1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদেশ ফেরত ৮৫ ভাগ নারী শ্রমিক হতাশ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা আনতে অনেক নারীই বিদেশে গেছেন, এখনো অনেকে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন৷ কিন্তু কষ্টের প্রবাস থেকে ফিরেও জীবনখাতায় একইরকম শূণ্য দেখছেন বেশিরভাগ৷

Bangladesch Dhaka Arbeiterinnen kehhren aus Saudi-Arabien zurück
ছবি: DW/S. Hossain

"এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। ১১ মাসের মাথায় ফিরে আসতে হয়েছে। ওরা কাজ করায় কিন্তু বেতন দেয় না। কোন টাকা নিয়ে আসতে পারিনি। যার কাছ থেকে এই টাকা নিয়েছিলাম, তাকে ফেরত দিতে পারিনি। তিনি এখন হুমকি দিচ্ছেন, মামলা করবেন। স্বামীও ছেড়ে চলে গেছেন। চার মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি।” করোনা মহামারীর মধ্যে সৌদিআরব থেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরা গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রত্না আক্তার ডয়চে ভেলের সঙ্গে বলছিলেন তার কষ্টের কাহিনী।

বিদেশ ফেরত ৮৫ ভাগ নারী শ্রমিক হতাশায় ভুগছেন। নতুন করে কোন কাজ জোগাড় করতে পারেননি ৬০ ভাগ শ্রমিক। করোনার মধ্যে দেশে ফেরা নারী শ্রমিকদের উপর এক গবেষণায় এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলস্ দেশে ফেরা নারী শ্রমিকদের উপর এই গবেষণা করেছে।

বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, করোনা মাহামারীর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে ৫০ হাজার নারী শ্রমিক। অধিকাংশ শ্রমিক ফিরেছেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে। বিলস্ এর গবেষণা থেকে জানা যায়, ২৩ শতাংশ নারী শ্রমিক এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশে ফিরেছেন, ১৮ শতাংশ এক বছরের সামান্য বেশি সময় থেকেছেন আর ৫৫ শতাংশ নারী শ্রমিকের দেশে ফেরত আসা ছিল জবরদস্তিমূলক।

রত্না আক্তার

This browser does not support the audio element.

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া বিলস্ গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "দেশের তিনটি বিভাগের তিনটি জেলা চট্টগ্রাম, যশোর এবং ফরিদপুরকে আমরা গবেষণার জন্য বেঁছে নেয়। গবেষণার আগে আমরা যে জরিপ করেছি, সেখানে দেখেছি, এই তিন জেলার তিন হাজার ৬৪৪ জন নারী প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন। গবেষণায় আমরা ৩২৩ জন নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের গবেষণায় যে চিত্রটি উঠে এসেছে সেটা মোটামুটিভাবে দেশের চিত্র বলা যেতে পারে।'

গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে ফেরত আসা প্রতি তিন জন নারী শ্রমিকের মধ্যে এক জনের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের থেকে অবনতি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে সিংহভাগই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ৮৫ শতাংশ তাদের বর্তমান কাজ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত এবং ৫৭ শতাংশ তাদের জীবন ও জীবিকা নিয়ে চিন্তিত। ৫২ শতাংশ নারী শ্রমিক বিদেশে জবরদস্তিমূলক শ্রমের শিকার হয়েছেন, ৬১ শতাংশ বিদেশে খাদ্য ও পানির অভাবে ভুগেছেন, সাত শতাংশ যৌন এবং ৩৮ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিদেশ ফেরত ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক বেকার, ৬৫ শতাংশ শ্রমিকের নিয়মিত মাসিক কোন আয় নেই আর ৬১ শতাংশ এখন ঋণ বয়ে বেড়াচ্ছেন। 

মনিরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

রত্না আক্তারও বলছিলেন, হাসপাতালে কাজ দেওয়ার কথা বলে তাকে পাঠানো হয়েছিল। ৬ মাস সেখানে কাজও করেছেন। এরপর যখন ওরা বলল, বাসা-বাড়িতে কাজ করতে হবে তখন আমি রাজি হইনি। দেশে ফেরার পর সরকার ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। এছাড়া নামার সময় দিয়েছিল ৫ হাজার টাকা। এর বাইরে আর কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের ৭৫ ভাগেরই পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণীরও কম। ফলে সরকারি ঋণ বা অন্যন্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে তাদের জানাশোনাও কম। এই কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি সুবিধা তাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না। আমাদের আইনেও আছে, বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের তালিকা করতে হবে। কিন্তু সেই কাজটা হয় না। এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো করা হচ্ছে না। আইন ঠিক থাকলেও বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন বিদেশ থেকে ফেরা নারী শ্রমিকেরা।

বিলসের গবেষণা বলছে, বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকদের শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নাজুক। ৫৫ শতাংশ শ্রমিক শারীরিকভাবে অসুস্থ, ২৯ শতাংশের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে এবং ৮৭ শতাংশ শ্রমিক মানসিক অসুস্থতার কোন চিকিৎসা পায়নি। বিদেশ ফেরত নারী শ্রমিকরা সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন। পরিবার ও সমাজ তাদের সঙ্গে বৈরী এবং অমানবিক আচরণ করে। ৩৮ শতাংশ নারী শ্রমিক বলছেন সমাজে তাদের নিম্ন শ্রেণির চরিত্রহীন নারী বলে গণ্য করা হয়।

ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরীফুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, একজন পুরুষ শ্রমিক দেশে ফিরে আসলে তাকে যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হয়, একজন নারীকেও সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হয়। এর সঙ্গে বাড়তি হিসেবে সামাজিক ও পারিবারিক চ্যালেঞ্জগুলো তাদের মোকাবেলা করতে হয়। আসলে সরকারি-বেসরকারিভাবে সমন্বিত প্রকল্প নিয়ে কাজ করলে পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব।

বিলসের গবেষণায় যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে, ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত সামজিক সুরা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা; উপযুক্ত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া; সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি উপযুক্ত বাণিজ্যিক পরামর্শ দেওয়া; মনো-সামাজিক পরামর্শসহ উপযুক্ত স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান; পদ্ধতিগত নিবন্ধন এবং তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া; উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন যা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে; সংগঠন, নিবন্ধন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় ট্রেড ইউনিয়নকে সম্পৃক্ত করা এবং ক্রমান্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতি-কাঠামো প্রণয়নে উদ্যোগী হওয়া।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিদেশ থেকে যে নারী শ্রমিকেরা ফিরে আসছেন তাদের পূর্নবাসন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে আবারও বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে যে উদ্যোগ নেওয়ার কথা সেটা কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফিরে আসা শ্রমিকদের সমস্যার কথাগুলো আগে জানতে হবে। সে অনুযায়ী দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে আশার কথা, আগামী ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কিছু নারী শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হবে। তখন যদি আমরা এই নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠাতে পারি, তাহলে রেমিটেন্সের সরবরাহটা ধরে রাখা সম্ভব হবে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