1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিতর্কিত চিকিৎসকেরা ফিরে আসায় ক্ষোভ বাড়ছে

৩ ডিসেম্বর ২০২৪

টানা তিন মাসব্যাপী আর জি কর আন্দোলন চলেছে। জনতা রাজপথ দখল করেছে। তা সত্ত্বেও আন্দোলন থিতিয়ে যেতে না যেতেই ফিরিয়ে আনা হল বিতর্কিত চিকিৎসক অভীক দে-কে।

আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন
কলকাতায় আরজি কর আন্দোলনছবি: Subrata Goswami/DW

গত ৯ আগস্ট আর জি করের বক্ষরোগ বিভাগের সেমিনার রুমে এই অভীক দে উপস্থিত ছিলেন। এখানে পাওয়া গিয়েছিল তরুণীর চিকিৎসকের দেহ। তুমুল বিতর্কের জেরে মেডিকেল কাউন্সিলের সমস্ত কাজকর্ম থেকে অভীককে সরানো হয়েছিল। তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কাউন্সিলে। একইভাবে কাউন্সিলে ফিরে এসেছেন বিরূপাক্ষ বিশ্বাস। এ নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা।

‘আবার একটা অভয়ার কান্ডের জন্য তৈরি থাকতে হবে’

This browser does not support the audio element.

অভীক ও বিরূপাক্ষ

আর জি কর হাসপাতালে ৯ আগস্ট লাল জামা পরে দেখা গিয়েছিল চিকিৎসক অভীক দেকে। কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক দাবি করেছিলেন তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ। যদিও আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এই দাবী নাকচ করে দিয়ে বলেন যে তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট নন। তিনি আদতে এই হাসপাতালেরই কেউ নন। বহিরাগত হয়েও অভীক কীভাবে সেদিন সকালে সেমিনার রুমে উপস্থিত হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

এরপর অভীককে ঘিরে একাধিক অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল থ্রেট কালচার ও দুর্নীতি। বিভিন্ন হাসপাতালে পড়ুয়াদের হুমকি দিয়ে হাতে রাখা হতো, এই অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে রয়েছে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও। চিকিৎসক আন্দোলন তুঙ্গে থাকায় মাস দুয়েক আগে মেডিকেল কাউন্সিল থেকে সরানো হয়েছিল তাকে।

অভীকের মতো প্রায় একই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন বিরুপাক্ষ বিশ্বাস। তাকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সাসপেন্ড করেছিল। তিনি ছিলেন কাউন্সিলের এথিক্যাল কমিটির সদস্য। চিকিৎসকদের আন্দোলন চলাকালীন বিরুপাক্ষের রেকর্ডেড ফোন কল ভাইরাল হয়। এই ক্লিপের সত্যতা ডিডাব্লিউ যাচাই করেনি। এখানকার কথোপকথনে শোনা গিয়েছিল, এক সিনিয়র তার জুনিয়র মেডিকেল ছাত্রকে রীতিমতো শাসানি দিচ্ছে। বিরুপাক্ষ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অস্বীকার করেছেন অভীকও।

অপসারিত চিকিৎসককে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের বড় অংশ। এর বিরুদ্ধে কাউন্সিলের সামনে অবস্থানে বসেন তারা। 'জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস' সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখায়। কাউন্সিলের বৈঠকেই এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন কোনও কোনও চিকিৎসক। প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য দপ্তর যাকে সাসপেন্ড করেছে, তাকে কিভাবে কাউন্সিলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে?

যদিও কাউন্সিলের সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ের বক্তব্য, "আর জি করের ঘটনার পর অভীককে কাউন্সিলের কাজ থেকে অপসারিত করা হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। অভীক নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তাই তাকে পদে ফেরানো হয়।"

সহ সভাপতি সুশান্ত রায় এক সুরেই বলেছেন, "অভীক ও বিরুপাক্ষের বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। তাই তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।" 

সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া

কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ চরমে উঠেছে। তথ্য ও প্রমাণ না থাকার দাবি খারিজ করছেন চিকিৎসকরা। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "মেডিকেল কাউন্সিলে যারা আছেন, তাদের অনেকের নামই থ্রেট কালচার ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আছে। অভয়া কান্ডের পর মানুষের আন্দোলন এত জোরদার হয়েছে যে সেই আন্দোলনের ফলে তারা কিছুটা চাপে পিছু হটে ওদের বিরুদ্ধে কিছু সাময়িক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। মেডিকেল কাউন্সিলের সাধারণ নিয়ম, বিধি মেনে মিটিং করে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন আন্দোলনের চাপ নেই, আবার মেডিকেল কাউন্সিলিংয়ের কাজগুলিতে তাদের ডাকা হচ্ছে। আমরা জানি তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রমাণের কোন শেষ নেই।"

তার বক্তব্য, "সরকারের তৈরি এনকোয়ারি কমিটি তাদের বিরুদ্ধে অনেক তথ্য প্রমাণ পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিটিও সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আসলে ঘুরপথে দুর্নীতি, থ্রেট কালচারকে ফিরিয়ে আনার একটা চেষ্টা চলছে, যাতে চিরদিনের জন্য এগুলো এখানে বহাল থাকে। যে সমস্ত চিকিৎসক আন্দোলন করছেন তাদের একটা বার্তাও দেয়া হচ্ছে যে এই মেডিকেল কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য দপ্তরকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসক এবং জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।"

ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট- এর সদস্য ডাঃ অনিন্দ্য মণ্ডল ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি মিটিংয়ে দেখেছিলাম, যারা অভিযুক্ত তাদের প্রতি ওর একটা সফট কর্নার ছিল। যারা অভিযুক্ত ছিল তাদেরকে অভিযুক্ত বলা যাবে না, এসব কথাবার্তা শুনেছিলাম। যারা থ্রেট কালচার চালায়, তারা শাসক দলের সংগঠন করে। বাস্তবে আন্দোলনের চাপে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সরিয়ে দিলেও শাসকের ধামাধারী হওয়ায় তাদের আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এটা প্রশাসন ব্যবস্থার লজ্জা। আমরা এর বিরুদ্ধে আরো বড় আন্দোলন গড়ে তুলছি আগামী দিনে।"

সরকারি হাসপাতালের নার্সরাও স্বস্তিতে নেই। থ্রেট কালচার ছাপ ফেলেছে তাদের জীবন ও কর্মক্ষেত্রে। নার্সেস ইউনিটির সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "কাজের জায়গায় সুস্থ পরিবেশ যারা চান, তারা অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাসদের ফিরে আসায় অসন্তুষ্ট হবেন। এই অভীক দে সম্পর্কে যে ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়ল, সেগুলো কি তাহলে বানিয়ে বানিয়ে বলা? যারা প্রতিবাদ করেছে, তারা সবাই ভুল? তারপরেও ওরা মেডিকেল কাউন্সিলে ফিরে এলেন কী করে? এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আবার একটা অভয়ার কান্ডের জন্য তৈরি থাকতে হবে।"

এর উপর রয়েছে বাড়তি কাজের চাপ। তিনি বলেন, "নাইট ডিউটিতে অসুস্থ হয়ে কেউ আসতে না পারলে তার ছুটি বাতিল এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুখানা নাইট ডিউটি করতে হয়। একের বদলে দুই, দুয়ের বদলে চারটে নাইটডিউটি করতে হচ্ছে। এই কালচার এখন এসএসকেএম, এনআরএস সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চলছে। ফলে এই থ্রেট কালচারটা যেভাবে হোক বন্ধ না করলে রোগী পরিষেবার ওপর তার প্রভাব পড়বেই। নার্সরা মুখ বুজে কাজ করে যাচ্ছে। যে সরব হবে তার ট্রান্সফার অনিবার্য।"

বিতর্কিত ডাক্তারদের মেডিকেল কাউন্সিলে ফিরে আসা নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ চিকিৎসক সংগঠনগুলি।

অনিন্দ্য বলেন, "অভিযুক্তরা দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, বহু জায়গায় এদের নামে অভিযোগ উঠেছে। এদের ফিরিয়ে আনার ফলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষোভ বাড়ছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।"

ভাস্বতী বলেন, "থ্রেট কালচার শুধু ডাক্তারদের নয়, নার্সদের উপরেও আছে। হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি আমরাই থাকি। আমরা কাজের সুস্থ পরিবেশ না পেলে কাজটা করব কীভাবে? আমাদের শরীর- মনের ওপর যেমন তার প্রভাব পড়ছে, তেমনি কাজের ওপরও পড়ছে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