বিদেশি পর্যবেক্ষক না আসা, সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়
গোলাম মোর্তোজা
১০ ডিসেম্বর ২০১৮
কোন একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যখন জাতীয় নির্বাচন হয়, বাংলাদেশে সেই নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হয় না৷ অতীতে কখনো হয়নি৷ ১৯৯১ সালের আগে পর্যন্ত সামরিক সরকারগুলোর সময়ে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কোনো নির্বাচনই ছিল না৷
বিজ্ঞাপন
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে নিশ্চিত করেই বলা যায় আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতো৷ জনগণের ভোটে পরাজিত খন্দকার মোশতাকের মতো দু-এক জনকে জেতানোর জন্যে, সেই নির্বাচনটিও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল৷
বাংলাদেশে জনগণের ভোটের প্রতিফলন দেখা যাওয়া শুরু হয় ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে৷ তখন নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে৷ এখন আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ নির্বাচনটি কেমন হবে, কেমন হলো তা সরকারি দল একভাবে দেখবে৷ বিরোধী দল দেখবে তার দৃষ্টিকোণ থেকে৷ তৃতীয় একটি অবস্থান থেকে দেখবে পর্যবেক্ষকরা৷ এর মধ্যে দেশি পর্যবেক্ষক আছেন, আছেন বিদেশি পর্যবেক্ষক৷ বাংলাদেশের মতো দেশের জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বিদেশি পর্যবেক্ষক অপরিহার্য কিনা?
সংসদীয় নির্বাচনে কবে কতজন বিদেশি পর্যবেক্ষক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের ৩০শে ডিসেম্বর৷ ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনগুলোতে কতজন পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন বা থাকছেন জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক, সবচেয়ে কম সংখ্যক
২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
১৯৯১ সাল
বাংলাদেশের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি৷ নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঐ নির্বাচনে ৫৯ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: Samir Kumar Day
১৯৯৬ সাল, ফেব্রুয়ারি
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল৷ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ৩০০টি আসনই তারা পায়৷ নির্বাচন কমিশন সূত্রে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই৷
ছবি: DW/S. Kumar Day
১৯৯৬ সাল, জুন
একই বছর নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় জুনে৷ অর্থাৎ সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১২ জুন৷ এতে বিদেশি পর্যটক ছিলেন ২৬৫ জন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
২০০১ সাল
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর৷ ২০০১ সালে ২২৫ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
২০০৮ সাল
বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯শে ডিসেম্বর ২০০৮ সালে৷ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে৷ ২০০৮ সালে ৫৯৩ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪ সাল
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারি৷ এতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই নির্বাচন বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও সতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে৷ নির্বাচনের আগে সহিংসতার কারণ দেখিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি৷ ফলে ওই নির্বাচনে মাত্র চারজন বিদেশি পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
২০১৮ সাল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের ৩০শে ডিসেম্বর৷ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩২ পর্যবেক্ষক আসবেন৷ তিনজন পর্যটক পাঠাচ্ছে ভারত৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক জানিয়েছেন, যথেষ্ট সময় ও প্রস্তুতি না থাকায় তাদের প্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবেন না৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
8 ছবি1 | 8
১. বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে৷ এসব প্রতিষ্ঠানের বড় অংশটা এনজিও হিসেবে অন্যান্য কাজও করে৷ বাংলাদেশের রাজনীতি যেমন আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত, বিভক্ত পর্যবেক্ষকরাও৷ তাছাড়া এনজিও হিসেবে কাজ করায়, সরকার অসন্তুষ্ট হতে পারে এমন ঝুঁকি নিতে পারে না৷ নির্বাচন কমিশন সচিব ইতিমধ্যে তাদের হুমকি দিয়ে রেখেছেন ‘নিবন্ধন বাতিল' হয়ে যেতে পারে৷ পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান ব্যক্তিরা যেহেতু দলীয়ভাবে কথা বলেন, অনেকে সরকারের আনুকূল্য নিয়ে থাকেন, ফলে তাঁরা যা বলেন বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের যে পর্যবেক্ষণ, তা খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায় না৷
২. দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, দেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে আস্থাহীনতা এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবিশ্বাসে, জনমন থেকে এই বিশ্বাস প্রায় উঠে গেছে যে নির্বাচন ‘সুষ্ঠু' হবে৷ এখানেই আসছে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের প্রসঙ্গ৷
বাংলাদেশের সাধারণ জনমানুষের ভেতরে, বিশেষ করে যাঁরা একটু সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করেন, তাঁরা নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক দেখতে চান৷ জনমনে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত যে, সরকার ধমক দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করতে পারবেন না৷ তাঁরা যা দেখবেন, তাই বলবেন৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসবে সঠিক চিত্র৷
৩. যখন জানা গেল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না, তখন যেন কিছুটা হতাশা তৈরি হলো৷ মানুষ মনে করে, দেশি পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন, গণমাধ্যমের সংবাদকে সরকার এখন খুব একটা গুরুত্ব দেয় না৷ যদিও শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণমাধ্যম নির্বাচনের অনিয়ম-বিচ্যুতিগুলো মোটামুটি সঠিকভাবে পরিবেশন করে৷ গণমাধ্যমে প্রদর্শন করা সংবাদ মোকাবিলায় সরকার একটা অদ্ভুত নীতি অনুসরণ শুরু করেছে৷ ধরুন, কোনো একটি আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪০০৷ গণমাধ্যমে দেখানো হলো কেন্দ্র দখল-ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট, মাস্তানির চিত্র৷ ৪০০টি কেন্দ্রের মধ্যে গণমাধ্যম হয়তো দেখালো ২০টি কেন্দ্রের চিত্র৷ তখন সরকার বলতে শুরু করে ৪০০টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২০টিতে অনিয়ম হয়েছে, বাকি ৩৮০টি কেন্দ্রে নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনও সরকারের এই যুক্তিটিই গ্রহণ করে৷ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন বলতে শুরু করে, মাত্র ৫ শতাংশ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে৷ বাকি ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে৷ এই ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রের অনেকগুলোই যে অনিয়ম হওয়া ২০ শতাংশের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়, তা গণমাধ্যমে তেমন একটা প্রকাশিত হয় না৷ গোলযোগ হয় এমন কেন্দ্রের সংবাদই গণমাধ্যম জোর দিয়ে প্রচার করে৷ গোলযোগ ছাড়া যে কারচুপি হয়, তার সঠিক চিত্র উঠে আসে না গণমাধ্যমে৷
নির্বাচনি প্রচারণার কয়েকটি নীতিমালা
নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে ‘সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ প্রণয়ন করে৷ ছবিঘরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: Reuters
চাঁদা দেয়া যাবে না
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে উক্ত প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা উক্ত এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো চাঁদা বা অনুদান দেয়া বা দেয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন চলবে না
নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
পোস্টারের আকার
সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৬০X৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৩X১ মিটার হতে হবে এবং পোস্টারে বা ব্যানারে প্রার্থী তাঁর প্রতীক ও নিজের ছবি ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি বা প্রতীক ছাপাতে পারবেন না৷ তবে প্রার্থী কোনো নিবন্ধিত দলের মনোনীত হলে সেক্ষেত্রে তিনি কেবল তাঁর বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ছাপাতে পারবেন৷
ছবি: Reuters
যেখানে পোস্টার লাগানো যাবে না
কোনো প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি, সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনাসমূহ এবং বাস, ট্রাক, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ, রিক্সা কিংবা অন্য কোনো প্রকার যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাতে পারবেন না৷ তবে দেশের যে কোনো স্থানে এসব ঝুলানো বা টাঙানো যাবে৷
ছবি: Reuters
অন্যের পোস্টারে নয়
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদির উপর অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি লাগানো যাবে না এবং উক্ত পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন তথা বিকৃতি বা বিনষ্ট করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলিকপ্টার নয়
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ট্রাক, বাস, মোটর সাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে মিছিল বের করতে পারবেন না কিংবা কোনো শোডাউন করতে পারবেন না৷ প্রচারণাকাজে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না৷ তবে দলীয় প্রধানরা যাতায়াতের জন্য তা ব্যবহার করতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
