মাঝেমধ্য়ে শোনা যায়, কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে। বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফিরছে। কিন্তু সে তো সিন্ধুর বিন্দুমাত্র।
বিজ্ঞাপন
টাকা বড় বিষম বস্তু, যার কাছে থাকে না, তার আক্ষেপের শেষ নেই৷ যাদের কাছে অঢেল থাকে, তাদের আবার ভাবতে হয়, অত টাকা রাখি কোথায়? খুব বেশি টাকা থাকলে, তার মধ্য়ে হামেশাই অসততার মিশেল থাকে। কর ফাঁকি দেয়া টাকা, ঘুসের টাকা, কালো টাকা। এমনিতে টাকার গায়ে সাদা, কালো, লাল কোনো রং থাকে না। কিন্তু সবকিছু তো এরকম সাদা চোখে দেখা যায় না। কীভাবে সেই টাকা আসছে তার উপর নির্ভর করে তার রংটা কেমন।
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পস্থাপনে মরিয়া হয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, তিনি টাকার কোনো রং দেখবেন না। আবার সেই পশ্চিমবঙ্গে কিছুদিন আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তল্লাশি চালাতেই পাওয়া যাচ্ছিল লাখ লাখ টাকা। আবার ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেসের এক বিধায়কের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। পাঁচদিন ধরে ১০টা মেশিন সমানে টাকা গুণেছে। এই টাকার তো রং দেখতেই হয়।
আবার যে টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়, তার রংও তো দেখতে হয়। দেশে কর ফাঁকি দিতে অথবা টাকার উৎস গোপন রাখতে হবে বলেই তো বিদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে পঠিয়ে দেয়া হচ্ছে সেই টাকা। সে তো একশ, দুইশ বা হাজার হাজার অথবা লাখ লাখ টাকা নয়। স্ক্রোলের একটি রিপোর্ট বলছে, কালো টাকা নিয়ে একটি বই লিখেছেন আর. বৈদ্যনাথন। সেখানে তিনি বলেছেন, সুইস ব্যাংকসহ বিদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা ভারতীয় অর্থের পরিমাণ একশ লাখ কোটি থেকে ১৮০ লাখ কোটি পর্যন্ত হতে পারে।
ভারতের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট ছিল ৪৫ লাখ কোটি টাকার। তাহলে প্রায় তিন অর্থ বছরের ভারতীয় বাজেটের সমান অর্থ বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে। বইতে বলা হয়েছে, কালো টাকার পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, তার একটা ভগ্লাংশও বিদেশ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ওই বইতে একটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে। প্রয়াত আইনজীবী ও সাংসদ রাম জেঠমালানির করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের কাছে ভারত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, হাসান আলি খান, তার স্ত্রী ও অন্যদের কাছ থেকে ৭১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকার কর দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বছরে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার আয় হলে এই করের দাবি করা যায়। সেবছর ভারতের সব মানুষের মোট আয় ছিল ৬০ লাখ কোটি টাকা।
এর পরের কাহিনি আরো সাংঘাতিক। ২০০৭ সালে সুইস কর্তৃপক্ষ একটি নিউজ ম্যাগাজিনকে জানিয়েছিল, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হাসান আলি খানের মামলায় আইনি সহযোগিতা চেয়ে যে নথি দিয়েছিল, তা বৈধ নয়। সুইস কর্তৃপক্ষ আরো তথ্য চেয়েছিল, কন্তু তা ভারত দেয়নি।
ওই বইতেই বলা হয়েছে, উইকিলিক্স খ্য়াত আসাঞ্জ ভারতের একটি টিভি চ্য়ানেলকে বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি টাকা রেখেছে ভারতীয়রা।
২০১৪ সালে অ্যাসেসিয়েটেড চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্স (অ্যাসোচেম) কালো টাকা নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, দুই ট্রিলিয়ন ডলারের কালো টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে। এক ট্রিলিয়ন মানে একের পর ১২টা শূন্য। ডলার হলে তাকে আরো ৯০ টাকা দিয়ে গুণ করতে হবে। ফলে সংখ্য়াটা মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
মাঝখানে কালো টাকা নিয়ে খুব হইচই হচ্ছিল, সংসদে বারবার দবি উঠছিল, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরাতে হবে, বিদেশের অ্য়াকাউন্টে না জানিয়ে যে অর্থ রাখা হয়েছে, তার হিসাব সরকারকে দিতে হবে। তখন সরকার জানায়, সুইস ব্য়াংকের নিয়ম ও বিচারাধীন বিষয় বলে ওই সব তথ্য জানানো যাবে না। অনেক বিতর্ক, প্রশ্ন, চাপের পর কয়েকটি নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। তা সাগরের এক বিন্দু জলও নয়।
কোথা থেকে আসে এই টাকা?
