বিএনপি বলেছিল মঙ্গলবার হরতাল শেষে যে কোনো দিন তারা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দেবে৷ প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বিরোধী নেত্রীকে আমন্ত্রণ জানান সোমবার রাতে৷ এখন শেখ হাসিনা কি খালেদা জিয়াকে ফোন করবেন না খালেদা জিয়াই সময় চাইবেন?
বিজ্ঞাপন
এই সব প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপিকেই এখন সময় জানাতে হবে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন দিন বৈঠক করতে চায়৷ কারণ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সময় অনুযায়ী তারা আমন্ত্রণ গ্রহণ করেনি৷ প্রত্যাহার করেনি হরতাল তাদের কাছে সংলাপের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেয়ে সহিংস হরতাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷ নাসিম বলেন, এখন খালেদা জিয়া অথবা বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তা বিবেচনা করা হবে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ বা প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে আর উদ্যোগ নেবে না বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন তাঁর দেয়া নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব নীতিগতভাবে মেনে নিলেই তিনি আন্দোলন স্থগিত করবেন, অন্যথায় নয়৷ কিন্তু কোনো শর্ত দিয়ে আলোচনা হয় না৷ এছাড়া, এরকম শর্ত দিয়ে কোনো সংলাপে যেতে আওয়ামী লীগ রাজি নয়৷
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মঙ্গলবার হরতাল শেষ হলে সরকারকেই আবার আমন্ত্রণ জানাতে হবে৷ কারণ তাদের পক্ষে হরতাল প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দেয়া সম্ভব ছিল না৷ পর্যাপ্ত সময় দিয়ে খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি৷ তিনি বলেন, সরকারের সংলাপের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ তবুও তারা নতুন করে সংলাপের আমন্ত্রণ পেলে যাবেন৷
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সংগে সংলাপে খালেদা জিয়া জামায়াত নেতাদের নিয়ে গেলে, তা কি ধরণের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে বা তা আদৌ গ্রহণ করা হবে কিনা – সে ব্যাপারে এখনো আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি৷ তবে ফোনালাপের দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী জামায়াতের কাউকে আমন্ত্রণ জানাননি৷ আর বিএনপি জামায়াতের কাউকে নিতে চায় কিনা, তাও এখনো স্পষ্ট করে বলেনি৷ তবে তাদের সাধারণ কথা হলো, খালেদা জিয়া জোট নেতাদের বাদ দিয়ে যেতে পারেন না৷
ধারণা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সংলাপের দিনক্ষণ ঠিক হলেও জামায়াত প্রশ্নে আরেক দফা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে৷ কারণ, এই আন্দোলনে জামায়াত বিএনপির অপরিহার্য শক্তি৷ ওদিকে আওয়ামী লীগ জামায়ত প্রশ্নে এখন পর্যন্ত ছাড় না দেয়ার অবস্থানে আছে৷
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট থামছে না
আগামী বছরের সূচনায় জাতীয় নির্বাচন, কিন্তু দুই মুখ্য রাজনৈতিক জোটের টানাপোড়েন অব্যাহত৷ অথচ দেশে-বিদেশে অনেকেই চান সংকট নিরসনে দুই বৈরী জোটের মধ্যে আলোচনা৷ কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব হবে?
ছবি: AP
দু’দলের দ্বন্দ্ব
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নির্দিষ্ট হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে৷ তবে মুখ্য বিরোধী দল বিএনপি এখনো নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নয়৷ তারা চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, শাসক আওয়ামী লীগের কাছে যা সংবিধান লঙ্ঘনের সমান৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
জাতিসংঘ চায় সংলাপ
জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই দুই বিবাদী জোটের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে৷ মহাসচিব বান কি-মুন গত ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথাবার্তা বলেছেন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব উভয় নেতার প্রতি চলতি রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ অবসানের জন্য আলাপ-আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
হাসিনা চান সংসদে আলোচনা
জাতিসংঘ বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মহাসচিবের ফোনালাপের কোনো খুঁটিনাটি প্রকাশ করেনি৷ তবে বাংলাদেশের একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হাসিনা ‘‘জাতিসংঘের প্রধানকে জানিয়েছেন যে, তিনি সংবিধান অনুযায়ী সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করছেন৷’’ বিরোধীপক্ষ যদি গোটা প্রসঙ্গটি সংসদে আলোচনা করার কোনো প্রস্তাব দেয়, তবে তিনি তাকে স্বাগত জানাবেন, এমন আভাসও দিয়েছেন হাসিনা৷
ছবি: dapd
সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে বিএনপির ‘না’
বান কি-মুনের সঙ্গে ফোনালাপে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াও সংকট সমাধানে সংলাপের সপক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন, কিন্তু এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ‘‘বিরোধীপক্ষ আওয়ামী লীগ সরকারের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না৷’’
ছবি: Reuters
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি ও কেন?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাজ হলো মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা৷ ১৯৯১ সালে এই পদ্ধতি চালু করা হয় কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সেই পদ্ধতি বাতিল করে৷ বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী পক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছে৷
ছবি: AP
জার্মানি সংলাপ সমর্থন করে
সংলাপকে বাংলাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক জোটের মধ্যে অচলাবস্থা নিরসনের একমাত্র পন্থা বলে মনে করে জার্মানি৷ ‘ঢাকা কুরিয়ার’ নামক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. আলব্রেশট কনৎসে বলেছেন, ‘‘দু’টি মুখ্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ হলো বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানের একমাত্র পথ৷’’
ছবি: DW/R. Manzoor
ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ডাক দিলেন
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস একটি ‘‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ (নির্বাচনকালীন) সরকার’’ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য সমর্থন ব্যক্ত করেছেন৷ গত ২২ আগস্ট ইউনূস একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘নির্বাচন অতি অবশ্য হওয়া উচিত এবং তা একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত৷’’
ছবি: Getty Images
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)
হাসিনা সরকারের সৃষ্ট আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা আইসিটি-র উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৷ কিন্তু তা শাসকদল এবং বিরোধীপক্ষের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আইসিটি এখন পর্যন্ত ছ’জন অভিযুক্তকে শাস্তি দিয়েছে৷ বিরোধীপক্ষ এই বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত আখ্যা দিয়েছে৷ তাদের মতে এই প্রক্রিয়ার বাস্তবিক উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার নয়, পুরাতন শত্রুতার প্রতিশোধ৷
ছবি: AP
আন্তর্জাতিক সমালোচনা
হিউম্যান রাইটস ওয়াচও আইসিটি-র সমালোচনা করেছে৷ এইচআরডাব্লিউ বিবৃতিতে বলেছে, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক প্রধান গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া ‘‘গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ’’ ছিল৷ প্রতিক্রিয়া হিসেব সরকারি কৌঁসুলির তরফ থেকে এইচআরডাব্লিউ-এর বিরুদ্ধে আদালতের অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এইচআরডাব্লিউ-এর ‘‘একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’’ রয়েছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
ট্র্যাক রেকর্ড
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসে৷ বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা কৃষি খাতে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান যাই হোক না কেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর হাসিনা সরকারের অন্য সব সাফল্য ঐ একটি কেলেঙ্কারির আড়ালে ধামাচাপা পড়ে গেছে৷ আগামী নির্বাচনেও পদ্মা সেতু প্রকল্প প্রসঙ্গটি প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যাঁর যাঁর দলের পক্ষ থেকে সংলাপ আয়োজনে যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷ মঙ্গলবার বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলীয় জোটের হরতাল শেষ হলে হয়ত তাঁরা উদ্যোগ নেবেন৷