‘প্রিয় গ্রাহক, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এই চ্যানেলটির সম্প্রচার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছি৷ সাময়িক এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত৷’
বিজ্ঞাপন
- যেসব নাম্বার টিপলে আগে বিদেশি চ্যানেল দেখা যেত এখন সেসব নাম্বারে সুইচ করলেই পর্দায় ভেসে উঠছে এই ঘোষণা৷ ১লা অক্টোবর থেকে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকেরা৷
এর পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার প্রণীত একটি আইন৷ ২০০৬ সালে কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালনা এবং এর আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬’- প্রণয়ন করা হয়৷ আইনের ১৯ নম্বর ধারায় সম্প্রচার ও সঞ্চালন ক্ষেত্রে বাধা নিষেধ শিরোনামের উপধারা ১৩ নম্বরে স্পষ্ট করে লেখা আছে- কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করিতে পারিবে না৷’
২০০৬ সালের এই আইন এতদিন ধরে একরকম উপেক্ষাই করা হল৷ না সরকার, না কেবল অপারেটর, না অন্য কোন পক্ষ কেউ-ই আইন কার্যকর করতে ব্যবস্থা নেয়নি৷ শেষ পর্যন্ত ১৫ বছর পরে সরকার এই আইন বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগী হয়েছে৷ সরকারি নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশের কেবল অপারেটররা বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে- তেমন বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে৷
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, দেশের আকাশ উন্মুক্ত রয়েছে৷ আইন মেনে যে কোনো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা যাবে৷
টাইমলাইন: ক্লিন ফিড চ্যানেল বিতর্ক
২০১৯ সালে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন টেলিভিশন স্টেশনের মালিকরা৷ তারা বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিপক্ষে ছিলেন৷ ১ অক্টোবর থেকে বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ আছে৷
ছবি: bdnews24.com
আইন
২০০৬ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করলে লাইসেন্স বাতিল এবং দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে৷
ছবি: bdlaws.minlaw.gov.bd
টেলিভিশন মালিকদের দাবি
২০১৯ সালের এপ্রিলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন টেলিভিশন স্টেশন মালিকদের সংগঠন ‘অ্যাটকো’র নেতারা৷ তারা বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ এর ফলে দেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন হারাচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল তাদের৷ ঐ বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিদেশি চ্যানেল শুধু বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন নয়, আইন আনুযায়ী কোনো ধরনের বিজ্ঞাপনই দেখাতে পারে না৷
ছবি: Sanjay Kumar
এরপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের নোটিশ
২০১৯ সালের এপ্রিলে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই কেবল অপারেটর ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান জাদু মিডিয়া ভিশন ও নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডকে বিজ্ঞাপন ছেঁটে বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের নোটিশ দেয়া হয়েছিল৷ ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: moi.gov.bd
২৪ ঘণ্টা চ্যানেল বন্ধ
তথ্য মন্ত্রণালয়ের নোটিশ জারির পর জি নেটওয়ার্কের পাঁচটি চ্যানেলের সম্প্রচার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল৷ এর কারণ হিসেবে পরে ‘কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ (কোয়াব) নেতারা বলেছিলেন, বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের প্রযুক্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছিল৷
ছবি: Zee Bangla
তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য
এপ্রিল মাসে মন্ত্রণালয়ের নোটিশ জারির মাসখানেক পর মে মাসে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, জুলাইয়ের পর কেবল অপারেটরদের বিদেশি বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে৷
ছবি: bdnews24.com
মন্ত্রীর বক্তব্যে অপারেটরদের প্রতিক্রিয়া
নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের কর্ণধার আফসার খায়ের মিঠু বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজকে সেই সময় বলেছিলেন, তাদের পক্ষে জুলাইয়ের মধ্যে ফ্রেশ ফিড সম্প্রচার সম্ভবপর হচ্ছে না৷ তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘পুরো বাংলাদেশ ডিজিটাল না হলে এটি বাস্তবায়ন করতে বেশ কষ্ট হবে৷ ঢাকা ও চট্টগ্রামে এটি চালু করতে মোটামুটি দুই বছরের মতো লাগতে পারে৷ আর পুরো দেশে এটি চালুর জন্য সরকার আমাদের পাঁচ বছর সময় দিতে পারে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
গতমাসে মন্ত্রীর ঘোষণা
গতমাসে মন্ত্রীর ঘোষণাসেপ্টেম্বরের শুরুতে কোয়াব, অ্যাটকো, বিদেশি চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউটর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সঙ্গে এক বৈঠকের পর তথ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন, ‘ক্লিন ফিড’ ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করলে আইন প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ ক্লিন ফিড মানে হলো কোনো বিজ্ঞাপন থাকতে পারবে না৷ ঐ সময় বলা হয়েছিল, ১ অক্টোবর থেকে ক্লিন ফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার করা যাবে না
ছবি: bdnews24.com
সম্প্রচার বন্ধ
ঘোষণা মেনে ১ অক্টোবর থেকে অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে এমন বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেন কেবল অপারেটররা৷ তবে এটা করতে গিয়ে বিজ্ঞাপন ছাড়া (ক্লিন ফিড) চলে এমন বিদেশি চ্যানেলও বন্ধ করে দিয়েছিলেন কেবল অপারেটররা৷ পরে বিজ্ঞাপন ছাড়া চলে এমন ২৪টি চ্যানেলের তালিকা পাঠিয়ে সরকার পরিবেশক ও কেবল অপারেটরদের তা সম্প্রচারের নির্দেশ দিলে সেগুলো চালু করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
8 ছবি1 | 8
সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের অনুষ্ঠানবাংলাদেশে দেখাতে হলে তা বিজ্ঞাপনমুক্ত থাকতে হবে৷ যাকে বলা হচ্ছে ‘ক্লিন ফিড‘৷ ক্লিন ফিড ছাড়া বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার আইনের বরখেলাপ৷ কেউ যদি এই আইন ভঙ্গ করে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করে তবে সরকারের তরফ থেকে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷
আইনের বাস্তবায়নের পাশাপশি এখানে সরকারের রাজস্ব হারানোর বিষয়টাও সামনে আসছে৷ বিদেশি চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপন থেকে সরকার কোন রাজস্ব পায় না ৷ আবার ওই সব চ্যানেল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হওয়ায় অনেক বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের পণ্য প্রচারের জন্য বিদেশি চ্যানেলকেই বেছে নেয়৷ ফলে দেশি চ্যানেলগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান চালানোর ফলে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বঞ্চিত হয়৷ ফলে সামগ্রিকভাবে দেশ, দেশি টিভি চ্যানেল ও এর সাথে সংশ্লিষ্টরাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷
এদিকে কেবল অপারেটররা বলছেন, বিদেশি চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড না দিলে বিজ্ঞাপন কেটে বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷ সে কারণে তারা চ্যানেলগুলো প্রচার করাই বন্ধ করে দিয়েছেন৷
রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের প্রভাব বলয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া
বাংলাদেশের মিডিয়া হাউজগুলোর বেশিরভাগ পৃষ্ঠপোষক বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান৷ এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ হয়েছে ‘হু ওনস দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’ গবেষণা থেকে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের তিনটি সংবাদপত্র কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং ডেইলি সান৷ আছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম এবং টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪৷ এছাড়া এফএম রেডিও স্টেশন রেডিও ক্যাপিটালও তাদের৷ এই মিডিয়া কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বেক্সিমকো গ্রুপ
এই গ্রুপের টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি৷ মালিক বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
স্কয়ার গ্রুপ
এই গ্রুপের টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টেলিভিশন৷ এর কর্ণধার স্কয়ার গ্রুপের অধীনে থাকা স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ইমপ্রেস গ্রুপ
