প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেবার পর অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টরা সাধারণত তাঁদের উত্তরসূরী সম্পর্কে মুখ খোলেন না৷ কিন্তু বারাক ওবামা জানিয়ে দিলেন, প্রয়োজনে তিনি মূল্যবোধ ও আদর্শের স্বার্থে মুখ খুলতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
আগামী মাসেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করবেন৷ তার আগে তিনি বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ায় ব্যস্ত৷ ইউরোপ সফরের পর পেরুর রাজধানী লিমায় এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন৷ কিন্তু নিজের বিদায়বাণীর তুলনায় তাঁকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে বিশ্বনেতাদের আশ্বস্ত করতে৷
উত্তরসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহির্বিশ্বের প্রতি কেমন আচরণ করবে সে বিষয়ে তাঁদের উৎকণ্ঠা দূর করার কিছুটা চেষ্টা করেছেন ওবামা৷ নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদের অযোগ্য হিসেবে তুলে ধরার পর এবার রাষ্ট্রনেতা হিসেবে সেই ট্রাম্প সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের বদলে তাঁর কাজের বিচার করার পরামর্শ দিতে হলো ওবামাকে৷ তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করলে এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করলে অনেক বিষয় সম্পর্কে মনোভাব বদলে যেতে পারে৷
ট্রাম্প সম্পর্কে বাকি বিশ্বকে আশ্বাস দেবার চেষ্টা করলেও তাঁর উপর কিছুটা চাপও সৃষ্টি করলেন ওবামা৷ তাঁর মতে, শীর্ষ রাজনৈতিক পদের প্রতি শ্রদ্ধার খাতিরে এবং নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে কাজ গুছিয়ে নেবার সুযোগ দিয়ে পদে পদে হস্তক্ষেপ করা সমীচীন নয়৷ কিন্তু একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে ওবামা মূল্যবোধ ও আদর্শের খাতিরে প্রয়োজনে মুখ খুলতে পারেন, এমন ইঙ্গিতও তিনি দিয়ে রাখলেন৷
ওবামার পাঁচটি অবদান
01:54
অ্যাপেক সম্মেলনে অনেক বিশ্বনেতা আবেগের সঙ্গে ওবামার কাছ থেকে বিদায় নিলেন৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেন, শেষ সাক্ষাৎ অসাধারণ মুহূর্ত – দুঃখেরও বটে৷ ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘‘বারাকের অভাব খুবই বোধ করবো৷''
হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়ে কী করবেন ওবামা? প্রথমেই স্ত্রী মিশেলকে নিয়ে ছুটি কাটাবেন৷ তারপর কিছুটা বিশ্রাম নেবেন, দুই মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাবেন, লেখালেখি করবেন, কিছু বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করবেন৷ তবে এখনই রাজনীতিতে ফিরে যাবার কোনো বাসনা তাঁর নেই৷
নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য যা অপেক্ষা করছে
নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বদেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সমস্যা ও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, যার উপর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়, সেই সঙ্গে আধা দুনিয়ার ভালো-মন্দ নির্ভর করবে৷ কী ভাবছেন দুই প্রতিযোগী এই সব সমস্যা সম্পর্কে?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
বারাক ওবামা যা করে যেতে পারেননি
তার মধ্যে প্রথমেই আসে স্বাস্থ্য বীমার সংস্কার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের কোনো স্বাস্থ্য বীমা নেই, এছাড়া আছে চলতি বীমা পদ্ধতির নানা ঘাটতি ও দুর্বলতা৷ এর বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ কিছুদূর এগোলেও, এখনও অনেক কাজ বাকি৷ এছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও অবকাঠামোর চরম দুরবস্থার কথা ভুললে চলবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
ধনি-দরিদ্রের ব্যবধান
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধিকাংশ সমর্থক যে পর্যায়ের মানুষদের মধ্য থেকে উঠে এসেছেন, তারা হলেন শিল্পায়ন পরবর্তী যুগের অ্যামেরিকায় যারা সবচেয়ে বেশি হারিয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ বড় বড় শহরগুলি ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই সে ধরনের অবক্ষয় চোখে পড়ে: রোগগ্রস্ত, অসুস্থ মানুষ; উপেক্ষিত, অবহেলিত শিশুরা যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ এই ব্যবধান থেকেই জন্ম নিয়েছে এক নতুন পরস্পরবিরোধিতা৷
