বিতর্কিত রুয়ান্ডা প্ল্যানের পক্ষে ভোট ব্রিটিশ এমপিদের
১৩ ডিসেম্বর ২০২৩
নিজের দলের বিদ্রোহ সামলে অত্যন্ত বিতর্কিত রুয়ান্ডা প্ল্যান পাস করাতে পারলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
বিজ্ঞাপন
অভিবাসন-প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডাতে পাঠিয়ে দেয়ার এই পরিকল্পনা হাউস অফ কমন্সে ৩১৩-২৬৯ ভোটে জয়ী হয়েছে।
এরপর সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ সুনাক লিখেছেন, ''ব্রিটিশ নাগরিকরাই ঠিক করবেন, দেশে কারা আসবেন, কারা নয়। কোনো অপরাধী চক্র বা বিদেশি কোর্ট এটা ঠিক করবে না।''
পার্লামেন্টে সুনাকের দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও তার দলের বেশ কয়েকজন এমপি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিলেন। বিরোধীরা তো আগে থেকেই জানিয়েছিলেন, তারা এই সিদ্ধান্তের সমর্থক নয়। ফলে ভোটাভুটিতে হেরে গেলে সুনাককে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হত।
এই অবস্থায় কোনো ঝুঁকি না নিয়ে পরিবেশমন্ত্রী গ্রাহাম স্টুয়ার্টকে কপ২৮ শীর্ষবৈঠক ছেড়ে লন্ডন ফিরে এসে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে বলা হয়।
সুনাক ও সরকারের বক্তব্য
ভোটাভুটির আগে সুনাক সামাজিক মাধ্যমে পর্লামেন্টের সদস্যদের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিতে বলেন। তার দাবি, ''এটা বেআইনি অভিবাসন রুখতে সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ। তিনি লিখেছিলেন, এই বিল পাস হলে কে ব্রিটেনে ঢুকতে পারবে, তা আমরা ঠিক করতে পারব। অভিবাসীদের নৌকাগুলিকে থামানোর জন্য আমাদের এই বিল পাস করাটা জরুরি।''
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, শরণার্থীর সংখ্যা ইতিমধ্যে জার্মানির সামর্থ্যের শেষসীমা ছুঁয়েছে৷ এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের কথাও বলেন তিনি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Markus Schreiber/picture alliance/AP/dpa
শরণার্থী ও আশ্রয় আবেদনের চাপ
ইউরোপীয় শরণার্থী সংস্থা বলছে, ইইউভুক্ত সব দেশ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত যত আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশই জার্মানিতে৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত শুধু ইউক্রেন থেকেই এসেছেন প্রায় ১১ লাখ আশ্রয়প্রার্থী৷ এছাড়া, আরো দু’লাখ আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি৷
ছবি: Adam Berry/Getty Images
আবাসন ও অন্যান্য সংকট
জার্মানিতে আসা বহু আশ্রয়প্রত্যাশী ও শরণার্থীকে থাকার জন্য বাসা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ৷ অস্থায়ী আবাসনগুলিতে থাকা কষ্টকর৷ ফুলদায় যেমন শরণার্থীদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ৷ নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা শিশুদের দেখভাল করার পরিষেবাও৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ সালে আসা আশ্রয়প্রত্যাশীদের অন্তত ২৫ শতাংশ এখনও প্রাথমিক আবাসনেই থাকেন৷ ফলে নতুনদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকছে না৷
ছবি: Ying Tang/NurPhoto/imago images
কেন এত চাপ জার্মানিতে
ইটালি বা স্পেনে আসা আশ্রয়প্রত্যাশীদের একটা বড় অংশ ইইউ’র নিয়ম অনুযায়ী সেখানে আবেদন না করে চলে আসেন জার্মানিতে৷ জার্মানিতে শুরু হয় আশ্রয় লাভের প্রক্রিয়া৷
ছবি: Nicolas Economou/NurPhoto/picture alliance
আবেদন-জট
জার্মানিতে যত আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়ে, তার অর্ধেকেরও কম আবেদন গৃহীত হয়৷ যাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি (ডুলডুং) পান৷ ফেরত পাঠানো উচিত, এমন প্রায় ৯৫ হাজার আবেদনকারীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না জার্মান কর্তৃপক্ষ৷ এ কারণে তাদের অন্য কোথাও পাঠাতেও পারছে না৷
