জার্মানির সবচেয়ে জনাকীর্ণ রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের সব দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তবে সমালোচকরা বলছেন, এর ফলে রাজ্যটিতে বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যেতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ইমকে আলেন বিষয়টি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি চালুর পর ‘বিপর্যয়' ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি৷ আর সেই বিপর্যয় দেখার পরও নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া বা এনআরডাব্লিউ রাজ্য কেন এই ফি চালু করতে চাচ্ছে, তা কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন আসতা'র নির্বাহী কমিটির প্রধান ইমকে আলেনের বোধগম্য হচ্ছে না৷
আলেন কোনোরকম রাখঢাক না রেখেই প্রস্তাবটির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘এই নির্বুদ্ধিতার অবসান হওয়া উচিত৷''
আলেন যে প্রস্তাবকে ‘নির্বুদ্ধিতা' মনে করছেন, সেই প্রস্তাবটি করেছেন ইসাবেল ফাইফার-পয়েন্সগেন৷ এনআরডাব্লিউ রাজ্যের বিজ্ঞানমন্ত্রী তিনি৷ তাঁর এই প্রস্তাব শুরুতে অনেককেই বিস্মিত করে৷ রাজ্য সরকারের জোট, অর্থাৎ রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী এবং উদারপন্থি মুক্ত গণতন্ত্রীদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে সামগ্রিকভাবে টিউশন ফি তুলে দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে৷
তবে ফাইফার-পয়েন্সগেন মনে করেন, ‘‘ইইউভুক্ত নয় এমন সব দেশের শিক্ষার্থীরাজার্মানির অবকাঠামো ব্যবহার করছে এবং ভালো শিক্ষা পাচ্ছে৷ তাই তাদের এ খাতে যে ব্যয় হচ্ছে তাতে অবদান রাখা উচিত৷''
বাড়তি আয়
আলেন এবং রাজ্যমন্ত্রী উভয়েই বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যে টিউশন ফি চালুর পরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ চলতি বছরের শুরুতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফি চালু করে রাজ্যটি৷ সেখানে এখন একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে প্রতিবছর তিন হাজার ইউরো প্রদান করতে হয়৷ এনআরডাব্লিউও যদি একই ফি চালু করে, তাহলে রাজ্যের ভাণ্ডারে বড় অংকের অর্থ জমা হবে৷ টাকার হিসেবে যা বছরে দু'শ' মিলিয়ন ইউরোর বেশি৷ জার্মানির সবচেয়ে জনাকীর্ণ রাজ্যটির ৭৪০,১৫৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৭,৬০৯ জন ইইউভুক্ত দেশের নয়৷ তাদের অধিকাংশই এসেছেন তুরস্ক (১৪,১০৪ জন), চীন (৮,৪৮৩) এবং ভারত (৩,৯৫৭) থেকে৷
তবে বাস্তবতা ভিন্ন
আলেন সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, টিউশন ফি চালু হলে এনআরডাব্লিউ রাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা খুব দ্রুত কমে যেতে পারে৷ অন্তত বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গে সেরকমই ঘটেছে৷ রাজ্যটির সাতটি জনপ্রিয় ইন্সটিউটের এক তৃতীয়াংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে কমে গেছে বলে জানান তিনি৷
এনআরডাব্লিউ-র বিজ্ঞানমন্ত্রীও বিষয়টি বোঝেন৷ তিনি জানিয়েছেন, বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গের পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর তিনি হয়ত তাঁর প্রস্তাবে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারেন৷ আর সেক্ষেত্রে গরিব দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দেয়া থেকে বিরত রাখা হতে পারে৷
উল্লেখ্য, বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গে টিউশন ফি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে৷ রাজ্যটির চারটি প্রশাসনিক জেলায় এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শিক্ষার্থীরা৷
জার্মানিতে পড়তে আসার আগে যা যা জানা প্রয়োজন
প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন৷ জার্মানিতে কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা পাওয়া যায়৷ তবে জার্মানির উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ার আগে শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন৷ পড়ে নিন সেগুলো৷
ছবি: DW
টিউশন ফি নেই, তবে
জার্মানির ১৬টি রাজ্যের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো টিউশন ফি নেই৷ এটা সত্য৷ তবে এক্ষেত্রে শর্ত প্রযোজ্য৷ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুনির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রোগ্রামে আবেদন করলে বিনা খরচায় পড়ার সুযোগ আছে৷ সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা যেসব শর্ত মনে লেখাপড়া করে, বিদেশিদেরও সেগুলো মানতে হবে৷ ‘স্টাডি এবরোড’ প্রোগ্রাম এবং প্রাইভেট ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা ফ্রি নয়৷
ছবি: Fotolia/Janina Dierks
বেশি কাজের মানসিকতায় লাগাম টানুন
