1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদায় নিচ্ছে করোনা ভাইরাস?

৬ মার্চ ২০২১

তৃতীয়  ঢেউ বা নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের মাত্রা কমতে শুরু করেছে৷ করোনার ভাইরাস কি শেষ পর্যন্ত হার মেনেছে?

Coronamüde Touristen Madrid
ছবি: Tamara Rozas/picture-alliance/dpa/Europapress

শীত বিদায়ের সাথে করোনার বিধিবিধান নিয়ে ক্রমশ ধৈর্য্য হারাতে শুরু করেছেন ইউরোপ, অ্যামেরিকাসহ উত্তর গোলার্ধের মানুষ৷ দেশগুলোর উপর লকডাউন তুলে নেয়ার চাপ বাড়ছে ক্রমাগত৷ টিকা নিয়ে করোনা পরবর্তী মুক্ত জীবনের জন্যেও মুখিয়ে রয়েছেন মানুষ৷ কিন্তু সত্যিকারভাবে করোনা কবে বিদায় নিচ্ছে? সেই সম্ভাবনাই বা কতটা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথিত এক বিবৃতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক এসেছে সামনে৷ কয়েক মাসের মধ্যেই করোনা বিদায় নিচ্ছে, সংস্থাটির ইউরোপের পরিচালক হান্স হেনরি ক্লুগের উদ্ধৃতি দিয়ে সম্প্রতি এমন খবর প্রকাশ হয়৷ যদিও ক্লুগ পরে জার্মান সম্প্রচার মাধ্যম জেডডিএফকে জানিয়েছেন, তিনি মোটেও এমন কথা বলেননি৷ বরং খোলাসা করে বলেন, ২০২২ সালে মহামারিকে পেছনে ফেলা সম্ভব হবে তিনি এমনটাই মনে করেন৷ তার মতে, করোনা ভবিষ্যতেও থাকবে, তবে কঠোর পদক্ষেপগুলোর হয়তো তখন প্রয়োজন হবে না৷

করোনা ভাইরাস কি তাহলে হার মানতে যাচ্ছে? বার্লিনভিত্তিক সারিটে হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট ক্রিশ্চিয়ান ড্রস্টেন তেমন মনে করেন না৷ তিনি বলেন, যে ধরনগুলো রয়েছে তার কোনটি দুর্বল হয়েছে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা দেখতে পাচ্ছেন না৷ করোনা দুর্বল হচ্ছে বা বিদায় নিচ্ছে এমন চিন্তা পুরোপুরি কাল্পনিক৷ জানুয়ারিতে ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বরং ২০২১ সালে পরিস্থিতি আগের বছরের চেয়ে খারাপের শঙ্কাই প্রকাশ করেছেন৷

জার্মানির মহামারি বিশেষজ্ঞ ও বুন্ডেসটাগের আইন প্রণয়নকারী কার্ল লাউটাবাখও দ্রুত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন৷

পরিসংখ্যান কী বলছে

ফেব্রুয়ারির শেষে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৪০ লাখ৷ ২৫ লাখ মানুষ মারা গেছেন আর সাড়ে ছয় কোটি মানুষ আরোগ্য লাভ করেছেন৷ কিছু দেশের পরিসংখ্যান এখনো আতঙ্কজনক৷ এমনকি ভাইরাসটি নিজেকে যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে তৃতীয় ধাক্কার শঙ্কাও আছে৷

তারপরও মহামারি থেকে উত্তরণে আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেমনটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল গত দুই মাসে সংক্রমণের মাত্রা তার চেয়েও দ্রুত গতিতে কমেছে৷ জানুয়ারির মাঝামাঝিতে দৈনিক সাত লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, যা এখন অর্ধেকের কাছাকাছি নেমে এসেছে৷ গত এক মাসে মৃত্যুর সংখ্যায় কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাস এই পরিসংখ্যানকে আশাব্যাঞ্জক বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি মনে করেন, কোভিড-১৯-কে যে দমানো সম্ভব এবং জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ যে কাজে লেগেছে এই প্রবণতা থেকে সেই ইঙ্গিতই মিলছে৷

কেন কমছে

করোনার সংক্রমণ কমার পেছনে একক কোনো কারণ নেই৷ বেশ কিছু বিষয় সেখানে ভূমিকা রেখেছে, সেটি অবশ্যই বলা যায়৷ টিকাও এর একমাত্র কারণ নয়৷ কেননা, জনসংখ্যার হিসাবে বিশ্বের খুবই সামান্য একটি অংশ এখন পর্যন্ত টিকার আওতায় এসেছে৷ সামাজিক দূরত্ব আর স্বাস্থ্যবিধিগুলোই যে কিছু দেশে কাজে লেগেছে, সেটি অনেকটা প্রমাণিত৷ আবার কিছু কিছু দেশে করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি বা গণ প্রতিরোধও তৈরি হচ্ছে৷ যেমন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে গেছেন৷ তাদের বড় একটি অংশ হয়ত পরীক্ষার আওতায়ই আসেনি৷

কোনো কোনো গবেষক এমনটাও বলছেন যে, মিউটেশন বা নিজেকে বদলাতে গিয়ে করোনার ভাইরাস যে দুর্বল হয়ে পড়ছে সেটিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এমন একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল সায়েন্স-এ৷ সেখানে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের ক্রমাগত পরিবর্তনে মহামারি দ্রুতই অতিমারিতে রূপ নেবে৷   

স্প্যানিশ ফ্লুর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি পাঁচ কোটি মানুষ মারা যান৷ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine

মহামারি কবে বিদায় নিচ্ছে

অতীতের মহামারিগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে যে, একটা পর্যায়ে তা থেমে যেতে পারে৷ সবশেষ দুইটি মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির একটি ছিল ১৯৫৭ সালের এশিয়ান ফ্লু৷ এতে মারা যান ৪০ লাখ মানুষ৷ অন্যদিকে ১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লু কেড়ে নেয় ৩০ লাখ প্রাণ৷ সেগুলো যতটা দ্রুত এসেছিল ততটা দ্রুতই কিন্তু বিদায় নিয়েছে৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে স্প্যানিশ ফ্লুর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি পাঁচ কোটি মানুষ মারা যান৷ জীবাণু টিকে থাকলেও স্প্যানিশ ফ্লুর তৃতীয় ঢেউ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়৷ এর দুর্বল ধরন হিসেবে পরবর্তীতে এইচওয়ানএনওয়ান (সোয়াইন ফ্লু) এর আবির্ভাব হয়, যা আজকের দুনিয়ায় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবেই বিবেচিত৷

ঠিক একইভাবে সার্স-কোভ-টু বা করোনার ভাইরাসও একটা পর্যায়ে এমন রূপ নিতে পারে যা হয়তো কোনো একটি এলাকা বা অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ ধরন বদলানোর কারণে সেটি যত দুর্বল হবে, তত কম বিপদজনক হবে৷ কিন্তু গোটা বিশ্বে একটি ইতিবাচক ট্রেন্ড বা প্রবণতা যতদিন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, ততদিন স্বাস্থ্য বিধিগুলোর একটি সমন্বয় করে নিতে হবে৷

আলেক্সান্ডার ফ্রয়েন্ড/এফএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