শুধু করোনার কারণে নয়, আগে থেকেই জার্মানিতে সেবাকর্মীর অভাব রয়েছে৷ জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশি সেবাকর্মীর মাধ্যমে সে অভাব পূরণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমান সময়ে সেসব পরিকল্পনার বেশিরভাগই স্থগিত রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকটের আগেও স্বাস্থ্যসেবা খাতে দক্ষ কর্মীর অভাব ছিল আর এ সমস্যা মোকাবেলা করাই ছিলো জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পাহনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রায় ৫০ হাজার স্বাস্থ্য সেবাকর্মীর পদ খালি৷ এবং জার্মান স্বাস্থ্য কাউন্সিলের হিসেব অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে তা বেড়ে তিন লাখ পর্যন্ত হতে পারে৷
সমস্যাটি পুরনো বলে কেন্দ্রীয় বিদেশি এবং বিশেষজ্ঞ প্লেসমেন্ট বা জেডএভি এর সাথে ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির ২০১৩ সাল থেকে ট্রিপল উইন নামে একটি প্রোগ্রাম চলছে৷ এবং এই প্রোগ্রামটিতে বিশেষজ্ঞ সেবাকর্মীরা বিদেশ থেকে নিয়োগ পেতে পারে৷
জার্মানিতে বাংলাদেশিদের পরিসংখ্যান
জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ‘ডেস্টাটিস’ বলছে, ২০১৯ সালে ২২৫ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন৷ জার্মানিতে বাংলাদেশিদের বসবাসের সংখ্যাও জানিয়েছে তারা৷
ছবি: DW/A. Mita
রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি
জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ‘ডেস্টাটিস’ বলছে, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ১৫ হাজার ৭১০ জন জার্মানিতে ছিলেন, যা যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ ছবিতে কেমনিৎস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Privat
২০১৫ থেকে দুই অংকে
ডেস্টাটিসের কাছে ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশিদের হিসাব রয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো জার্মানিতে থাকা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীর সংখ্যা ১০ হাজারের মাত্রা অতিক্রম করে৷ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সংখ্যাটি ছিল ১১ হাজার ৪৮৯ জন৷ এরপর প্রতিবছর সংখ্যাটি বেড়েছে৷ ছবিতে গ্যোটিঙ্গেন শহরে বাংলাদেশিদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: Azizur Rahman
দক্ষিণ এশিয়ার হিসাব
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জার্মানিতে বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৭১০৷ ঐদিন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ দুই লাখ ৬৩ হাজার ৪২০ জন জার্মানিতে ছিলেন৷ এছাড়া ভারতের ছিলেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৫ জন, পাকিস্তানের ৭৫ হাজার ৪৯৫ ও নেপালের আট হাজার ১২০ জন৷
ছবি: DW/Ravi Ranjan
নাগরিকত্বের হিসাব
২০১৯ সালে ২২৫ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷ নাগরিকত্ব বিষয়ে ডেস্টাটিসের কাছে ২০০০ সাল থেকে হিসাব পাওয়া যায়৷ এতে দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে ১০১ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন, যা সর্বনিম্ন৷ আর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিক হয়েছেন ২০০১ সালে (২৭০ জন)৷
ছবি: DW/A. Mita
দক্ষিণ এশীয়দের নাগরিকত্ব গ্রহণ
২০১৯ সালে আফগানিস্তানের দুই হাজার ৬৭৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ৷ এরপরে আছে ভারত, দুই হাজার ১৩০ জন৷ এছাড়া পাকিস্তানের এক হাজার ৭৯০, শ্রীলঙ্কার ৬৬০ ও নেপালের ১০৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নিয়েছেন৷ ছবিতে স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/V. Kumar
বিশ্বের হিসাব
২০১৯ সালে ১৮৩ দেশের এক লাখ ২৮ হাজার ৯০৫ জন জার্মানির নাগরিকত্ব নেন, যা ২০০৩ সালের পর সর্বোচ্চ৷ ঐ বছর এক লাখ ৪০ হাজার ৭০০ জন জার্মানির নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন৷
ছবি: Imago/STPP
সবচেয়ে বেশি তুরস্কের
২০১৯ সালে তুরস্কের ১৬ হাজার ২০০ জন জার্মানির নাগরিক হয়েছেন, যা সর্বোচ্চ৷ এরপরেই আছে ব্রিটেন (১৪ হাজার ৬০০), পোল্যান্ড (ছয় হাজার) ও রোমানিয়া (পাঁচ হাজার ৮০০)৷
ছবি: Getty Images/C. Koall
7 ছবি1 | 7
এই বিষয়ে জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ২০১৯ সালে প্রথমে কসোভো এবং পরে মেক্সিকো ভ্রমণ করেন এবং তার পরপরই তিনি বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ সহজ করতে স্বাস্থ্য ও নার্সিং পেশায় দক্ষ কর্মীর জন্য জার্মান বিশেষজ্ঞ কর্মী সংস্থা (ডিএফএ) প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ করোনার কারণে এখন প্রায় সবকিছু স্থগিত রয়েছে৷ মেক্সিকো এবং ফিলিপিন্সের সাথে ডিএফএ-এর এক হাজার তিনশো দক্ষ সেবাকর্মীর জন্য চুক্তি হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক প্রশ্নের জবাবে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷
২৯ বছর বয়সি একজন দক্ষ মেক্সিকান সেবাকর্মী পেরেজ ভিক্টোরিয়ানো রয়েছেন বার্লিনের চ্যারিটি হাসপাতালে৷ নার্স পেরেজ জানান, বিদেশি হওয়ার কারণে ভাষা সমস্যা ছাড়া আর কোনো সমস্যা হয়নি তার৷ তিনি মোট হাসপাতালের ১৪৭টি ওয়ার্ডে ইনফেকশন ও ফুসফুসের রোগীদের সেবা করেন৷ পেরেজের মতে, সেবার কাজটি নিঃসন্দেহে স্ট্রেসফুল হলেও জার্মানিতে কর্মী সুরক্ষা আইন থাকায় তেমন কোনো অসুবিধা নেই৷
সারব্রুকেন ক্লিনিকের পরিচালক, টমাস হেসে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জার্মানিতে আরও বেশি সেবাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং পাশাপাশি বিদেশ থেকেও দক্ষ কর্মী আনতে হবে৷ মেক্সিকো থেকে গত মে মাসে ৩৮ জন নার্সের জার্মানিতে আসার কথা ছিলো৷এখন তারা জার্মান ভাষা শিখছে, ভাষা পরীক্ষায় পাস করার পর অক্টোবর নাগাদ আসতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