পাকিস্তানে এটা একটা বিগ বিজনেস৷ হাজার হাজর কোম্পানি বিদেশের কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন করিয়ে দেওয়ার নামে পয়সা করে৷ ছাত্র-ছাত্রীরাও সেই ফাঁদে পা দেন কেননা দেশ ছাড়ার সেটাই একমাত্র সুযোগ৷
বিজ্ঞাপন
করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কাছে সুবিশাল বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন: ‘‘ইউরোপে পড়াশুনা করতে চান? আমাদের কাছে আসুন৷ শত শত বিদেশি ইউনিভার্সিটি আর কলেজের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে৷''
‘‘আমাদের পাকিস্তানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ ইউরোপের সবচেয়ে খারাপ কলেজগুলোও আমাদের সেরা ইউনিভার্সিটিদের চেয়ে ভালো৷ এছাড়া ওখানে কোর্স শেষ করার পর ওয়ার্ক পারমিট পাবার সম্ভাবনা থাকে'', ডয়চে ভেলেকে বলেন ২৪ বছর বয়সি আলি রেজা৷ রেজা অর্থনীতির ছাত্র৷
তরুণ পাকিস্তানিরা দেশ ছাড়তে আকুল৷ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই আরো খারাপ হচ্ছে, দিন দিন বেকারত্ব বাড়ছে৷ দেশের ছাত্র জনতার পক্ষে একমাত্র বিকল্প হল বিদেশে অ্যাডমিশন পাওয়া এবং সেখানেই থেকে যাওয়া৷ অসংখ্য ‘কনসালটেন্সি' সংস্থা ঠিক এখানেই তাদের সোনার খনি আবিষ্কার করেছে৷
ভুয়ো ইউনিভার্সিটি, মেকি অ্যাডমিশন, মেকি ডিগ্রি
এই ধরনের ‘কনসালটেন্সি' সংস্থায় যে সব ছাত্রদের লাইন পড়ে, তারা ধরা যাক যুক্তরাজ্যে কোনো বিজনেস স্কুলে পড়াশুনো করতে চান৷ আসলে কোন বিজনেস স্কুল কিংবা তার মান কেমন, তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই৷ ঐ পন্থায় দেশ ছাড়তে পারলেই হল৷ সংস্থারা ছাত্রদের পশ্চিমের ইউনিভার্সিটি ও কলেজগুলিতে সহজ অ্যাডমিশনের প্রতিশ্রুতি দেয় – জার্মানিও যার মধ্যে পড়ে৷ কিন্তু বস্তুত তারা পশ্চিমের কিছু ভুয়ো ইউনিভার্সিটিতে মেকি অ্যাডমিশনের ব্যবস্থা করে৷ যদিও তারও উপযোগিতা আছে৷
ভারতে মৌলবাদীদের পাকিস্তান বিরোধীতা
ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ চারটি যুদ্ধও হয়েছে দেশ দু’টির মধ্যে৷ তবে দু’দেশের দ্বন্দ্বকে রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ না রেখে তা সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার অঙ্গনেও ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হিন্দু মৌলবাদীরা৷
ছবি: Getty Images/AFP
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে বাধা
১৯৯৯ সালে ভারত সফরে এসেছিল পাকিস্তান৷ সেবার দু’দেশের ক্রিকেট ম্যাচ বানচাল করতে ফিরোজ শাহ কোটলার পিচ খুঁড়ে রেখেছিল হিন্দু মৌলবাদী দল শিব সেনা৷ তারপরও অবশ্য ম্যাচ হয়েছে৷ ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের জয়পুর এবং মোহালির দু’টি ম্যাচেরও বিরোধীতা করেছিল শিব সেনা৷ সেবারও অবশ্য নির্বিঘ্নেই ম্যাচ হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/S.White
বীনা মালিক আর আলী সেলিমের পারফর্ম্যান্সেও আপত্তি
রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর চতুর্থ আয়োজনে অংশ নিতে এসে পাকিস্তানের বীনা মালিক এবং আলী সেলিমও পড়েছিলেন শিব সেনার আপত্তির মুখে৷ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা শুধু পাকিস্তানি হওয়াকে অপরাধ মেনে বীনা এবং সেলিমকে অবশ্য বাদ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Merey
কাবাডিতেও পাকিস্তানে আপত্তি
২০১৪ সালে পেশাদার কাবাডি লিগের কয়েকটি দল পাকিস্তানের খেলোয়াড় দলে রেখেছিল৷ টাকা খরচ করে তাদের খেলোয়াড় নিয়ে তাদের শেষ পর্যন্ত খেলানো যায়নি৷ সেবারও শিব সেনার আপত্তি এবং আপত্তির মুখে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয় দলগুলোকে৷