ছবি: Markus Schreiber/picture alliance/AP/dpa
অভিবাসনপ্রত্যাশী রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি
বুধবার ইটালির ‘কোরিয়েরে দেলা সেরা’ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷ এর আগে জার্মানির ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও এ প্রস্তাব দেয়৷ ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান সোশাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) মনে করে, শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ ভাতা কমানো উচিত, যাতে নিশ্চিত আয়ের কথা ভেবে আরো বেশি আশ্রয়প্রার্থীরা জার্মানিতে না আসেন৷
ছবি: Sascha Schuermann/Getty Images
কেন বাড়ছে আশ্রয়ের আবেদন
ইউরোপের দেশগুলিতে শরণার্থী ব্যবস্থাপনার খামতির পাশাপাশি জার্মান কর্তৃপক্ষকে আরো চিন্তিত করছে আশ্রয়প্রার্থীদের উৎস৷ জার্মানিতে সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয় পাওয়াদের বড় একটা অংশই এসেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরানের মতো দেশ থেকে৷ এসব দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যত কঠিন হবে, তত বেশি বাড়বে দেশ ছেড়ে ইউরোপ পাড়ি দেবার ঝোঁক৷
ছবি: Ssgt. Emma James/U.S. Air/Planet Pix via ZUMA Press Wire/picture alliance
আইন বদলের ভাবনা
জার্মান সংবিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়ের অধিকার সবার আছে৷ কিন্তু আইনের মানবিক দিক মাথায় রাখলেও বর্তমান সংকটকে মোকাবিলা করতে বেগ পাচ্ছে জার্মানি৷ তাই ইইউ শরণার্থী নীতিতে বদল আনতে চায় তারা৷ যাদের আবেদন গৃহীত হবার সম্ভাবনা কম, তাদের সীমান্ত থেকেই ফেরত পাঠাতে চায় জার্মানি৷ বর্তমান আন্তর্জাতিক আইন বা ইইউ নীতিমালায় এর অনুমোদন নেই৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
7 ছবি1 | 7
নৌকা থামানো মানে ব্রিটেনে আসার জন্য যে নৌকাগুলি ইউরোপ থেকে আসে এবং রক্ষণশীল দল বারবার যার বিরোধিতা করে এসেছে। এই বছর এইভাবে ২৯ হাজার মানুষ ব্রিটেনে এসেছেন। ২০২২ সালে এসেছিলেন ৪৬ হাজার মানুষ।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সুনাক কয়েক ডজন কট্টরপন্থি এমপি-কে নিজের বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রাতঃরাশ বৈঠকে ডেকেছিলেন।
বেআইনি অভিবাসন সংক্রান্ত মন্ত্রী মাইকেল টমলিসন জানিয়েছেন, এই বিলটি অত্যন্ত কড়া।
সমালোচকরা যা বলছেন
রক্ষণশীল দলের কট্টরপন্থিরা বলছেন, এই বিলে এটা বলা নেই, যে সব অভিবাসন-প্রত্যাশী ব্রিটেনে চলে আসবেন, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তখন তারা ব্রিটিশ আদালতে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারবেন। মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় আদালতেও যেতে পারবেন।
গ্রিসে অভিবাসী জাহাজডুবি, নিখোঁজ অনেকে
গ্রিসে অভিবাসী জাহাজডুবি, নিখোঁজ অনেকে
ছবি: Hellenic Coast Guard/REUTERS
কোস্ট গার্ডের প্রকাশিত ছবি
হেলেনিক কোস্ট গার্ড এই ছবিটি প্রকাশ করেছিল৷ অভিবাসীদের জাহাজটি ১৪ জুন ডুবে যায়৷ ইউরোপের একটি দাতব্য সংস্থা বলেছে, ৬৫ থেকে ১০০ ফুট লম্বা জাহাজটিতে প্রায় ৭৫০ জন লোক ছিলো৷
ছবি: Hellenic Coast Guard/REUTERS
কালামাটায় নিয়ে আসা
উদ্ধার অভিযানের পর অভিবাসীদের কালামাটা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ অভিবাসীদের প্রত্যেকেই রীতিমতো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত৷ তাদের চোখেমুখে সে কথা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে৷