ভয় দেখানো চলবে না
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে৷ তবে প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান পন্ড বা তাতে বাধা প্রদান বা ভীতিসঞ্চারমূলক কিছু করতে পারবে না৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
দেয়াললিখন নয়
দেয়ালে লিখে প্রচারণা চালানো যাবে না৷ কালি বা রং দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে দেয়াল ছাড়াও কোনো দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়কদ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অংকন করা যাবে না৷ প্রতীক হিসাবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
খাবার দেয়া যাবে না
নির্বাচনি ক্যাম্পে ভোটারদের কোনোরকম কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনো উপঢৌকন দেয়া যাবে না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
মসজিদ, মন্দিরে নয়
মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো নির্বাচনি প্রচারণা চালানো যাবে না৷ প্রচারণার সময় ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেয়া বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গবৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য দেয়া যাবে না৷
ছবি: Reuters/M.P. Hossain
মাইক ব্যবহারের নিয়ম
নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী কোনো যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নিয়ম না মানলে
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷ দলের ক্ষেত্রেও এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
12 ছবি1 | 12
এখন টেলিভিশন টক শো'র বেশির ভাগ আলোচক-উপস্থাপক সরকার সমর্থক৷ ফলে যে টেলিভিশনে অনিয়মের সংবাদ প্রচার করা হয়, সেই টেলিভিশনের টক শো-তেই বলা হয় নির্বাচন ‘সুষ্ঠু' হয়েছে৷ দেশি পর্যবেক্ষকদের মধ্যে সরকারের পক্ষাবলম্বনকারীরা প্রায় একই কথা বলেন৷ সরকারবিরোধী পর্যবেক্ষকরা কিছুটা ভয় নিয়ে কিছু কথা বলেন৷ তবে দলীয় পরিচয়ে পরিচিত হওয়ায়, তাদের কথা জনমনে গুরুত্ব পায় না৷ এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর থাকায়, আদৌ কোনো কথা তাঁরা বলতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে৷ তাছাড়া নির্বাচন কমিশন বলে দিয়েছে ‘মূর্তির মতো' দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ ছবি তোলা যাবে না, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলা যাবে না৷
৪. সঠিক চিত্র, অর্থাৎ ২০টি কেন্দ্রের বাইরের ৩৮০টি কেন্দ্রেরও অনেকগুলোতে যে অনিয়ম হয়েছে, তা বলে শুধু বিরোধী দল৷ স্বাভাবিকভাবেই সে কথা সরকারের কাছে বা নির্বাচন কমিশনের কাছে গুরুত্ব পায় না৷
বাস্তবতা হলো, ৪০০টি কেন্দ্রের প্রায় সব কটিতে অনিয়ম হয়৷ বিরোধী দলের এজেন্টদের সরকারি বাহিনী বের করে দেয়৷ নির্বাচনের আগের কয়েক দিন ধরপাকড় করে, আগের রাতে এজেন্টদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়৷ নির্বাচনি কর্মকর্তারা সরকারের মনোভাব বুঝে কাজ করেন৷ এসব কথা গণমাধ্যম ছাড়া বলার বা দেখার আর কেউ থাকে না৷ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি থাকলে তাঁরা হয়ত বলতেন, ‘জনমানুষের ধারণা এমনই৷'
৫. বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিশেষ করে ইইউ কেন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা আছে৷ বাংলাদেশের সচেতন শ্রেণির ভেতরে ক্রমেই এই বিশ্বাসও তৈরি হচ্ছে যে, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া বা না হওয়া নিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশই চিন্তিত নয়৷ পর্যবেক্ষক পাঠালে সত্যটা বেরিয়ে আসতে পারে৷ তা হয়ত গুরুত্বপূর্ণ দেশের সরকারগুলোও চান না৷ কিছু কথা বলতে হয় বলে বলেন৷ তারাও বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে নিজের দেশের জন্যে কিছু পেতে চান৷
প্রশ্ন আসতে পারে, ধনী একটি দেশ বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশের থেকে কী চাইবে বা কী পাওয়ার আছে? সরলভাবে এমন প্রশ্ন সামনে আনলেও, উত্তর এত সরল নয়৷ উত্তর অ্যামেরিকার যে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করেছে, সরকারের বা নির্বাচনের দোষত্রুটি এখন তাদের কাছে আর অতটা বিবেচনার বিষয় নয়৷ আরেকটি দেশ খনিজ সম্পদ সেক্টরে বা এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের ব্যবসা করার সুযোগ পেয়ে খুশি৷ কেউ ই-পাসপোর্ট, কেউ স্যাটেলাইট, কেউ ট্রানজিট বা করিডোর, কেউ সেতুর কাজ, কেউ বিদ্যুৎ সেক্টরে ব্যবসার সুযোগ পেয়ে খুশি৷
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যু নয়৷ সুতরাং কারণ যা-ই বলা হোক, বিদেশি পর্যবেক্ষক না পাঠানোর মূল কারণ তা নয়৷ বাংলাদেশের নির্বাচনের সঠিক চিত্র জানার জন্যে বিদেশি পর্যবেক্ষকের প্রয়োজন আছে৷ বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিশেষ করে ইইউ পর্যবেক্ষক না আসায় জনমনে কিছুটা হলেও হতাশা আছে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