ভারত-চীন বিতর্কের অন্যতম এলাকা প্যাংগং লেক। চীন সেই লেকের উপর সেতু নির্মাণ করছে। স্যাটেলাইট ছবিতে এমনই প্রমাণ মিলেছে।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ আগেই ছিল। এবার প্রমাণ মিলল। স্যাটেলাইট ছবিতে স্পষ্ট লাদাখ-তিব্বত সীমান্তে প্যাংগং লেকের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশ জুড়ে একটি সেতু নির্মাণ করছে চীন। যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই সেতু চীনকে সীমান্ত অঞ্চলের স্ট্র্যাটেজিক অংশে বিশেষ সুবিধা করে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল ভারত-চীনসীমান্তের বিতর্কিত অংশেই চীন এই নতুন নির্মাণকাজ শুরু করেছে। কিন্তু ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, যে অংশে চীন এই সেতু নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে, তা সাম্প্রতিক ভারত-চীন বিতর্কের ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে না। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় ওই জমি চীন দখল করেছিল। অর্থাৎ, গত দেড় বছরে প্যাংগং অঞ্চলে দুই দেশের যে স্ট্যান্ডঅফ হয়েছে, ওই জমি তার বাইরে।
প্যাংগং থেকে সরে গেল ভারত-চীনের সেনা
দীর্ঘ আট মাস পরে প্যাংগংয়ের বিতর্কিত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নিল ভারত ও চীন। কিন্তু গালওয়ানের সমস্যা এখনো কাটেনি।
ছবি: Reuters/Maxar Technologies
প্যাংগং বিতর্ক
গত বছর মে-জুন মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে প্যাংগং লেক ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ভারত এবং চীনের সেনার। ফিঙ্গার পয়েন্ট তিন থেকে ফিঙ্গার পয়েন্ট আট পর্যন্ত এলাকা কার দখলে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Manish
প্যাংগংয়ের দক্ষিণে ভারতের শক্তি
বিতর্কের মধ্যেই প্যাংগং লেকের দক্ষিণে দুইটি পাহাড়ের দখল নেয় ভারতীয় সেনা। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় চীন। কিন্তু ভারতীয় সেনা এলাকা ছাড়তে রাজি হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
লাগাতার বৈঠক
সীমান্তে প্রবল উত্তেজনার মধ্যেই একের পর এক বৈঠক করে দুই দেশের সেনা। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীরাও একাধিক বৈঠক করেন। অবশেষে সেনাদের বৈঠকে সমাধানসূত্র মেলে।
ছবি: Eesha Kheny
সেনা প্রত্যাহার
দুই দেশের সেনাই এপ্রিলের পূর্ববর্তী সময়ে নিজেদের অবস্থানে ফিরে যেতে সম্মত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের সেনা যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানায়, প্যাংগং থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ছবি: AFP/X. Galiana
স্থায়ী কাঠামো ভাঙা হলো
প্যাংগংয়ের ধারে চীন যে স্থায়ী সেনা কাঠামো তৈরি করেছিল, বুলডোজার দিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জামও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ছবি: AFP/X. Galiana
গালওয়ান বিতর্ক
প্যাংগং থেকে সেনা সরলেও, গালওয়ান বিতর্ক নিয়ে এখনো সমাধানসূত্র মেলেনি। এই গালওয়ানেই গত বছর জুনে ভারত এবং চীনের সেনার মধ্যে লড়াই হয়েছিল। বহু ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল।
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/I. Abbas
চীনের স্বীকারোক্তি
গালওয়ান সংঘর্ষের পরে চীন নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। ভারতীয় সেনা দাবি করেছিল, চীনের সেনারও মৃত্যু হয়েছে। এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে চীন জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদেরও চার সেনা জওয়ান এবং একজন অফিসারের মৃত্যু হয়েছিল।
ছবি: Yawar Nazir/Getty Images
চীনের ভিডিও প্রকাশ
গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে চীন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে চীন যে বিবৃতি দিয়েছে, তা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ছবি: Reuters/PLANET LABS INC
লাদাখ সংঘাতের ভবিষ্যত
প্যাংগং অঞ্চল থেকে সৈন্য সরলেও লাদাখ সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাবে না। কারণ, প্যাংগং থেকে সৈন্য সরলেও বাকি এলাকায় এখনো সেনা মোতায়েন করে রেখেছে দুই দেশেরই সেনা। এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)
ছবি: Reuters/Maxar Technologies
9 ছবি1 | 9
তবে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি-র খুব কাছে চীন যে ওই সেতু নির্মাণ শুরু করেছে, ভারত তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে। প্রশাসনের এক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছে ভারত।
লাদাখে প্রায় ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটারের লেক প্যাংগং। যার এক তৃতীয়াংশ ভারতে এবং দুই তৃতীয়াংশ চীনে। এই লেকেরই ফিংগার পয়েন্ট চার থেকে আট পর্যন্ত অঞ্চল বিতর্কিত এলাকা। দেড় বছর ধরে ওই এলাকাতেই ভারত এবং চীনের স্ট্যান্ড অফ হয়েছে। পরে দুই দেশ আলোচনার ভিত্তিতে সেনা খানিকটা প্রত্যাহার করেছে।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে এলএসি-র খুব কাছে উত্তর থেকে দক্ষিণে চীন একটি ৪০০ মিটার দীর্ঘ এবং আট মিটার চওড়া সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। নির্মাণের জন্য বড় বড় ক্রেন মজুত করা হয়েছে সেখানে। সেতুটি যেখান থেকে শুরু হচ্ছে, সেখানে চীনের সেনার একটি হাসপাতাল আছে। সেতুটি যেখানে পৌঁছাচ্ছে, এর আগে নিকবর্তী চীনা সেনা শিবির থেকে সেখানে রসদ পৌঁছানোর জন্য ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। সেতু তৈরি হলে দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ৫০ কিলোমিটার। এই বিষয়টি নিয়েই উদ্বিগ্ন ভারত।