টেলিভিশন চ্যানেল, চ্যানেল-আই এর মালিকানা ইমপ্রেস গ্রুপের৷ এর কর্ণধার ফরিদুর রেজা সাগর৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশান কোম্পানি
টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা এবং এটিএন নিউজ এই কোম্পানির৷ এর কর্ণধার মাহফুজুর রহমান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ইত্তেফাক গ্রুপ অফ পাবলিকেশনস লিমিটেড
সুপরিচিত পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক এই কোম্পানির৷ এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী৷ বর্তমানে ইত্তেফাকের সম্পাদক জাতীয় পার্টি নেতা, সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী তাসমিমা হোসেন এবং প্রকাশক মঞ্জু-তাসমিমা দম্পতির কন্যা তারিন হোসেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এইচআরসি গ্রুপ
বাংলা পত্রিকা যায় যায় দিন এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউএজ এই গ্রুপের৷ এর মালিক আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর ভাই সাঈদ হোসেন চৌধুরী৷ সাবের হোসেন চৌধুরী কর্ণফুলি গ্রুপের মালিক৷ সেই সুবাদে দেশ টিভির কর্ণধার তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সিটি পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড
এই কোম্পানির পত্রিকা দৈনিক দিনকাল৷ এর মালিক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
হামিম গ্রুপ
চ্যানেল-২৪ টেলিভিশন এবং সমকাল পত্রিকার মালিক৷ এর কর্ণধার আওয়ামী লীগ নেতা একে আজাদ৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ট্রান্সকম গ্রুপ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলো এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের মালিক এই গ্রুপ৷ প্রয়াত শিল্পপতি লতিফুর রহমান এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা৷ প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণও রয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বেঙ্গল গ্রুপ
টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির মালিক বেঙ্গল গ্রুপ৷ এর কর্ণধার মোর্শেদ আলম এমপি৷
ছবি: Rtv
এনটিভি
বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মোসাদ্দেক আলী ফালু এর মালিক৷ তিনি একজন ব্যবসায়ী৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবার
জনকণ্ঠ পত্রিকার মালিক এই শিল্প পরিবার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
রূপায়ন গ্রুপ
দৈনিক পত্রিকা দেশ রূপান্তর এই গ্রুপের৷ রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সিটি গ্রুপ
সময় টেলিভিশনের মালিক এই গ্রুপ৷ সবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ভাই এর কর্ণধার৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মেঘনা গ্রুপ
একাত্তর টেলিভিশন এই গ্রুপের৷ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মোস্তাফা কামাল এই গ্রুপের কর্ণধার৷ তবে সাংবাদিক মোজাম্মেল হক বাবু’র শেয়ার রয়েছে এতে৷
ছবি: Sanjay Kumar
শ্যামল বাংলা মিডিয়া
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশন এই মিডিয়া কোম্পানির৷ এর কর্ণধার আবদুল হক৷ তবে নেপথ্যে মালিকানায় বিএনপির প্রয়াত সাংসদ সাদেক হোসেন খোকার নাম শোনা গেলেও নথিপত্রে তার নাম নেই বলে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে৷
ছবি: Ahasanul Haque
যমুনা গ্রুপ
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা এবং যমুনা টেলিভিশন এই গ্রুপের৷ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী সালমা ইসলাম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান৷ সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য তিনি৷ (‘হু ওনস দ্য মিডিয়া ইন বাংলাদেশ’ গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ এবং গবেষক মো. সাজ্জাদুর রহমান৷ প্রকাশক সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ,ঢাকা)
ছবি: Ahasanul Haque
18 ছবি1 | 18
