক্ত ছিল তাদেরকে অভিযুক্ত বলা যাবে না, এসব কথাবার্তা শুনেছিলাম। যারা থ্রেট কালচার চালায়, তারা শাসক দলের সংগঠন করে। বাস্তবে আন্দোলনের চাপে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সরিয়ে দিলেও শাসকের ধামাধারী হওয়ায় তাদের আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এটা প্রশাসন ব্যবস্থার লজ্জা। আমরা এর বিরুদ্ধে আরো বড় আন্দোলন গড়ে তুলছি আগামী দিনে।"
একদিকে 'দ্রোহ', অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নাচ
হাজার হাজার জনতার দ্রোহের কার্নিভাল দেখলো শহর কলকাতা। শাসকের কার্নিভালে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শেষ লগ্নে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ
হাই কোর্টে তখন বিচারপতি রবি কিসান কপূরের এজলাস চলছে। ধর্মতলায় জমায়েত জমাট বাঁধছে ধীরে ধীরে। কোর্টে শুরু হয় শুনানি। যুক্তি পাল্টাযুক্তি চলতে থাকে, উত্তেজনা বাড়তে থাকে অনশনমঞ্চে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পাশাপাশি দুই কার্নিভাল
দুপুর ২টো ৫৩ মিনিট। বিচারপতি নির্দেশ দিলেন, দ্রোহের কার্নিভাল করা যাবে। রেড রোডের পুজো কার্নিভালের সঙ্গে তার কোনও সংঘাত নেই। ঘোষণা মাত্র উদ্বেলিত জনতা পুলিশের দাঁড় করানো ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ঢুকে পড়েন। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশও কার্যত ‘বাধ্য’ হয় ব্যারিকেডের শিকল খুলে দিয়ে তা সরিয়ে দিতে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাজার হাজার প্রতিবাদী জনতা
জলস্রোতের মতো জনস্রোত ধেয়ে আসতে থাকে রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে। খানিকক্ষণের মধ্যেই উপচে পড়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শাঁখ, ঢাক আর স্লোগান
ঢাকের বাদ্যি, শাঁখের আওয়াজ, স্লোগানে স্লোগানে তখন মুখরিত হয়ে উঠতে থাকে কলকাতার চেনা 'মিটিং সরণি'।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সব লেন ভরে যায় মানুষে
ভরে যায় দুটো লেনই। জনস্রোত এগোতে থাকে সামনের দিকে। যে অংশে ব্যারিকেড এবং পুলিশ প্রহরা মোতায়েন রাখা হয়েছিল, সেখানেও ঢুকে পড়ে জনস্রোত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
জমায়েতের বিভিন্ন অংশ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়তে থাকে। ব্যারিকেডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের সামনে গিয়ে সাধারণ মহিলারা নানা ধরনের কটাক্ষ করতে শুরু করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডাক্তারদের পাশে আরো কিছু মঞ্চ
দ্রোহের কার্নিভাল ডেকেছিল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। তবে তাতে জুড়ে গিয়েছিল আরও কিছু মঞ্চ। যে মঞ্চগুলিতে বামেদের নিয়ন্ত্রণ আছে। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের জমায়েতে সংগঠিত ভিড়ের ছবি দেখা গেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছিলেন না নেতারা
তবে সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা কেউ জমায়েতে যাননি। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা সমাবেশে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানিয়েছিল বামফ্রন্ট। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অনশন মঞ্চ থেকেই বলেছিলেন, কেউ যেন আন্দোলন 'হাইজ্যাক' করার চেষ্টা না করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী
একদিকে যখন দ্রোহের কার্নিভাল চলছে রাসমণি রোডে, তখন ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেড রোডে শুরু হয়েছে সরকারি কার্নিভাল। ঢাকের তালে তালে অভিনেত্রীদের হাত ধরে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফুটবল নিয়ে খেললেন
মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে একটি ফুটবল নিয়ে কিছুক্ষণ খেললেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তা ছুঁড়ে দিলেন সামনের রাস্তায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সেরা পুজোর গান
মুখ্যমন্ত্রীর লেখা পুজোর গান চললো কার্নিভালে। জানানো হলো, এবছরের সেরা পুজোর গান নির্বাচিত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই গান। কারা তা নির্বাচন করেছেন, তা অবশ্য জানায়নি সরকার।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কালো বেলুন দিয়ে দ্রোহ
