সন্ত্রাস দমন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ, জানাচ্ছে সিআরআই৷ তাদের কথায়, ২০১৬ সার সন্ত্রাস বিরোধী অর্থায়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ উন্নত অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন৷ তাতে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার তালিকায় ৬.৪ পয়েন্ট পেয়ে ভারতের পরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷
সম্প্রতি মানি লন্ডারিং (এপিজি)-এর ক্ষেত্রেও এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের একটি রিপোর্টে বাংলাদেশকে ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়৷ গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন ও সহিংস চরমপন্থা রোধে বেশ কিছু আইন তৈরি করা হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে মানি লন্ডারিং প্রিভেনশন অ্যাক্ট ২০১২ এবং মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স অ্যাক্ট ২০১২৷
অন্যদিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম সোমবার বলেছেন, গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার জন্য যে অর্থ লেগেছে, সেটা মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে৷ প্রাথমিক তদন্তে ঐ টাকার পরিমাণ ১৪ লাখ বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ তবে এ মুহূর্তে পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন বলেও জানান তিনি৷
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন
একদিকে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিবাদে বিদেশি অর্থায়ন কমছে৷ অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক হামলার অর্থ এসেছে বিদেশ থেকে৷ তাহলে বিষয়টা কেমন হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদেশি অর্থায়ন কমা মানেই যে জঙ্গি তৎপরতা কমেছে, এটা বলা যাবে না৷ তাছাড়া সব সময় বিদেশ থেকে অর্থ আসবে, এমনটা তো নাও হতে পারে৷''
তিনি বলেন, ‘‘দেশেই অর্থের ‘সোর্স' থাকতে পারে৷ বাংলাদেশে যে কালো টাকার প্রভাব সেই কারণে এখন দেশ থেকেই তারা অর্থ তুলতে পারে৷ এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যেহেতু জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে, সেহেতু বিদেশ থেকে অর্থ আসা কমলেই বুঝতে হবে যে, দেশের মধ্যে তাদের অর্থের উৎস বেড়েছে৷ আসলে নানাভাবে তারা অর্থ সংগ্রহ করতে পারে৷''
সিআরআই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের বিষয়টি শনাক্ত করার জন্য ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে৷ ২০১৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের সদস্যপদ পায়৷ সদস্যপদ পায় মানি লন্ডারিং বিষয়ে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপেরও৷ এরপর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স তাদের ‘গ্রে তালিকা' থেকে বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহার করে নেয়৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও একই অভিমত ব্যক্ত করা হয় এবং বর্তমান সরকারের প্রশংসা করা হয়৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
8 ছবি1 | 8
সন্ত্রাসে বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন রোধ সংক্রান্ত এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের নিজস্ব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের সামর্থ্য বাড়াতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে৷
বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, ‘‘এই গবেষণা তারা কীভাবে করে, সেটা আমরা জানি না৷ কারণ একটা গবেষণা অনেককিছু মেনে করতে হয়৷ একজন আওয়ামী লীগ নেতার তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হয়৷ ফলে তারা যে সরকারের সাফল্যের দিকটা তুলে ধরবে, সেটাই তো স্বাভাবিক৷''
ওদিকে মনিরুল ইসলাম জানান, গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার জন্য অর্থ এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, হুন্ডির মাধ্যমে৷ তিনি বলেন, ‘‘হামলায় যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, সেটা সংগ্রহ থেকে শুরু করে পুরো ঘটনার বিষয়ে তাঁরা কিছুটা জানতে পেরেছেন৷ অর্থ ও অস্ত্র – দু'টোই বাইরে থেকে এসেছে৷ অর্থ এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে৷ তাও আবার প্রায় ১৪ লাখ টাকা এসেছে একবারে৷ এই টাকা জঙ্গিরা অস্ত্র সংগ্রহ ও বাসা ভাড়ার কাজে লাগিয়েছে৷ যিনি এই অর্থটা গ্রহণ করেছেন, তার পরিচয়ও পাওয়া গেছে৷ এবার তাকে আটক করার অভিযান চলছে৷ এছাড়া এই অর্থ কোন দেশ থেকে এসেছে তা জানা গেলেও কোন ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছে, তা এখনো জানা যায়নি৷ তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে৷''
বন্ধুরা, আপনারা কী মনে করেন? বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতায় বিদেশি অর্থায়ন কমার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কি কমেছে? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগারদের উপর বিভিন্ন হামলায় মাদ্রাসা এবং সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার কথা বলছে গোয়েন্দারা৷ এই নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
অভিযোগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে
২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বা এনএসইউ-এর পাঁচ ছাত্র৷ তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়৷ এরা সকলেই ছিল আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের মগজ ধোলাই
ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের ভুলিয়েভালিয়ে দলে নিচ্ছে জঙ্গিরা, এমন ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরা তাই জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের জন্য আগামীতে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করার কথাও ভাবছেন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
আছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট-এর ছাত্র মোহাম্মদ নুরউদ্দনি এবং আবু বারাকাত মোহাম্মদ রফকিুল হাসান হাসানকে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করে পুলিশে দেয়া হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
হিযবুত তাহরীরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রধান মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ের আইবিএ-র শিক্ষক ছিলেন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও রয়েছে
কওমি মাদ্রাসাগুলোকে জঙ্গিবাদের কারখানা বলা হতে একসময়৷ সেই বাস্তবতা মুছে যায়নি৷ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক দু’জন নিজেদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থী দাবি করেছেন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid
সতর্ক পুলিশ
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এবং জঙ্গি বিষয়ক বিশেষ সেলের সদস্য সানোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের একাংশ এখন জঙ্গি তৎপরতার দিকে ঝুঁকছে৷ আর যারা অপারেশনে অংশ নিচ্ছে, তারাও বয়সে তরুণ এবং ছাত্র৷''