ছবি: picture alliance/U. Baumgarten
ইরান
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিকে ‘‘ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চুক্তিগুলির মধ্যে একটি’’ বলে খারিজ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলাপ-আলোচনা করবেন৷ অপরদিকে হিলারি ক্লিন্টন এই চুক্তিকে ‘‘মহান কূটনীতি’’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে ইরানের প্রতি ক্লিন্টনের মনোভাব অতীতে বেশ কড়াই ছিল এবং তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়ে বেশি ইসরায়েল ঘেঁষা বলে কথিত৷
ছবি: Colourbox/Getty Images
সিরিয়া
ক্লিন্টন সিরিয়ায় নো-ফ্লাই জোন স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ‘সেফ জোন’ কামনা করেছেন৷ নো ফ্লাই জোন থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের বিপদ বাড়বে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ ট্রাম্প তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের আইএস-এর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, সিরিয়ার দিকে নয়’’৷ বস্তুত তাঁদের প্রথম ৯০ মিনিটের টেলিভিশন বিতর্কে ২২ বার আইএস-এর নাম করা হলেও, আলেপ্পোর নাম করা হয়েছিল মাত্র একবার৷
ছবি: Reuters/A.Ismail
রাশিয়া
লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসের একটি রেস্টুরেন্টের দেয়ালে আঁকা ছবি, যাতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য পুটিন-প্রীতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে৷ ট্রাম্পকে পরে বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমি পুটিনকে চিনি না....রাশিয়া সম্পর্কেও কিছু জানি না’’৷ তবে রাশিয়ার সঙ্গে মিলে আইএস-এর মোকাবিলা করলে ভালো হয়, বলে তাঁর ধারণা৷ অপরদিকে ক্লিন্টনের দৃষ্টিতে ক্রেমলিন শুধুমাত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে আগ্রহী৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Malukas
ন্যাটো ও ইউরোপ
ছবিতে পোল্যান্ডের প্যারাট্রুপার সৈন্যরা ন্যাটোর একটি সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে৷ ট্রাম্প এর আগে ন্যাটো ও ইউরোপের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে নানা অবহেলাকর মন্তব্য করেছেন৷ অপরদিকে ক্লিন্টন যদিও ‘অ্যাটলান্টিসিস্ট’ হিসেবে পরিচিত, তাঁর মুখেও প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে একবার বা দু’বারের বেশি ইউরোপ কিংবা ন্যাটোর নাম শোনা যায়নি৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর এতে সন্তুষ্ট না হবারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
চীন
ছবিতে চীনের একটি বোমারু বিমান দক্ষিণ চীন সাগরের উপর টহল দিচ্ছে৷ এলাকার বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জগুলিকে নিয়ে বিরোধে ক্লিন্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট করতে চান না, কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রণালী স্থাপন করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্রদের আশ্বস্ত করতে চান৷ নয়তো ট্রাম্পের ধারণা যে, চীন তাঁর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক স্বার্থের হানি ঘটাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xinhua/Liu Rui
পরিবেশ
ছবিতে ক্যালিফর্নিয়ার মৌহাভি মরুভূমিতে অবস্থিত একটি সৌরবিদ্যুৎ পার্ক৷ ট্রাম্প কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বলেছেন ‘‘অনির্ভরযোগ্য ও ভয়ঙ্কর’’; বিশ্বের উষ্ণায়নকে বলেছেন ‘‘মার্কিন শিল্পোৎপাদনকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার অযোগ্য করে তোলার জন্য চীনাদের তৈরি একটি কল্পকাহিনি’’৷ অপরদিকে ক্লিন্টন ওবামার পরিবেশ নীতি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করলেও, তাঁর প্রচার অভিযান বা রাজনৈতিক জীবনে পরিবেশ বিশেষ গুরুত্ব পায়নি৷