ছবি: imago/Xinhua
আতিফ আসলামের কনসার্ট হলো না
২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল পুনেতে আতিফ আসলামের কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল৷ শিব সেনার আপত্তির মুখে সেই কনসার্ট আর হয়নি৷
ছবি: Coke Studio
বন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না গুলাম আলী
পাকিস্তানের গজল শিল্পী গুলাম আলী ভারতে তুমুল জনপ্রিয়৷ এ মাসেই প্রয়াত গজল শিল্পী জগজিৎ সিং-এর জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মু্ম্বইতে আসার কথা ছিল তাঁর৷ শুধু পাকিস্তানি হওয়ার কারণে তাঁর ভারত আগমন নিয়েও আপত্তি তোলে শিবসেনা৷ গুলাম আলী তাই এবার আর প্রয়াত বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও মুম্বই আসতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাকিস্তানির পাশে থাকায় ভারতীয়র মুখেই কালি
নিজের লেখা বইয়ের প্রকাশের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বই এসেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কসুরি৷ অনুষ্ঠান হয়েছে, পুস্তকও প্রকাশিত হয়েছে৷ কিন্তু তাদের দাবি অনুযায়ী অনুষ্ঠান বাতিল না হওয়ায় অনুষ্ঠানে এসে সুধেন্দ্র কুলকার্নির মুখে কালি ছিটিয়ে দিয়েছে শিবসেনা সমর্থকরা৷ ভারতের সাবেক কূটনীতিক সুধেন্দ্র কুলকার্নির একমাত্র অপরাধ তিনি এক পাকিস্তানির বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
6 ছবি1 | 6
‘‘লন্ডনে পড়ার সময় আমার কিছু পাকিস্তানি ছাত্রের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, যারা কি-করে-জানি-না মেকি অ্যাডমিশন দেখিয়ে ব্রিটিশ ভিসা পেয়েছিল'', ডিডাব্লিউ-কে জানান আবদুল আগা, যিনি ইসলামাবাদে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন৷ ‘‘ওরা কিন্তু ওখানে পড়াশুনো করছিল না, দক্ষিণ এশীয়দের দোকানপাটে কাজ করছিল৷''
বিবিসি-র খবর অনুযায়ী, গতবছর একটি তদন্ত গোষ্ঠী জানতে পারে যে, ইউনিভার্সিটি অফ কেন্ট-এর ভুয়ো ডিগ্রি সার্টিফিকেট অনলাইনে পাঁচশো পাউন্ড দামে বিক্রি হচ্ছে৷ গত জুন মাসে ব্রিটিশ সরকার ১৯০টি মেকি ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন৷ এই সব বোগাস ইউনিভার্সিটি মেকি সার্টিফিকেট বিক্রি করছিল৷
শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়৷ গত মে মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিবরণ অনুযায়ী পশ্চিমি বিশ্বে অনলাইন ডিগ্রি দেওয়া নিয়ে একটা সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৩৭০টি ইউনিভার্সিটির অস্তিত্ব কম্প্যুটারের সার্ভারেই সীমাবদ্ধ৷
সর্ষের মধ্যে ভূত
বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলির এই ভুয়ো অ্যাডমিশনে জড়িত সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই৷ তার একটি কারণ সম্ভবত এই যে, ‘‘ওরা (অর্থাৎ ‘কনসালটেন্সি' সংস্থাগুলি) সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুস দেয়৷ এই ব্যবসায় প্রচুর পয়সা রয়েছে'', আবদুল আগা যেমন ডিডাব্লিউ-কে বলেছেন৷
অন্যান্যদের মতে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে যাওয়ার কারণে বহু পাকিস্তানি যে কোনো পন্থায় দেশ ছাড়তে ব্যাকুল৷ আলি রেজা যেমন বলেছেন, ‘‘আমি জানি ইউরোপে জীবন খুব সহজ হবে না৷ কিন্তু পাকিস্তানে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারানোর চেয়ে জার্মানিতে ডিশ ধোয়ার কাজ ভালো৷''
পাকিস্তানের হিজরারা নেচে ভয় কাটান