অন্যদিকে, গুচ্ছ গুচ্ছ কালো বেলুনের বন্দোবস্ত করেছিলেন দ্রোহের উদ্যোক্তারা। আশা করা হয়েছিল আকাশে ওড়ানোর পর বেলুনগুলো পাশেই সরকার আয়োজিত পুজো কার্নিভালের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে। প্রতিবাদ আর শোকের বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে আকাশপথে। তবে হাওয়ার গতি অন্যদিকে থাকায় বেলুনগুলি বিপরীত দিকে চলে যায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শহর-গ্রাম একাকার
শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। কেউ প্রতিবাদের গান গাইতে গাইতে কেউ কেউ বা দলবদ্ধভাবে নাচের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঢাকিদের প্রতিবাদ
দেখা গেল একদল ঢাকি এসেছেন তাদের প্রতিবাদ জানাতে। প্রতিবাদে আসা সাধারণ মানুষ তাদের হাত থেকে কাঠি নিয়ে বাজাতে শুরু করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাহারি পোস্টার
বিভিন্ন সংগঠন থেকে মানুষ এসেছিলেন এই কার্নিভালে। দ্রোহের এই কার্নিভালে পোস্টারেও ছিল অভিনবত্ব। ‘ভাবছ ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে যাবে? চাপ আছে বস’ । সরল ভাষায় লেখা এই পোস্টার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জনতার দখলে ধর্মতলা
সন্ধে নামার পরে ভিড় আরও বাড়ে। গোটা ধর্মতলা চত্বর তখন উৎসাহী জনতার দখলে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে তখন মুখরিত কলকাতার প্রাণকেন্দ্র।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানববন্ধন
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে কার্নিভাল চলাকালীনই ধর্মতলায় শুরু হয়ে যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মানববন্ধন। সন্ধ্যার পর আরও ভিড় বাড়তে থাকে। অবরুদ্ধ হয়ে যায় ডোরিনা ক্রসিং থেকে ধর্মতলা। সেই জমায়েতেও দেখা যায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানববন্ধনের মাঝে প্রতিমা
পুজো কার্নিভালে প্রতিমা প্রদর্শন শেষে উত্তর কলকাতামুখী কয়েকটি ক্লাবের লরি এই পথেই ফিরছিল। পথের দু-পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানবশিকলের মাঝ খান দিয়ে যাওয়া পুজো কার্নিভালের দুর্গা প্রতিমাকেও শুনতে হয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। রাজ্যের মন্ত্রী তথা শ্রীভূমির ক্লাবকর্তা সুজিত বসুর গাড়ির উদ্দেশ্যেও ক্ষোভ উগরে দেয় মানববন্ধনে দাঁড়ানো জনতা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
18 ছবি1 | 18
সরকারি হাসপাতালের নার্সরাও স্বস্তিতে নেই। থ্রেট কালচার ছাপ ফেলেছে তাদের জীবন ও কর্মক্ষেত্রে। নার্সেস ইউনিটির সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "কাজের জায়গায় সুস্থ পরিবেশ যারা চান, তারা অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসদের ফিরে আসায় অসন্তুষ্ট হবেন। এই অভীক দে সম্পর্কে যে ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়ল, সেগুলো কি তাহলে বানিয়ে বানিয়ে বলা? যারা প্রতিবাদ করেছে, তারা সবাই ভুল? তারপরেও ওরা মেডিকেল কাউন্সিলে ফিরে এলেন কী করে? এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আবার একটা অভয়ার কান্ডের জন্য তৈরি থাকতে হবে।"
এর উপর রয়েছে বাড়তি কাজের চাপ। তিনি বলেন, "নাইট ডিউটিতে অসুস্থ হয়ে কেউ আসতে না পারলে তার ছুটি বাতিল এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুখানা নাইট ডিউটি করতে হয়। একের বদলে দুই, দুয়ের বদলে চারটে নাইটডিউটি করতে হচ্ছে। এই কালচার এখন এসএসকেএম, এনআরএস সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চলছে। ফলে এই থ্রেট কালচারটা যেভাবে হোক বন্ধ না করলে রোগী পরিষেবার ওপর তার প্রভাব পড়বেই। নার্সরা মুখ বুজে কাজ করে যাচ্ছে। যে সরব হবে তার ট্রান্সফার অনিবার্য।"
বিতর্কিত ডাক্তারদের মেডিকেল কাউন্সিলে ফিরে আসা নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ চিকিৎসক সংগঠনগুলি।
অনিন্দ্য বলেন, "অভিযুক্তরা দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, বহু জায়গায় এদের নামে অভিযোগ উঠেছে। এদের ফিরিয়ে আনার ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষোভ বাড়ছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।"
ভাস্বতী বলেন, "থ্রেট কালচার শুধু ডাক্তারদের নয়, নার্সদের উপরেও আছে। হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি আমরাই থাকি। আমরা কাজের সুস্থ পরিবেশ না পেলে কাজটা করব কীভাবে? আমাদের শরীর- মনের ওপর যেমন তার প্রভাব পড়ছে, তেমনি কাজের ওপরও পড়ছে।"