প্রবাসী জার্মানদের ভোট
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩আগামী রবিবার জার্মানির গবেষণা জাহাজ ‘পোলারস্ট্যার্ন'-এও বিজ্ঞানীরা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখবেন৷ সরাসরি টেলিভিশন সিগন্যাল না পেলেও ইন্টারনেটে লাইভ স্ট্রিম প্রযুক্তিতে তাঁরা জানতে পারবেন জার্মানির সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গতি-প্রকৃতি৷ তবে গত আগস্ট মাস থেকে অ্যান্টার্কটিকার সাগরে থাকায় জাহাজের জার্মান নাগরিকরা ভোট দেবার সুযোগ পাচ্ছেন না৷ কারণ চিলি-র বন্দর ছাড়ার সময় দেশে ডাকযোগে ভোট দেবার প্রস্তুতিও শেষ হয় নি৷ খোদ অ্যান্টার্কটিকায় জার্মানির গবেষণা কেন্দ্রে যে নয়জন বিজ্ঞানী কাজ করছেন, তাঁরাও ভোট দেবার সুযোগ পাচ্ছেন না৷
তবে অ্যান্টার্কটিকার মতো এত কঠিন পরিস্থিতিকে ব্যতিক্রম বলা যায়৷ বিশ্বে অন্যান্য প্রান্তে যে সব জার্মান নাগরিক বসবাস করছেন, সেখানকার অবস্থা এত নাটকীয় নয়৷ যেমন জার্মান সেনাবাহিনী সৈন্যদের জন্য ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করে থাকে৷ এমনকি সমুদ্রে ভাসমান রণতরীর মধ্যেও পৌঁছে যায় ডাকযোগে ভোট দেবার খাম৷ যদিও সেই কাজ সবসময় সহজ হয় না৷ যেমন একটি জাহাজে সব কাগজপত্র পৌঁছায়নি৷ পরে সেই সব কাগজ ক্যাপসুলে ভরে স্পেনের এক বিমান থেকে প্যারাশুটে করে আকাশ থেকে ফেলা হয়৷ পরে নৌকায় করে সেই ভাসমান আধারটি উদ্ধার করা হয়৷
সৈন্যরা তাদের জন্য নির্দিষ্ট ডাকেই ‘পোস্টাল ব্যালট' পাচ্ছেন৷ ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হয় নি৷ নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের দিন সন্ধ্যা ছয়টার আগেই ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছতে হবে৷ সেটা সম্ভব করতে মাঝে মাঝে নাটকীয় ঘটনা ঘটে৷ এক সৈন্য জানিয়েছেন, যে টর্নাডো ফাইটার জেটে করে তাঁরা পোস্টাল ব্যালট পেয়েছেন৷
২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রায় ৬৭,০০০ জার্মান নাগরিক বিদেশ থেকে ভোট দিচ্ছেন৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মোট প্রায় ১৪ লক্ষ জার্মান নাগরিক জার্মানির বাইরে বসবাস করেন৷ তাঁদের মধ্যে কতজন ঠিক সময় পোস্টাল ব্যালটের জন্য আবেদন করতে ভুলে যান, সেটা কেউ জানে না৷ তাছাড়া অন্যান্য অনেক দেশের মতো বিদেশে নিজেদের দূতাবাসে গিয়ে ভোট দেয়া জার্মান আইনে সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ পোস্টাল ব্যালট-ই একমাত্র পথ৷ অনেকে আবার দীর্ঘকাল জার্মানির বাইরে আছেন বলে দেশের রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন৷ তাই ভোট দেয়ার বিষয়ে তাঁদের তেমন আগ্রহই নেই৷
জার্মানির আমলাতন্ত্রে একটি বিতর্কিত বিধান রয়েছে৷ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বসবাসরত জার্মান নাগরিকরা দেশ সম্পর্কে কতটা খবর রাখেন, তার উপর নির্ভর করছে তিনি ভোটাধিকার পাবেন কি না৷ অর্থাৎ অজ্ঞ লোকের হাতে ভোটের কাগজ তুলে দেয়া উচিত নয়৷ কিন্তু কে অজ্ঞ, আর কেই বা বিজ্ঞ – তা স্থির করবে কে? অবশ্যই এক সরকারি কর্মচারী৷ তখন তাঁর বিচারবুদ্ধি ও আবেগের উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই৷ ফলে অনেক নাগরিকই এমন অস্পষ্ট কাঠামোর বিরোধিতা করে থাকেন৷
ক্রিস্টিয়ান ইগনাৎসি/এসবি
দেবারতি গুহ