বাণিজ্য ও হুন্ডির আড়ালে টাকা পাচারের যত কৌশল
বৈধভাবে স্থানান্তরের সহজ উপায় না থাকলেও বিদেশে ঠিকই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করছেন অনেক বাংলাদেশি৷ বিপুল টাকা রাখছেন ব্যাংকেও৷ এই অর্থপাচারের কৌশলগুলো কী জেনে নিন ছবিঘরে...
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
পণ্যের মূল্য বেশি দেখানো
ধরা যাক শিল্প কারখানার জন্য এক লাখ ডলারের যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র খুললেন দেশের কোনো আমদানিকারক৷ কিন্তু এই পণ্যের প্রকৃত মূল্য ৫০ হাজার ডলার৷ মূল্য বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি এক লাখ ডলার পাঠিয়ে দিলেন বিক্রেতাকে৷ সেই ব্যক্তি তার দামটি রেখে বাকি টাকা আমদানিকারকের বিদেশের কোনো অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন৷ এতে দেশ থেকে ৫০ হাজার ডলার পাচার হয়ে গেল৷ টাকা পাচারের এই কৌশলটি পরিচিত ‘ওভার ইনভয়েসিং’ নামে৷
ছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images
রপ্তানির মূল্য কম দেখানো
ধরা যাক দেশের কোনো রপ্তানিকারক ৫০ হাজার ডলারের পণ্য বা সেবা রপ্তানির ঘোষণা দিলেন, যদিও তার প্রকৃত মূল্য এক লাখ ডলার৷ পণ্য পৌঁছানোর পর ক্রেতা দেশে ৫০ হাজার ডলার রপ্তানিকারককে পাঠালেন, আর অঘোষিত ৫০ হাজার ডলার তার বিদেশের কোনো অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন৷ মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে এভাবে রপ্তানিকারক দেশে অর্জিত ৫০ হাজার ডলার পাচার করলেন৷ টাকা পাচারের এই কৌশলটি পরিচিত ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ নামে৷
ছবি: Yu Fangping/Costfoto/picture alliance
পণ্যের পরিমাণে হেরফের
শুধু টাকার গড়মিল না, আমদানি বা রপ্তানিকৃত পণ্যের হিসাবের গড়মিলের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হয়৷ যেমন, কোনো রপ্তানিকারক ৫০ হাজার পিস পোশাক রপ্তানির ঘোষণা দিয়ে এক লাখ পিস রপ্তানি করতে পারেন৷ এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০ হাজার পিসের টাকা তিনি বিদেশে পাচার করলেন৷ উল্টোভাবে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ অতিরিক্ত দেখিয়ে বেশি দাম পরিশোধের মাধ্যমে টাকা পাচার হতে পারে৷
ছবি: Saudi Press Agency/REUTERS
ভুয়া কাগজপত্র তৈরি
বাণিজ্যের আড়ালে টাকা পাচারের আরেকটি উপায় হলো ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা৷ কোনো পণ্য আমদানি না করেই ভুয়া ঋণপত্র এবং শুল্ক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ভুয়া ছাড়পত্র দেখিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হয়৷ অনেক সময় একই পণ্যের আমদানির বিপরীতে একাধিক ঋণপত্র খুলে সেই পণ্যের নামে একাধিকবার টাকা পাঠানো হয়৷ সহজে যাতে ধরা না পড়েন তার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন টাকা পাচারকারীরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টাকা পাঠানোর ভিন্ন চ্যানেল বা হুন্ডি
প্রবাসীরা জটিলতা এড়াতে স্বীকৃত পদ্ধতির বদলে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে টাকা পাঠান, যা হুন্ডি নামে পরিচিত৷ এই পদ্ধতিতে তারা বিদেশে কোনো ব্যক্তির কাছে বা কোনো মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর করেন৷ হুন্ডি পরিচালনাকারী নেটওয়ার্ক সমপরিমাণ টাকা প্রবাসীর পরিবারকে পরিশোধ করে দেয়৷ এতে পরিবার টাকা বুঝে পেলেও প্রবাসীর অর্জিত মূল্যবান অর্থ দেশে পৌঁছে না৷ টাকা পাচার করতে চান- এমন কারো বিদেশি অ্যাকাউন্টে হয়ত তা চলে যায়৷