একজন বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার ফাঁকে আপনি কতটা কাজ করতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করে দেয়া থাকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-র কোনো দেশের পাসপোর্টধারী নয়, এমন শিক্ষার্থীরা বছরে ১২০ দিন পূর্ণদিবস কিংবা ২৪০ দিন অর্ধদিবস কাজ করতে পারেন৷ এছাড়া সেমিস্টার চলাকালে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করা যাবে না৷ ভালো কথা, গোপনে বাড়তি কাজের চেষ্টা করবেন না৷ ধরা পড়লে বড় সমস্যা হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/MNStudio
যথাযথভাবে অনুদানের আবেদন করুন
আশার কথা হচ্ছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অনুদান এবং ফেলোশিপের ব্যবস্থা রয়েছে জার্মানিতে৷ আপনার বিষয় যাই হোক না কেন, আপনি যদি তাতে মেধাবী হন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য পরিশ্রমে আগ্রহী হন, তাহলে অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ ‘জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস’ বা ডিএএডি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে থাকে৷ তবে অনুদানের আবেদন প্রফেশনালদের মতো হওয়া চাই৷
ছবি: DW
ভিসা জটিলতা
উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জার্মানিতে পড়তে আসার ভিসা পাওয়া একটু জটিল৷ তাঁদের বেশকিছুদিন সময় হাতে রেখে ভিসার আবেদন করতে হয়৷ আর জার্মানিতে আসার পর মাঝেমাঝেই যেতে হয় ‘আউসলান্ডারবেহ্যোর্ডে’ বা বিদেশিদের জন্য নির্ধারিত সরকারি কার্যালয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব কিছুর কপি রাখুন
জার্মানিতে আসার পর আপনি নিয়মিতই বিভিন্ন চিঠি পাবেন৷ এমনকি কবে কবে বাড়ির সামনে কোন কোন ধরনের ময়লা রাখা যাবে, সেটাও জানবেন চিঠির মাধ্যমে৷ বুদ্ধিমানের কাজ হবে সব চিঠি জমা করে রাখা৷ তবে প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তর দিতে ভুল করবেন না যেন৷ জার্মানিতে বসবাসের এক বিরক্তিকর দিক হচ্ছে দেশটির জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া৷ সেই প্রক্রিয়ার অংশ এ সব চিঠি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মান বলতে পারলে অনেক সুবিধা
এটাও সত্য, জার্মানির বড় শহরগুলোতে জার্মান না জেনেও বসবাস করা য়ায়৷ এছাড়া বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ইংরেজিতে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে৷ তবে কিছুটা জার্মান ভাষা শিখতে পারলে দেশটিতে জীবনযাপন অনেক সহজ হয়ে যাবে৷ আর আপনি যদি পড়ালেখা শেষে জার্মানিতে চাকুরি করতে চান, তাহলে ভাষা জানাটা অনেক জরুরী৷ এক্ষেত্রে ডয়চে ভেলের জার্মান ভাষা শিক্ষা কোর্স আপনাকে সহায়তা করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেকে নিজেরই সহায়তা করতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইভেট কলেজগুলো ব্যয়বহুল হলেও শিক্ষার্থীদের অনেক খেয়াল রাখেন৷ শিক্ষার্থী কোনো ক্লাস ক্রমাগত মিস করে গেলে তাকে তা জানানো হয়৷ ক্যাম্পাসে কখন, কোন প্রোগ্রাম হচ্ছে তাও সুনির্দিষ্টবাবে শিক্ষার্থীদের জানাতে উদ্যোগ আছে৷ জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম৷ কখন, কোথায় কেন ক্লাস হচ্ছে কিংবা কোন প্রোগ্রাম চলছে তার খোঁজ রাখার দায়িত্ব আপনার৷
ছবি: DW
জার্মানদের সঙ্গে থাকুন
জার্মানির বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে৷ তবে তাদের সেবা নেয়া বাধ্যতামূলক নয়৷ অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেছে দেয়া অ্যাপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীর পছন্দ হয় না৷ আশার কথা হচ্ছে, অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো থেকে থাকার জায়গা বেছে নেয়া যায়৷ কাজটা কঠিন৷ তবে চেষ্টা করবেন এমন জায়গায় থাকার যেখানে জার্মান শিক্ষার্থীরা থাকেন৷ তখন ভাষা শেখাটা আপনার জন্য সহজ হবে৷
ছবি: Fotolia
আপনি একা নন
শিক্ষার্থী হিসেবে জার্মানিতে বসবাস শুরুর দিকে অনেক কঠিন মনে হতে পারে৷ মনে হতে পারে আপনি একাই বুঝি এত পরিশ্রম করছেন৷ তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার আগেও অনেক আপনার মতোই পরিশ্রম করে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ তাই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে শিখুন৷ এ জন্য বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের সহায়তা নিতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
থাকবেন, নাকি চলে যাবেন?
শুরুর দিকে জার্মানিতে বসবাস কঠিন মনে হলেও দেশটি ক্রমশ আপনার ভালো লাগতে শুরু করতে পারে৷ অনেকের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে৷ ডিগ্রি, চাকুরি আর নিরাপদ জীবন - এসব বিবেচনা করে আপনি হয়ত একসময় জার্মানিতে থেকে যেতে চাইবেন৷ কিংবা থাকবেন নাকি চলে যাবেন সেই দ্বিধায় পড়ে যাবেন৷ সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার, আমরা শুধু আপনাকে আগেভাবে জানিয়ে রাখলাম৷