বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সক্রিয় ইউরোপ
৩১ আগস্ট ২০২২ইউক্রেন সংকটের জের ধরে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছে ইউরোপের অনেক দেশ৷ বিশেষ করে আসন্ন শীতের মাসগুলিতে ঘর গরম রাখতে বাড়তি চাহিদা মেটাতে প্রাণপণে বিকল্পের সন্ধান করছেন নেতারা৷ শুধু বিদেশ থেকে আমদানির উপর নির্ভর না করে ইউরোপের নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানোর পক্ষেও সওয়াল করছেন অনেকে৷ গ্যাস, তেল ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যায়েও জ্বালানি বাজারে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে৷
মোটকথা আপাতত জ্বালানির মূল্যের ঊর্দ্ধসীমা স্থির করার জন্য চাপ দিচ্ছে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ৷ বিশেষ করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যের মধ্যে প্রচলিত যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন করার সময় এসে গেছে বলে শীর্ষ নেতারা মনে করছেন৷ কারণ প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে প্রয়োজনীয় শেষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির স্থির করা মূল্যই সার্বিক মূল্য হিসেবে গণনা করা হয়৷ গ্যাসের চলমান ঘাটতির কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি অস্বাভাবিক মূল্য স্থির করছে৷ এমন অবস্থায় সার্বিকভাবে ইউরোপীয় জ্বালানি বাজার সংস্কারের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা না করে অবিলম্বে এমন পদক্ষেপের জন্য ডাক দিচ্ছে ফ্রান্স৷ আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর ইইউ জ্বালানি মন্ত্রীদের সম্মেলনে এ বিষয়ে ঐকমত্যের আশা করা হচ্ছে৷
২০২১ সালের শুরুর তুলনায় গ্যাসের মূল্য প্রায় ১২ গুণ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি বাজারে হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মতপার্থক্য ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে৷ বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার বদলে ইউরোপীয় স্তরে সমন্বিত উদ্যোগের পক্ষেও সমর্থন বাড়ছে৷ মঙ্গলবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস স্পেন, বেলজিয়াম ও গ্রিসের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রাসেলসের উদ্দেশ্যে দ্রুত গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বিচ্ছিন্ন করার ডাক দেন৷ উল্লেখ্য, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ গত বছর অক্টোবর মাসে জ্বালানি বাজারে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছিল৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনও মঙ্গলবার ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও লাটভিয়ার সরকার প্রধানদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷
ইউরোপের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ আরও তরান্বিত করতে স্পেন ও মধ্য ইউরোপের মধ্যে পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাবও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ মঙ্গলবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেসের সঙ্গে বৈঠকের পর জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস বলেন, পর্তুগাল, স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যে এমন পাইপলাইন গড়ে তুললে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সুবিধা হবে৷ ‘মিডক্যাট' নামের প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান শলৎস৷ তাঁর মতে, বর্তমান সংকটের আলোকে ইউরোপীয় স্তরে জ্বালানির ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ সানচেস শলৎসকে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ফ্রান্স এই প্রকল্প সম্পর্কে তেমন উৎসাহ না দেখালে প্রয়োজনে ইটালির মধ্য দিয়েও পাইপলাইন বসানো যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, স্পেনে বর্তমানে ছয়টি এলএনজি টার্মিনাল থাকায় সে দেশ উদ্বৃত্ত গ্যাস রপ্তানি করতে পারে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)