দিনের বেলা ওয়াসিম সেলফোনের সরঞ্জাম বেচেন৷ রাতে তিনি মহিলা সেজে বিভিন্ন পারিবারিক উৎসবে নাচেন৷ ওয়াসিম হলেন হিজরা, রক্ষণশীল পাকিস্তানে যা এক অনন্ত সংগ্রাম৷ আলোকচিত্রী মুহম্মদ মুহাইসেনের তোলা ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
নিশীথ নর্তকী
রাওয়ালপিন্ডি শহরে আঁধার নেমে এলে ওয়াসিমের মুজরা শুরু হয়৷ ২৭ বছর বয়সি ওয়াসিম নাচেন ‘‘হিজরা’’ হিসেবে, যাকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বলা হয়ে থাকে৷ পাকিস্তানে প্রায় আট লাখ হিজরা আছেন, বলে অনুমান৷ বিয়েশাদি এবং অন্যান্য উৎসবে নাচনেওয়ালি হিসেবে তাঁরা খুবই জনপ্রিয়, কেননা হিজরার নাচ মঙ্গল আনে বলে অনেকের বিশ্বাস৷ কিন্তু শুধুমাত্র সেখানেই হিজরারা গ্রহণযোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
দিনের আলোয়
পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পুরুষদের মহিলাদের বেশ ধারণ করাটা আজও অবাঞ্ছনীয়৷ ওয়াসিম দিনের বেলা সেলফোনের সরঞ্জাম বিক্রি করেন৷ তাঁর সহকর্মী কিংবা বন্ধুবান্ধব ওয়াসিমের নিশীথ জীবন সম্পর্কে কিছুই জানেন না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Muheisen
ওয়াসিম হলেন রানি
ওয়াসিমের এই দ্বিমুখী জীবনের কারণ হলো: ‘‘নাচনেওয়ালি হিসেবে আমি বেশি রোজগার করি৷’’ বাস্তবিক যাঁরা হিজরা বলে পরিচিত, তাঁদের কাছে জীবন একটা অনন্ত সংগ্রাম৷ যে নর্তকী হিসেবে কাজ করতে পারেন না, তাঁর জন্য বাকি থাকে শুধু পতিতাবৃত্তি৷ সেই সঙ্গে নানা অপমান ও অপব্যবহার – যা ওয়াসিমও খুব ভালোভাবেই চেনেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Muheisen
যখন একা
বহু ধর্মবিশ্বাসী মানুষ ‘‘না স্ত্রী, না পুরুষ’’ এই জীবদের ঘৃণা করেন৷ জঙ্গি ইসলামপন্থিরা প্রকাশ্যেই হিজরাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গীরণ করে থাকে৷ কাজেই হিজরারা থাকেন সঙ্গোপনে, নিজেদের মধ্যে৷ ‘‘আমি রাস্তায় বেরলে মানুষজন হাঁ করে থাকে’’, জানালেন ৪৩ বছর বয়সি বখতাওয়ার: ‘‘আমি যখন অন্য হিজরাদের সঙ্গে নাচি, শুধুমাত্র তখনই আমার নিজেকে নিরাপদ এবং সম্মানিত বলে মনে হয়৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা
মানুষের চোখ এড়ানোর জন্য হিজরারা শহরের অলিগলিতে আশ্রয় নিয়েছেন, এমনকি নিজেদের সহকর্মী ও পরিবারবর্গের কাছেও সত্তার মহাসত্যটি গোপন রাখেন তাঁরা৷ অথচ ২০১১ সালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত ‘তৃতীয় লিঙ্গ’-কে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ হিজরারা তাঁদের পাসপোর্টে লিখতে পারেন যে তাঁরা হিজরা; তাঁরা ভোট দিতে কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন এবং আর পাঁচজনের মতো কাজে যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
সমানাধিকারের দাবি
২০১৩ সালের সংসদীয় নির্বাচনে বিন্দিয়া রানার মতো প্রার্থীরা প্রথমবারের মতো অংশ নিতে পারেন (ছবিতে ডানদিকে)৷ নির্বাচনে জিততে না পারলেও, রানা সমানাধিকার এবং বৈষম্যের অন্ত ঘটানোর দাবিতে তাঁর বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও-র কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন: কেননা শুধু আইন করে পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজের মনোভাব পরিবর্তন করা সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/Shakil Adil
টানাপোড়েন
আজও খুব কম মানুষই ৪৪ বছর বয়সি আমজাদের মতো সগর্বে বলতে পারেন: ‘‘নারী হিসেবে একমাত্র কাজ, যা আমি করতে পারি না, তা হল সন্তানের জন্ম দেওয়া৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/Muhammed Muheisen
7 ছবি1 | 7
বাংলাদেশেও কি এমন সমস্যা আছে? জানিয়ে দিন মন্তব্যের ঘরে৷