ছবি: Imago/Steinach
কর স্বর্গে ছায়া কোম্পানি
পাচার করা অর্থ বিদেশে রাখা ও কর ফাঁকি দেয়ার আরেকটি প্রচলিত উপায় হলো ‘কর স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে বেনামে কোম্পানি খোলা৷ এই কোম্পানিগুলোর সাধারণত কাগজ-কলমেই অস্তিত্ব থাকে৷ কয়েক স্তরে এমনভাবে এর মালিকানা আড়াল করা হয় যে প্রকৃত ব্যক্তির নাম জানা কঠিন হয়ে পড়ে৷ অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ জমা রাখা, নিজ দেশের বড় অংকের কর ফাঁকি দেয়া ও পাচারকৃত টাকা আড়াল করতে এই ধরনের কোম্পানি ব্যবহারের অভিযোগ আছে৷
ছবি: Imago/M. Bäuml
বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব
বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি মেলে৷ উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের ধনী ও দুর্নীতিগ্রস্তরা এই সুযোগ লুফে নেন৷ ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপের মাল্টা, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, লুক্সেমবুর্গে বিদেশিদের জন্য এমন স্কিম আছে৷ এই ‘গোল্ডেন ভিসা স্কিম’-এর মাধ্যমে ইইউ দেশগুলো গত দশকে আড়াই হাজার কোটি ডলার আয় করেছে৷ এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী সাইপ্রাস ও স্পেন৷
ছবি: DW/A. de Loore
কর স্বর্গে বাংলাদেশিরা
পানামা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা হংকংয়ের মতো কর স্বর্গে বিভিন্ন সময়ে কোম্পানি খুলেছেন বাংলাদেশিরাও৷ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম আইসিআইজে-র ফাঁস হওয়া চারটি নথিতে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ১০২ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে দুদক ২০২১ সালে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে উঠে আসা ৪৩টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা আদালতে জমা দিয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যের আড়ালে পাচার
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০২১-২২ অর্থবছরে শতকরা ২০ থেকে ২০০ শতাংশ অতিরিক্ত আমদানি মূল্যের ৮,৫৭১টি অর্থপাচারের ঘটনা শনাক্ত করে৷ এই সংখ্যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬২.৩৩ শতাংশ বেশি৷ ২০২৩ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩৩টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের ৮২১ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর৷ ঘটনাগুলো ঘটেছে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
বছরে চার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের হিসাবে, বিদেশে অর্থ স্থানান্তর করে কর ফাঁকির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা প্রায় চার হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা হারাচ্ছে৷ এই অর্থ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেটের ৩১ শতাংশ ও শিক্ষার ছয় শতাংশের বেশি৷ মাথাপিছু হিসাবে দুই ডলার বা ২০০ টাকার উপরে৷ এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ৩৭ কোটি ডলার ও ব্যক্তি পর্যায়ে ফাঁকির পরিমাণ দুই কোটি ৬০ লাখ ডলার৷
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
গোল্ডেন ভিসায় বাংলাদেশিরা
বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেয়ার পদ্ধতি পরিচিত গোল্ডেন ভিসা স্কিম নামে৷ গত কয়েক বছরে ক্যানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের এই সুযোগ নেয়ার খবর উঠে এসেছে৷ যেমন মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে ন্যূনতম এক লাখ ২৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হয়৷ দেশ থেকে বৈধভাবে এত টাকা স্থানান্তরের সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের নাগরিকেরা এই স্কিম ব্যবহারে উপরের দিকে আছেন৷
ছবি: bdnews24.com
পরিসংখ্যানে অর্থ পাচার
কোন দেশ থেকে কত টাকা পাচার হয় তা বোঝার একটি কৌশল আমদানি-রপ্তানি করা দেশ ও গন্তব্যের পরিসংখ্যান তুলনা করা৷ তার ভিত্তিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি জানাচ্ছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে বছরে সম্ভাব্য ৮২৭ কোটি ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে৷ অন্যদিকে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমান ছিল ৮৭ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা আট হাজার কোটি টাকার বেশি৷
ছবি: Stefan Klein/imagebroker/picture alliance
12 ছবি1 | 12
আমাদের মতো আদার ব্যাপারীরাও একটা কথা বোঝে। এই যে কিছু হলেই কাটমানির কথা আসে, কাটমানি ছাড়া যে সরকারি কোনো কাজ হয় না, সেই টাকাটা তো কোথাও রাখতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের কথাই ভাবুন। এই যে নিয়োগ কেলেঙ্কারি, প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা, এই যে সারদা কেলেঙ্কারি, হাজার হাজার কোটি টাকার নয়ছয়, এই যে তোলাবাজি, সেই টাকাটা তো কোথাও না কোথাও যাবে। গরু পাচার করেই তো কোটি কোটি টাকার কামাই হয়েছে। এই লাখ বা কোটি টাকা দিয়ে কী হবে? বাড়ি, জমি, আবাসন, হোটেল, রোস্তোরাঁয় বিনিয়োগ করা হবে।
এর থেকেও বড় অঙ্ক হলে বড় প্রকল্পে লাগানো হবে। তার থেকেও বড় অঙ্ক হলে বিদেশে পাচার করতে হবে। লাখ লাখ বা হাজার হাজার কোটি টাকার মামলা হলে তা কি দেশে রাখাটা নিরাপদ? তার থেকে ভালো সুইস বা অন্য কোনো দেশের নিরাপদ ব্যাংকে রাখা ভালো।
এই পরিমাণ অর্থ যদি দেশে থাকতো এবং দেশের অর্থনীতির মধ্য়ে থাকতো, তাহলে ভারত ও ভারতবাসীর কতটা সুবিধা হতো তা বলার জন্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না। সরকার ন্য়ায্য করের টাকা পাচ্ছে না। জিনিসের দাম বাড়ছে। দুর্নীতির রমরমা হচ্ছে। যে টাকাটা দেশের মধ্য়ে থাকলে ভারত অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে যেতো, সেটা পড়ে থাকছে বিদেশের ব্যাংকে।
এই কালো টাকা উদ্ধারের জন্য ২০১৬ সালে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বাজার থেকে পাঁচশ ও এক হাজার টাকার নোট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল। পাঁচশ ও দুই হাজার টাকার নোট চালু হলো। সবাইকে পুরোনো নোট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা করতে হলো। দেশের সব মানুষ তখন ব্যাংকের সামনে লাইন দিয়েই সময় কাটিয়েছেন। শেষে দেখা গেল, কালো টাকা উদ্ধারের কাজটা বিশেষ কিছু এগোয়নি।
আজ নোটবন্দির আট বছর পরও বিদেশ থেকে কাল টাকা উদ্ধারের কাজ খুব বেশি এগিয়েছে কি? মনে হয় না। তা হলে?
বিশ্বাস করুন এই প্রশ্নের জবাব আমার অন্তত জানা নেই। বিশেষজ্ঞরা অনেক তত্ত্বকথা শোনাতে পারেন, অনেক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারেন, রাজনীতিবিদরা অনেক স্বপ্ন দেখাতে পারেন। কিন্তু বেশ কয়েক দশক ধরে তো এই অবস্থাই দেখছি, কালো টাকা, বিদেশে টাকা পাচারের ছবিতে তো কোনো বদল হচ্ছে না।