এর ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ দর্শকরা৷ দেশীয় চ্যানেলগুলোর বাইরে আর কোন চ্যানেলই দেখতে পারছেন না তারা৷ বাংলাদেশে বহুদিন ধরেই চলছে ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসা, জি বাংলা, স্টার প্লাস, সনিসহ আরো কিছু বিনোদনভিত্তিক চ্যানেল৷ এক শ্রেণীর দর্শকের কাছে এই চ্যানেলগুলো বেশ জনপ্রিয়ও বটে৷ তবে চ্যানেল বন্ধে দর্শকদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷ কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷ হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ কেউ আবার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, খুবই ভাল উদ্যোগ৷ এর মাধ্যমে দেশি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে, বিদেশি সংস্কৃতির বিজাতীয় আগ্রাসন থেকে আমরা মুক্তি পাবো৷ অনেকের মতে, ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়ালগুলো অবাস্তব, উদ্ভট ও অশালীন গল্পের সিরিয়াল প্রচার করে৷ যা সুস্থ সভ্য ভদ্র সংস্কৃতির বিরোধী৷ ফলে সরকারের সিদ্ধান্তকে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলছেন তারা৷ এমনকি বিজ্ঞাপনমুক্ত হলেও দেশে এসব টিভি চ্যানেল না চালানোর পক্ষে অনেকে৷ তবে আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন এর মতো আন্তর্জাতিক খবরের চ্যানেলগুলো বন্ধ রাখায় অবাধ তথ্য প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকাও করছেন অনেক দর্শক৷ বিদেশি স্পোর্টস চ্যানেলের বাংলাদেশী দর্শকেরাও তাদের নির্মল বিনোদনের মাধ্যম বন্ধ হওয়ায় হতাশ৷
তবে বিবিসি সিএনএনসহ ২৪টি বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত ক্লিন ফিড আছে বলে তথ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন৷ কিন্তু অনেক অপারেটরই সেগুলো চালাচ্ছে না৷ যা কেবল অপারেটর লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ৷ সরকারের এই বক্তব্যের পর অবশ্য কিছু অপারেটর সরকার নির্ধারিত বিজ্ঞাপনমুক্ত চ্যানেলগুলো সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে৷
বাংলাদেশ সরকার বলছে, ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরকম সম্প্রচার আইন আছে৷ অন্য দেশগুলো যদি এই আইন সফলভাবে কার্যকর করতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
এর উত্তরে কেবল অপারেটররা বলছে, এক্ষেত্রে তাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তাদের মতে, ডিজিটালাইজেশন এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে৷ তাদের অবকাঠামো দুর্বল৷ অনুষ্ঠানকে বিজ্ঞাপনমুক্ত করার প্রযুক্তিও তাদের কাছে নেই৷ আবার তেমন প্রযুক্তি সংগ্রহ করার কোন চেষ্টা বা আগ্রহও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না৷ বরং চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েই তারা তাদের দায় সেরেছেন৷ এমনো বলছেন যে, সরকারের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষ যদি কেবল লাইন নেয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে অপারেটিং পেশায় জড়িত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়বেন৷
এদিকে এটাও সত্য যে, বিজ্ঞাপনের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশের প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো দেশী বিজ্ঞাপনের সীমিত বাজারে বেশ খানিকটা সংকটের মধ্যেই আছে৷ এই অবস্থায় দেশের বিজ্ঞাপন বাইরের টেলিভিশন চ্যানেলে চলে যাওয়ায় তাদের সংকট আরো বাড়ছে৷ ফলে দেরিতে হলেও সরকার যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন বেসরকারি টিভির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা৷ যদিও প্রশ্ন আছে, বাইরের টিভিতে চলে যাওয়া বিজ্ঞাপনগুলো কি তাহলে এখন দেশীয় চ্যানেলগুলো পাবে? না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তবে এক্ষেত্রে দেশি টেলিভিশনগুলো হয়তো তাদের কনটেন্ট শক্তিশালী করে বিজ্ঞাপনদাতাদের আকৃষ্ট করতে মনোযোগী হবে৷
আসলে, কেবল অপারেটর, সরকার, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল মালিকসহ সকল পক্ষকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে৷ দেশের বাণিজ্যিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ দেখার পাশাপাশি দর্শকদের চাহিদার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে৷ এখন কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউব ও ইন্টারনেটভিত্তিক আন্তর্জাতিক ভিডিও প্লাটফর্মগুলিতেও হাজার কোটি টাকার দেশীয় বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে৷ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যদি নিজেদের অনুষ্ঠানের মান ও বৈচিত্র্য না বাড়ায়, যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়, তবে স্বাভাবিকভাবেই তারা বিজ্ঞাপন হারাবে৷ মানুষ বিনোদনের জন্য অনলাইন প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকলে বিজ্ঞাপনদাতারাও সেদিকে ছুটবেন৷ ফলে বৃহত্তর পরিসরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়গুলো নিয়ে আরো ভাবতে হবে৷