ভূয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও নজরদারি সফটওয়্যারের মাধ্যমে চীনা হ্যাকাররা বিদেশে উইগুর নেতাদের উপর চরবৃত্তি করছিল। অভিযোগ ফেসবুকের।
বিজ্ঞাপন
ফেসবুকের মাধ্যমে বিদেশে বসবাসকারী উইগুর নেতাদের উপর চরবৃত্তি করছিল চীনা হ্যাকাররা। ভূয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট বানিয়ে, নজরদারি সফটওয়্যারের সাহায্যে তারা এই কাজ করত। ফেসবুক জানিয়েছে, বিদেশে বসবাসকারী উইগুর নেতা ও কর্মী, সাংবাদিক এবং বিক্ষুব্ধদের কম্পিউটার এবং স্মার্ট ফোন হ্যাক করার চেষ্টা করত চীনা হ্যাকাররা।
ফেসবুক জানিয়েছে, তারা বিষয়টি ধরে ফেলে এবং হ্যাকিং অপারেশনে বাধা দেয়। ওই হ্যাকারদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। প্রায় একশটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।
এই সব উইগুর নেতা ও কর্মীরা অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, কাজাখস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক ও অ্যামেরিকায় থাকেন। শিনজিয়াং থেকে হ্যাকাররা ৫০০ উইগুর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল। চীন ১০ লাখের বেশি উইগুর মুসলিমকে শিবিরে রেখেছে বলে অভিযোগ। জাতিসংঘের মতে, উইগুরদের উপর অত্যাচার চালায় চীন। তারা এই অত্যাচার বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
কিন্তু চীন এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, উইগুরদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা উইগুররা চীনের নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। তারা অবিলম্বে উইগুরদের উপর অত্যাচার বন্ধ করার দাবি করেছেন। তাতে চীনের ক্ষোভ বেড়েছে।
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
ফেসবুক জানিয়েছে, উইগুরদের নিউজ সাইটের মতো অবিকল দেখতে ওয়েবসাইট বানিয়েছিল হ্যাকাররা। তার মাধ্যমে এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে হাতিয়ার করে তারা নজরদারির চেষ্টা করছিল। তারা নানা ভাবে সাইবার-চরবৃত্তির চেষ্টা করছিল। তারা উইগুরদের ওয়েবসাইট, স্মার্টফোন বিকল করার চেষ্টাও করছিল। ফেসবুক এই ধরনের সব ওয়েবসাইটের নাম জানাবে।
ফেসবুকের তদন্তে জানা গেছে, এই হ্যাকাররা সাইবার-জগতে 'আর্থ এমপুসা' বলে পরিচিত। তারা খুব দক্ষ এবং সম্পদশালী। কিন্তু তাদের পিছনে কে আছে, সেটা তারা সবসময় গোপন রাখে। দুইটি চীনা কোম্পানি হ্যাকিংয়ের জন্য অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করেছিল বলে ফেসবুক জানিয়েছে।