এই বিশাল জাহাজটিতে করেই উদ্ধার করা অভিবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Eurokinissi/REUTERS
প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা
১৮ বছরের সিরীয় তরুণ মোহাম্মদকে ওই অভিবাসী জাহাজ থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিলো৷ নেদারল্যান্ডস থেকে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ভাই ফাদি৷ গ্রিসের কালামাটা বন্দরে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন তারা৷
ছবি: Stelios Misinas/REUTERS
অস্থায়ী আশ্রয়
অভিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে কালামাটা বন্দরের একটি গুদামঘরকে ব্যবহার করা হয়৷ অভিবাসীদের অনেককে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিলো যাতে তারা একটু হলেও বিশ্রাম নিতে পারেন৷
ছবি: Angelos Tzortzinis/REUTERS
বস্তাবন্দি দেহ
গ্রিসের উপকূলে জাহাজডুবির ঘটনায় ৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হেলেনিক কোস্টগার্ডের জাহাজে বস্তাবন্দি মৃতদেহগুলি৷
ছবি: Stelios Misinas/REUTERS
চূড়ান্ত ক্লান্তি
দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা, রক্ষীবাহিনীর কাছে ধরা পড়ার ভয়, মারাত্মক দুর্ঘটনা; সবমিলিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে রীতিমতো বিপর্যস্ত অভিবাসীরা৷ আশ্রয় কেন্দ্রে আসার পর চূড়ান্ত ক্লান্তির ফলে ঘুমিয়ে পড়েছেন তারা৷
ছবি: Stelios Misinas/REUTERS
অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা
গুরুতর আহত অভিবাসীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ অভিবাসীদের মানসিক ও শারীরিক পরিস্থিতির কথা ভেবে আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা হয়েছিলো৷
ছবি: Stelios Misinas/REUTERS
আশ্রয়ের খোঁজে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, চলতি বছর অনিয়মিত অভিবাসী আগমনের ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুটটি রীতিমতো সক্রিয় রয়েছে৷ জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত অন্তত এক লাখ দুই হাজার অনিয়মিত অভিবাসী এসেছেন ইউরোপে৷
ছবি: Eurokinissi/REUTERS
9 ছবি1 | 9
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বলেছে, এই পরিকল্পনা কার্যকরই করা যাবে না। তাছাড়া এই পরিকল্পনা অনৈতিক। অবিবাসনপ্রত্যাশীদের সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার দূরের রুয়ান্ডাতে পাঠানো মেনে নেয়া যায় না। গতমাসে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রুয়ান্ডাকে কখনই নিরাপদ দেশ বলা যায় না।
যুক্তরাজ্যের অ্য়ামনেস্টি ইন্টারন্য়াশনালের প্রধান সাচা দেশমুখ বলেছেন, ''এই পরিকল্পনায় মানবাধিকারের দারণাকেই আক্রমণ করা হয়েছে।''
সুনাক জানিয়েছেন, হাউস অফ কমন্সে বিলটি অনুমোদিত হওয়ার পর তারা নতুন উদ্যমে এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোবেন। আদালতের উদ্বেগের বিষয়গুলিই মাথায় রাখা হবে।
পরিকল্পনায় যা বলা হয়েছে
এই পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ব্রিটেন থেকে শয়ে শয়ে অবিবাসন-প্রত্যাশীকে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তারা সেখানেই বসবাস করবেন।
যুক্তরাজ্য ইতিমধ্য়েই তিন হাজার তিনশ কোটি টাকা রুয়ান্ডাকে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের দাবি, এই নিয়ম চালু হলে অবিবাসীরা আর যুক্তরাজ্যে আসবেন না।
এই বিল নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছে, তখন একজন অভিবাসন-প্রত্যাশী মারা যান। তাঁর আবেদন বিচারাধীন ছিল। এরপরই মানবাধিকার সংগঠনগুলি জানিয়েছে, ব্রিটেনে অবিবাসীদের জন্য অমানবিক ব্যবস্থা চালু আছে।